Advertisement
E-Paper

মারধর, ভাঙচুর পার্টি অফিসেও

ধর্মঘট সমর্থকদের উপর পুরুলিয়ার নানা জায়গায় শুক্রবার হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কোথাও পার্টি কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হল, কোথাও বা পার্টি অফিসে ঢুকে চলল ভাঙচুর। এ দিন পুঞ্চা, সাঁওতালডিহি ও ঝালদায় মোট ৮০ জন সিপিএম (দু’জন ফরওয়ার্ড ব্লক) কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। সিপিএমের অভিযোগ, তাঁরাই আক্রান্ত হলেন। অথচ পুলিশ তৃণমূলের কাউকে না ধরে তাঁদেরই নেত-কর্মীদের গ্রেফতার করল!

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৩১
ভাঙচুরের পরে চেলিয়ামায় সিপিএমের জোনাল অফিস

ভাঙচুরের পরে চেলিয়ামায় সিপিএমের জোনাল অফিস

ধর্মঘট সমর্থকদের উপর পুরুলিয়ার নানা জায়গায় শুক্রবার হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কোথাও পার্টি কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হল, কোথাও বা পার্টি অফিসে ঢুকে চলল ভাঙচুর। এ দিন পুঞ্চা, সাঁওতালডিহি ও ঝালদায় মোট ৮০ জন সিপিএম (দু’জন ফরওয়ার্ড ব্লক) কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। সিপিএমের অভিযোগ, তাঁরাই আক্রান্ত হলেন। অথচ পুলিশ তৃণমূলের কাউকে না ধরে তাঁদেরই নেত-কর্মীদের গ্রেফতার করল!

এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ ধর্মঘটের সমর্থনে পুঞ্চায় সিপিএমের একটি মিছিল বের হয়। অভিযোগ, মিছিল ডাঙাবাজার পার হওয়ার সময় পাশের তৃণমূলের পার্টি অফিস থেকে ইট ছোড়া হয়। ইটের ঘায়ে বাচ্চু চক্রবর্তী নামে আমাদের এক সিপিএম কর্মীর মাথা ফাটে। দু’পক্ষের কর্মীরা মারমুখী হয়ে উঠলে পুলিশ দু’পক্ষের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ায়। ধাক্কাধাক্কিতে কয়েকজন পুলিশকর্মীও আহত হন। দোষীদের ধরার দাবিতে এরপরে সিপিএম কর্মীরা মানবাজার-পুঞ্চা রাস্তায় বসে পড়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।

এর আধ ঘণ্টা পরেই পুঞ্চায় সিপিএমের পার্টি অফিসে একদল তৃণমূল কর্মী হামলা চালায় বলে অভিযোগ। সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, সেই সময় দলের কিছু কর্মী ও নেতা পার্টি অফিসে ছিলেন। তৃণমূল কর্মীরা ঢুকে সিপিএম কর্মীদের মোটরবাইক ও সাইকেল লাঠি নিয়ে ভাঙচুর চালায়। ইট, পাথরও মারা হয়। একটি ছোট গাড়ির কাচ ভেঙে দেওয়া হয়। দূরের কর্মীদের জন্য পার্টি অফিসে রান্না হচ্ছিল। তৃণমূল কর্মীরা রান্না করা খাবার মাটিতে ফেলে দেয় বলেও অভিযোগ।

সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য বিপত্তারণ শেখরবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমরা আক্রান্ত হয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলাম। সেই সময় পুলিশই জোর করে আমাদের গ্রেফতার করে থানায় তুলে নিয়ে যায়। শাসক দলের কর্মীদের হাতে আমরা আক্রান্ত হলাম, অথচ উল্টে পুলিশ আমাদেরই গ্রেফতার করল!’’ সিপিএমের ওই জেলা নেতা, পুঞ্চার জোনাল সম্পাদক অনিল মাহাতো-সহ ৭৩ জন সিপিএম কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে ব্যক্তিগত জামিনে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমারের দাবি, ‘‘ধর্মঘটের সমর্থকেরা রাস্তা অবরোধ করেছিলেন বলে গ্রেফতার করা হয়। তাঁরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানালে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

যদিও তৃণমূলের পুঞ্চা ব্লক সভাপতি কৃষ্ণচন্দ্র মাহাতোর দাবি, ‘‘সিপিএমের মিছিল থেকে মুখ্যমন্ত্রীর নামে কটুক্তি করায় আমাদের কিছু কর্মী প্রতিবাদ জানাতে যান। তাতে একটু ঠেলাঠেলি হয়েছিল মাত্র। হামলার অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’

এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ চেলিয়ামা বাজারের কাছে সিপিএমের চেলিয়ামা জোনাল অফিস ‘অনিল বিশ্বাস ভবন’-এও হামলা চালায় তৃণমূল। সিঙ্গুরের বিজয় উৎসব ও ধর্মঘট বিরোধী মিছিল থেকে লোকজন পার্টি অফিসে ঢুকে ১০-১২টি মোটরবাইক, ১৫-২০টি সাইকেল, কিছু প্লাস্টিকের চেয়ার, কাঠের বেঞ্চ ভাঙচুর করে। সে সময় পার্টি অফিসের ভিতরে দলীয় কর্মীদের নিয়ে বসেছিলেন চেলিয়ামা জোনাল সম্পাদক শক্তি বাউরি। পার্টি কর্মীরা কয়েকজন প্রতিবাদ জানাতে গেলে তাঁদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। শক্তিবাবু ফোন করে পুলিশকে ঘটনাটি জানান। মিছিলের পিছনেই ছিল পুলিশের গাড়ি। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ হামলাকারীদের সরিয়ে দেয়। অভিযোগ ওই মিছিলের নেতৃত্বে দেখা গিয়েছিল যুব তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রণব দেওঘরিয়া, সংগঠনের রঘুনাথপুর ২ ব্লক সভাপতি স্বপন মেহেতা প্রমুখকে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ রায়ের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ধর্মঘট করা চলবে না বলে হুমকি দিয়েছেন। ফলে তাঁর ভাইয়েরা ধর্মঘট ভাঙতে রাস্তায় নেমে মারধর করবে, এটাই তো স্বাভাবিক।’’ স্বপনবাবুদের দাবি, ‘‘আমরা মিছিলে ছিলামই না। পার্টি অফিস ভাঙচুর কাম্য নয়। কী হয়েছে তা খোঁজ নেব।’’

পুঞ্চায় আক্রান্ত সিপিএম কর্মী বাচ্চু চক্রবর্তী। —নিজস্ব চিত্র

সাঁওতালডিহিতে আবার তৃণমূল কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। এ দিন সকালের দিকে সাঁওতালডিহি টাউনশিপের সুপার মার্কেট খোলা ছিল। সিপিএমের মিছিল গিয়ে জোর করে দোকান বন্ধ করার চেষ্টা করে। সেই সময় তৃণমূলের মিছিল সেখানে পৌঁছলে দু’পক্ষের কর্মীদের মধ্যে বিবাদ বাঁধে। তৃণমূলের অভিযোগ, সিপিএমের লোকেরা তাঁদের কর্মীদের মারধর করে। কয়েকজন তৃণমূল কর্মী জখম হন। প্রতিবাদে তৃণমূলের পাড়া ব্লক নেতৃত্ব সাঁওতালডিহি থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। সেই সময় পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে কয়েকজন তৃণমূল কর্মীর দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। পুলিশ জানিয়েছে, তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচ সিপিএম কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ দিন কাজে যোগ দিতে যাওয়ার পথে এক শিক্ষাকর্মীর উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছে ফব কর্মীদের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থল ঝালদা। তৃণমূলের অভিযোগ, শুক্রবার সকাল প্রায় সাড়ে ৯টা নাগাদ ঝালদা হাটতলা বাজারের কাছে ঝালদা পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য বিমলা পরামাণিকের স্বামী সত্যবান পরামাণিকের উপরে ধর্মঘটের সমর্থক ফব কর্মীরা বাইক মিছিল থেকে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। হামলায় তাঁর বাবাও আহত হয়েছেন। সত্যবানবাবুর অভিযোগ, ‘‘স্কুলে যাওয়ার জন্য একটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেই সময় ফব-র মিছিল থেকে কয়েকজন আমার উপরে লাঠি নিয়ে হামলা চালায়। বৃদ্ধ বাবা আমাকে বাঁচাতে গেলে তিনিও আক্রমণের শিকার হন। মারে পায়ে চিড় ধরেছে, বাবারও মাথায় লেগেছে।’’ তৃণমূল কর্মীরাও পাল্টা বাইক মিছিল বের করে। তারপরে থানায় গিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়। ফব নেতৃত্ব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, দু’জনকে ধরা হয়েছে।

জেলার রাজনীতি সচেতন এক প্রবীণের আক্ষেপ, ‘‘ধর্মঘটে মারধরের সংস্কৃতি পুরুলিয়া জেলায় ছিল না। এ বার তাও ঢুকে গেল।’’

vandalism strike
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy