Advertisement
০৫ মে ২০২৪
গ্রামে জল না থাকার ক্ষোভ

শহরের পাম্প হাউসে অবরোধ গ্রামবাসীর

গ্রামে পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থার দাবিতে কংসাবতী নদী তীরের পাম্প হাউসের কাজ বন্ধ করে দিলেন গ্রামবাসী। রবিবার সকাল নটা নাগাদ পুরুলিয়া শহরের উপকন্ঠে কংসাবতী নদী তীরের শিমুলিয়া পাম্প হাউসে জল তোলার কাজ বন্ধ করে দেন স্থানীয় শিমূলিয়া ও দামদা গ্রামের বেশ কিছু বাসিন্দা।

বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১৫
Share: Save:

গ্রামে পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থার দাবিতে কংসাবতী নদী তীরের পাম্প হাউসের কাজ বন্ধ করে দিলেন গ্রামবাসী। রবিবার সকাল নটা নাগাদ পুরুলিয়া শহরের উপকন্ঠে কংসাবতী নদী তীরের শিমুলিয়া পাম্প হাউসে জল তোলার কাজ বন্ধ করে দেন স্থানীয় শিমূলিয়া ও দামদা গ্রামের বেশ কিছু বাসিন্দা। তাঁদের ক্ষোভ, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা প্রশাসনের কাছে পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছেন। কিন্তু আজও তার কোনও ব্যবস্থা হয়নি। তাঁরাও যাতে পানীয় জল পেতে পারেন, প্রশাসনকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের পরে দুপুর ১২টা নাগাদ সমস্যা মিটলেও এই ঘটনা অবশ্য আগামী দিনে আরও বড় আকার নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে রাখল। বিশেষ করে যেখানে শহরের উপকন্ঠে কংসাবতী তীরের এই পাম্প হাউস থেকে পুরুলিয়া শহরের একটা বড় অংশে জল আসে। এ দিন সকালে কংসাবতীর দু’পাশের ওই দু’টি গ্রামের মহিলা-সহ শতাধিক বাসিন্দা পাম্প হাউসে এসে জল তোলার কাজ বন্ধ করে দেন। গরমে শহরে জল সরবরাহ সচল রাখতে নদীর বুকে টিউবওয়েল খননের কাজও শুরু করেছে পুরসভা। সেই কাজও বন্ধ করে দেন বিক্ষোভকারীরা।

এই এলাকাটি পুরুলিয়া ১ ব্লকের আওতায়। বিডিও স্বপন মাইতি বলেন, ‘‘আমি গ্রামবাসীদের বলেছি, এ ভাবে পানীয় জল প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়ে সমস্যার সমাধান হতে পারে না। আপনারা আলোচনায় বসুন। ওই দুই গ্রামের বাসিন্দাদের প্রতিনিধিদের আমার কাছে আসতে বলেছি।’’

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত সদর হাসপাতাল, জেলা সংশোধনাগার এবং শহরের কয়েকটি ওয়ার্ডের জল সরবরাহ এই পাম্প হাউসের উপরেই নির্ভরশীল। গরমের শুরুতে এমনিতেই জলের তীব্র সঙ্কটে নাজেহাল পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দারা। জলের দাবিতে বিক্ষোভ-অবরোধ লেগেই আছে। ভোটের মুখে যা নিয়ে যথেষ্টই অস্বস্তিতে শাসকদল তৃণমূল। তার উপর এ দিন পাম্প হাউসের কাজ গ্রামবাসীরা বন্ধ করে দেওয়ায় প্রমাদ গুনছেন শহরবাসী। এ যাত্রা তিন ঘণ্টায় সমস্যা মিটেছে। শহরবাসীর আশঙ্কা, এর পরে যদি গ্রামবাসীরা আরও বেশি সময়ের জন্য ওই পাম্প হাউস বন্ধ রাখেন, তা হলে শহরে জলের সঙ্কটের তীব্রতা আরও বাড়বে।

এ দিন বিক্ষোভের খবর পেয়ে স্থানীয় টামনা পুলিশ ফাঁড়ি ও পুরুলিয়া মফস্সল থানা থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে পুরুলিয়া সদর থানা থেকেও পুলিশ পাম্প হাউসে যায়। তাতেও অবশ্য বিক্ষোভকারীরা জল তোলার কাজ শুরু করতে দেননি। এক পুলিশ কর্তা তাঁদের বলেন, এ ভাবে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া বেআইনি। তা ছাড়া, এখান থেকে পানীয় জল সরবরাহের কাজ হয়। গ্রামবাসীরা তখন ওই পুলিশকর্তাকে বলেন, ‘‘আমরা ২০১০ সাল থেকে আমাদের গ্রামে পানীয় জল সরবরাহের দাবি জানিয়ে আসছি।’’ গ্রামে পানীয় জল সরবরাহের দাবি সংবলিত শ’তিনেক বাসিন্দার স্বাক্ষরিত জেলা প্রশাসনকে দেওয়া স্মারকলিপির একটি প্রতিলিপিও পুলিশকে দেখানো হয়। কথাবার্তা চলাকালীন পুলিশকেও গ্রামবাসীদের ঘেরাওয়ের মুখে পড়তে হয়। শিমুলিয়া গ্রামের সরস্বতী মাহাতো, দামদা গ্রামের বিপিন সিংহ সর্দার, শুকুর আলি আনসারি, ফাইজুল বিবি, আসেনা বিবিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলতে থাকেন, ‘‘কী অবস্থার মধ্যে আমাদের পানীয় জল সংগ্রহ করতে হয়, তা কেউ জানে না। গ্রামে জলের কল নেই, নলকূপেও জল পড়ে না। নদী খুঁড়েও জল মিলছে না। তা হলে আমরা কোথা থেকে জল পাব? আমাদের তো সেই নদীই ভরসা!’’

শেষে পুলিশকর্তারা ওই দুই গ্রামের সমস্যা নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা করার প্রস্তাব দিলে বেলা ১২টা নাগাদ তাঁরা অবরোধ তুলে নেন। পুরুলিয়া পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার পার্থসারথি সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘এ দিন সকালর নটা থেকে বারোটা পর্যন্ত শিমুলিয়া পাম্প হাউস থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভের কারণে জল তোলা যায়নি। তাঁরা দাবি করছেন, তাঁদের গ্রামেও পানীয় জলের সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করতে হবে। কিন্তু এটি আমাদের এক্তিয়ারে নয়। আমরাও তাঁদের বলেছি, পাম্প হাউসের পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হলে হাসপাতাল, সংশোধনাগার-সহ বেশ কিছু জায়গায় সরবরাহ চালু রাখা যাবে না। ঘণ্টা তিনেক পরে অবশ্য তাঁরা অবস্থান তুলে নিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE