নিহত অনিল মাহাতো।
তৃণমূলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি অনিল মাহাতোর খুনের পর থেকে অশান্তি বেড়েই চলেছে রাইপুরে।
দুই গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীদের মধ্যে বাক্যুদ্ধ আগেই শুরু হয়েছিল। তারপর গত ক’দিনে তা হিংসার চেহারা নেয়। দলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনেই রবিবার দলেরই কিছু কর্মীর হাতে মার খান পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শ্যামল সরকার। সোমবার রাইপুরের সবুজবাজারে ব্লক সভাপতি জগবন্ধু মাহাতোর একটি দলীয় অফিসে হামলা চালিয়ে দখল করার অভিযোগ ওঠে নিহত নেতার অনুগামী ব্লক যুব সভাপতি রাজকুমার সিংহের লোকজনের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটার অভিযোগ এসেছে মটগোদা থেকে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে মটগোদায় নিজের পার্টি অফিসের সামনে আততায়ীদের ছোড়া গুলিতে খুন হন তৃণমূল নেতা অনিলবাবু। এই খুনের জন্য তাঁর অনুগামীরা সরাসরি আঙুল তোলেন অনিলবাবুর বিরুদ্ধ বলে এলাকায় পরিচিত জগবন্ধুবাবুর গোষ্ঠীর দিকে। সেই থেকে রাইপুরের হাওয়া গরম। নিহত নেতার অনুগামীরা কিছুটা মরিয়া আর বিপক্ষ গোষ্ঠী কিছুটা কোণঠাসা অবস্থায়। এই পরিস্থিতিতে একের পর এক গোলমাল শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে মটগোদায় তালা ভেঙে জগবন্ধুবাবুর দলীয় কার্যালয় দখল করার অভিযোগ উঠেছে বিপক্ষ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। জগবন্ধুবাবুর অভিযোগ, “ওই অফিসের তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দখল নিয়ে অনিলের লোকজন নতুন তালা লাগিয়ে দিয়েছে। পুলিশকে ফোনে ঘটনাটি জানিয়েছি।” যদিও তা অস্বীকার করেছেন অনিলবাবুর ঘনিষ্ঠ রাজকুমারবাবু। তিনি বলেন, ‘‘কোথাও পার্টি অফিস দখল করা হচ্ছে না। আসলে তদন্ত প্রভাবিত করতেই এক পক্ষ এই সব মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।”
অন্যদিকে মটগোদা গ্রাম পঞ্চায়েতের বামফ্রন্ট সমর্থিত নির্দল প্রধান চন্দনা কর্মকার সোমবার রাইপুরের বিডিও-র কাছে প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়ে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। কেন ইস্তফা দিতে চেয়েছেন তিনি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে বিডিওকে দেওয়া চিঠিতে তিনি ‘ব্যক্তিগত কারণ’ বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এই ঘটনার পিছনেও অন্য গন্ধ পাচ্ছেন অনেকে। এই পঞ্চায়েতের ১৫টি আসনের মধ্যে সাতটি করে আসন রয়েছে তৃণমূল ও বামফ্রন্টের দখলে। একটি আসনে নির্দল হিসেবে জিতে বামেদের সমর্থন নিয়েই প্রধান হয়েছিলেন চন্দনাদেবী। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতির অভিযোগ, ‘‘প্রধানকে গুলিতে খুন করার হুমকি ফোন দেয় তৃণমূলের লোকজন। তাই তিনি ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন।’’ যদিও রাইপুর ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতির দাবি, “মটগোদা গ্রাম পঞ্চায়েতে এখন আমাদের প্রভাব বেশি। ওই প্রধান ভাল ভাবে পঞ্চায়েত চালাতে পারছিলেন না। তিনি নিজের ইচ্ছেতেই ইস্তফা দিয়েছএন।’’
এ দিকে রবিবার রাইপুরে এসে অভিষেক তিনদিনের মধ্যে অনিলবাবুর খুনিরা ধরা পড়বে বলে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়ার কথা জানিয়ে গেলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত পুলিশ খুনের ঘটনায় কাউকে ধরতে পারেনি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবারও জগবন্ধুবাবুর ঘনিষ্ঠ রাইপুরের এক অঞ্চল তৃণমূল সভাপতিকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তারা।
এলাকার পরিস্থিতি অন্যরকম দেখে এ দিন নিজের গোষ্ঠীর লোকজনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জগবন্ধুবাবু। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, “আমরা সবাই চাই অনিলের খুনিরা ধরা পড়ুক। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে যে ভাবে ব্লকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে, তাতে অশান্তি বেড়েই চলেছে। দলের কর্মীদের এই অবস্থায় কোনও প্ররোচনায় পা না দিয়ে সংযত থাকতে বলেছি।” তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন খাতড়ায় নিজের অনুগামীদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন শ্যামলবাবুও। যদিও ফোনে তিনি দাবি করেছেন, ‘‘সিঙ্গুর দিবস উপলক্ষেই প্রস্তুতি বৈঠক করা হয়েছে।’’
রাজকুমারবাবুও জানাচ্ছেন, অভিষেকের আশ্বাসে মানুষজন ভেবেছিলেন তিন দিনের মধ্যে অনিলবাবুর খুনিরা গ্রেফতার হবে। সবাই সেই দিকেই তাকিয়ে। পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। তবে পুরোমাত্রায় তদন্ত চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy