Advertisement
E-Paper

সরস্বতী পুজোর বাঁকুড়াতেও দাপট সেই থিমেরই

বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের অবসরের অন্যতম বিনোদন ছিল দশাবতার তাসের খেলা। এ বছর সরস্বতী পুজোয় বাঁকুড়ার ফ্রেন্ডস ফিফটির মণ্ডপ সেজেছে ঐতিহ্যবাহী সেই দশাবতার তাসে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:১০
বিষ্ণুপুর বরমতলা অ্যাথলেটিকস্ ক্লাবের মণ্ডপ ।

বিষ্ণুপুর বরমতলা অ্যাথলেটিকস্ ক্লাবের মণ্ডপ ।

দুর্গাপুজোর মতো বড় বাজেট থাকে না বটে, কিন্তু থিমের ভাবনায় কম যাচ্ছে না সরস্বতী পুজোও। কোথাও প্রাচীন ঐতিহ্যকে তুলে ধরার চেষ্টা, কোথাও আবার ফেলে দেওয়া জিনিসপত্রকে বুদ্ধি করে কাজে লাগিয়ে সাজানো হয়েছে মণ্ডপ। বাঁকুড়ায় সোমবার দেখা গেল এমনটাই।

বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের অবসরের অন্যতম বিনোদন ছিল দশাবতার তাসের খেলা। এ বছর সরস্বতী পুজোয় বাঁকুড়ার ফ্রেন্ডস ফিফটির মণ্ডপ সেজেছে ঐতিহ্যবাহী সেই দশাবতার তাসে।

শহরের যোগেশপল্লি মোড়ের ফ্রেন্ডস ফিফটির সরস্বতী পুজো ২৩ বছরের পুরনো। শহরের অন্যতম বড় সরস্বতী পুজোও বটে। ক্লাবের সম্পাদক চন্দ্রশেখর গন বলেন, “জেলার ইতিহাসকে তুলে ধরাই এবার আমাদের লক্ষ্য ছিল। স্কুল কলেজের বহু পড়ুয়াই এখন দশাবতার তাসের সঙ্গে পরিচিত নয়। এ বারের সরস্বতী পুজোয় ওরা সেটা জানল।”

তিনি জানান, গোল করে কাটা ফাইবারের বোর্ডের উপরে দশাবতার তাস এঁকেছেন শিল্পীরা। আলোও দেওয়া হয়েছে যুতসই করে। পুজোর বাজেট প্রায় ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা।

ফ্রেন্ডস ফিফটির অদূরেই কলেজমোড় টেন্টের সরস্বতী পুজো। এ বার ৩৫ তম বর্ষ। দক্ষিণ ভারতের একটি মন্দিরের আদলে মণ্ডপ হয়েছে সেখানে। রয়েছে বাঁশ কাঠি, মাদুর কাঠি ও থার্মোকলের কাজ। ক্লাবের সম্পাদক সঞ্জয় কুণ্ডু জানান, এ বারের মস্ত বড় আকর্ষণ হল জীবন্ত স্ট্যাচু। সোমবার পুজো কমিটির মণ্ডপে স্বামী বিবেকানন্দের সাজে জীবন্ত মূর্তি দেখতে ভিড় উপচে পড়েছিল। আজ, মঙ্গলবার শ্রী রামকৃষ্ণের জীবন্ত স্ট্যাচু হওয়ার কথা।

বাঁকুড়া সারদামণি গার্লস কলেজে এ বার প্রায় দশ ফুটের সরস্বতী মূর্তি বানানো হয়েছে। এ দিন সকাল থেকেই কলেজের ছাত্রীরা আলপনায় সাজিয়ে তুলেছিল প্রাঙ্গণ। পুজো শেষে খিচুড়ি-ভোগ বিলি করা হয়। কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী পায়েল বন্দ্যোপাধ্যায়, মঞ্জু পরমানিকেরা বলেন, “সকাল থেকে আলপনা দেওয়া, খিচুড়ি রান্না— সবকিছুতেই হাত লাগিয়েছি সবাই মিলে।’’ দিনভর বাঁকুড়া শহরের বিভিন্ন পাড়ার মোড়ে সরস্বতীপুজো ও নানা অনুষ্ঠান হয়েছে।

রূপসী বাংলা ক্লাবের পুজো।

বেলিয়াতোড়ের পুরাতন হাটতলার আমরা সবাই ক্লাবের সরস্বতী পুজোয় বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে প্রতিমায়। ক্লাবের সদস্যরা জানাচ্ছেন, এ বছর ৩৪ ফুটের সরস্বতী প্রতিমা বানানো হয়েছে। অন্য দিকে, বেলিয়াতোড়ের জাগৃতি সঙ্ঘের সরস্বতী পুজোর এটি ২০তম বর্ষ। ক্লাবের সভাপতি তথা বড়জোড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহসভাপতি কালিদাস মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের পুজোয় দেবীমূর্তিতে রয়েছে প্রাচীনত্বের ছোঁয়া। সিজান পরবের রাতে হাজার পাঁচেক মানুষকে নিয়ে নরনারায়ণ সেবার আয়োজন হচ্ছে।’’ ছাতনার বকুলতলা আমরা ক’জন ক্লাব এ বার ২৫ ফুটের সরস্বতী প্রতিমা বানিয়েছে। ক্লাবের সদস্য ভগীরথ দাস জানান, পুজোর বাজেট প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা।

জেলার জঙ্গলমহল সিমলাপাল ব্লকের পার্শ্বলা গ্রামের সরস্বতী পুজোগুলিতেও নানা থিম উঠে এসেছে। পার্শ্বলা সূর্য সঙ্ঘের থিম ‘মিনি তাজমহল’। ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ শান্তনু দত্ত জানান, থিমটি গড়তে খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। ফেলে দেওয়া জিনিসপত্রকে কী ভাবে কাজে লাগানো যায়, পার্শ্বলার বিদ্রোহী ক্লাবের থিমে সেটাই তুলে ধরা হয়েছে। ক্লাবের সহকারী কোষাধ্যক্ষ সুলোচন মণ্ডল জানান, প্যান্ডল সাজাতে প্লাস্টিকের পুরনো বোতল ব্যবহার করা হয়েছে। পার্শ্বলার বিবেকানন্দ সঙ্ঘের পুজোর মূল আকর্ষণ ছিমছাম আলো। ওই এলাকার একতা সঙ্ঘের পুজো দেখতেও প্রচুর মানুষ ভিড় করেছিলেন। বিষ্ণুপুর বরমতলায় অ্যাথলেটিকস্ ক্লাবের সম্পাদক সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দুূ’ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছে তাঁদের মণ্ডপ। মোবাইলের যুগে বই বিমুখতা থেকে পুজোর দিনে তাঁরা বইয়ে ফেরাতে চেয়েছেন বর্তমান প্রজন্মকে।

নিজস্ব চিত্র

Saraswati Puja Theme Puja Festival সরস্বতী পুজো
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy