Advertisement
০১ মে ২০২৪
Amartya Sen

সেই সোমনাথকে শোকজ বিশ্বভারতীর, জমি বিতর্কে অমর্ত্যর পাশে দাঁড়ানোয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ

জমি বিতর্কে প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিক ভাবে যে অবস্থান নিয়েছে, তার বিরোধিতা করে ‘নির্দিষ্ট’ এক ‘ব্যক্তি’র পক্ষ নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে সোমনাথের বিরুদ্ধে।

A Photograph of Nobel Laureate Amartya Sen and VC of Viswa Bharati University Bidyut Chakrabarty

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন এবং বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১০:১৯
Share: Save:

অমর্ত্য সেনের সঙ্গে জমি বিবাদে বিশ্বভারতীর অবস্থানের বিরোধিতা করে ফেসবুকে প্রকাশ্যে পোস্ট করেছিলেন এক পড়ুয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ওই পডুয়াকে শোকজের নোটিস দিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সোমবার স্নাতকোত্তর স্তরের পড়ুয়া সোমনাথ সৌকে পাঠানো হয়েছে ওই নোটিস। তাতে বিশ্বভারতী জানিয়েছে, সমাজমাধ্যমে করা পোস্টে সোমনাথ যে দাবি করেছেন তা ‘ভুয়ো’ এবং ‘বিভ্রান্তিকর’। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বদনাম’ করার চেষ্টা হয়েছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কেন সোমনাথের বিরুদ্ধে শান্তিমূলক পদক্ষেপ করা হবে না, তার ব্যাখ্যাও জানতে চেয়েছে বিশ্বভারতী। শোকজ নোটিসের সঙ্গে সোমনাথের দু’টি ফেসবুক পোস্টের বয়ানের প্রতিলিপিও জুড়ে দিয়েছে বিশ্বভারতী। যদিও সোমনাথের সেই ফেসবুক পোস্টের সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।

অমর্ত্যর সঙ্গে বিশ্বভারতীর জমি বিবাদ নিয়ে ঘটনাপ্রবাহ নতুন মোড় নিয়েছে সোমবার। বিশ্বভারতীর দাবি, গত ২৮ জানুয়ারি ফেসবুক পোস্টে সোমনাথ লিখেছিলেন, ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের দফতর থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১.৩৮ একর জমির মালিক অমর্ত্যের বাবা প্রয়াত আশুতোষ সেন। অধ্যাপক সেনের পরিবারের কাছ থেকে যে ১৩ ডেসিম্যাল জমি ফেরত চাওয়া হচ্ছে, বিশ্বভারতীর কাছে সেই পরিমাণ জমির মালিকানা সংক্রান্ত নথি প্রকাশেরও দাবি তুলেছেন ওই পড়ুয়া। আদালতের হস্তক্ষেপে বিষয়টির ‘নিষ্পত্তি’র দাবিও তোলা হয়েছে ওই পোস্টে।

অথচ এই জমি বিতর্কে বিশ্বভারতী প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে, অমর্ত্যের বাবাকে কখনওই ১.৩৮ একর জমি লিজ় দেওয়া হয়নি। লিজ় দেওয়া হয়েছিল ১.২৫ একর জমি। তার ভিত্তিতে ১৩ ডেসিম্যাল জমি ফেরত চাইছে বিশ্বভারতী। কর্তৃপক্ষের এ-ও বক্তব্য, ১৯৪৩ সালে বিশ্বভারতী ও আশুতোষের মধ্যে স্বাক্ষরিত লিজ়ের নিবন্ধিত দলিল ও ২০০৬ সালে কর্মসমিতিতে পাশ হওয়া প্রস্তাব থেকেই স্পষ্ট, আশুতোষ বা অমর্ত্যকে ১.৩৮ একর জমি তো দূর, বিশ্বভারতীর কোনও জমিরই মালিকানা দেওয়া হয়নি। শান্তিনিকেতনে ‘প্রতীচী’ নামের পরিচিত প্রাঙ্গণে অধ্যাপক সেনের বাসভবনও সম্পূর্ণ রূপে বিশ্বভারতীর মালিকানাধীন জমিতে অবস্থিত বলে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য।

বিশ্বভারতীর দেওয়া শোকজ নোটিসে, সোমনাথ বিতর্কিত জমির একটি সরকারি নথির ছবি পোস্ট করেছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ১.২৫ একর নয়, অধ্যাপক সেনের বাবাকে ১.৩৮ একর জমিই লিজ় দেওয়া হয়েছিল। তার প্রেক্ষিতে কারণ দর্শানোর চিঠিতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ লিখেছেন, সোমনাথের সমাজমাধ্যমে করা ওই পোস্ট ‘ভুল তথ্যে ভরা’। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, তাঁদের কাছে জমির মালিকানা সংক্রান্ত যে নথি আছে, তার সঙ্গে সোমনাথের পোস্ট করা কাগজের কোনও মিল নেই। ঘটনাচক্রে, এই চলমান জমি-বিতর্কের মধ্যে গত মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘প্রতীচী’তে গিয়ে অমর্ত্যের হাতে তুলে দিয়েছিলেন জমি সংক্রান্ত নথি। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, তাতেও ১.৩৮ একরই অমর্ত্যের পৈতৃক জমি হিসাবে সরকারি খাতায় নথিভুক্ত।

বিশ্বভারতীর শোকজ নোটিসে সোমনাথের নাম করে যে ফেসবুক পোস্টের প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে, তাতে লেখা, ‘‘বিশ্বভারতী কিন্তু বাড়তি ০.১৩ একর (১৩ ডেসিম্যাল) জমির কাগজ দেখাতে পারেনি। আর পারবেও না, কারণ সমস্যাটা অন্য জায়গায়। অতীতে অমর্ত্য সেনের জমির পাশ দিয়ে যাওয়ার জন্য একটা রাস্তা বানানোর কথা ঠিক হয় এবং সেই কথা অনুযায়ী একটি মিটিংও হয়। কিন্তু সেই মিটিংয়ের পর কোনও কিছুই হয়নি। আর যা কিছু নোংরামি হচ্ছে, সব কিছুর ভূত লুকিয়ে আছে অতীতের এই রাস্তা বানানোর বিষয়টির উপর।’’

কিন্তু বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সোমনাথ শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন। তাঁদের ব্যাখ্যা, জমি বিতর্কে প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিক ভাবে যে অবস্থান নিয়েছে, তার বিরোধিতা করে ‘নির্দিষ্ট’ এক ‘ব্যক্তি’র পক্ষ নিয়েছেন। ‘নির্দিষ্ট ব্যক্তি’ বলতে বিশ্বভারতী যে অধ্যাপক সেনের কথাই বলতে চেয়েছে, তা সোমনাথের ফেসবুক পোস্টের প্রতিলিপি থেকেই স্পষ্ট।

সম্প্রতি যে ছ’জন পড়ুয়াকে সাসপেন্ড করেছিল বিশ্বভারতী, সোমনাথও ছিলেন সেই তালিকায়। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে সোমনাথ ক্ষমা চাওয়ায় তাঁর সাসপেনশন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। শোকজ নোটিসে সেই বিষয়েরও উল্লেখ করেছে বিশ্বভারতী। সোমনাথকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণ দর্শাতে বলে বিশ্বভারতী হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ভবিষ্যতে এমন শৃঙ্খলাভঙ্গের নজির আবার তৈরি হলে আগাম বার্তা না দিয়েই তাঁকে বহিষ্কার করা হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE