Advertisement
০৬ মে ২০২৪

হেঁশেলে নজর দিচ্ছে জেলার হাসপাতাল

বাঁকুড়া মেডিক্যালের খাবারের মান নিয়ে রোগীদের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। কিন্তু নালিশটা পৌঁছে গিয়েছিল খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কান পর্যন্ত। যার জেরে এ বারে রান্নার দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে কড়া হতে চলেছে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৩৭
Share: Save:

বাঁকুড়া মেডিক্যালের খাবারের মান নিয়ে রোগীদের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। কিন্তু নালিশটা পৌঁছে গিয়েছিল খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কান পর্যন্ত। যার জেরে এ বারে রান্নার দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে কড়া হতে চলেছে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার মুকুটমনিপুরের বারোঘুটুতে প্রশাসনিক বৈঠকে জেলা প্রশাসনের তরফেই মেডিক্যালে খাবারের মান নিয়ে অভাব অভিযোগের কথা মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনা হয়। বাঁকুড়া মেডিক্যালের খাবারের মান নিয়ে রোগীদের অভিযোগ বেশ কিছু দিনেরই। হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুর কাছে এই মর্মে অভিযোগ আগেই গিয়েছে। রোগীদের অভিযোগ, ডাল ও দুধে জলের ভাগটা মাত্রাছাড়া রকমের বেশি। সব্জি মুখে তোলা যায় না। এই সব কারণে বহু রোগীই হাসপাতালের খাবার না খেয়ে বাড়ি থেকে রান্না করা খাবার আনান।

মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি শোনার পরেই হাসপাতালে রান্নার দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার সংস্থাকে নোটিশ পাঠিয়ে সতর্ক করতে নির্দেশ দেন। নোটিশে কাজ না হলে দ্বায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দেন মুখ্যমন্ত্রী।

হাসপাতালের খাবারের মান দেখাশোনার জন্য বাঁকুড়া মেডিক্যালে হাসপাতাল সুপার, ডেপুটি সুপার, মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও নার্সিং সুপারকে নিয়ে একটি ডায়েট কমিটি রয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেওয়ার অনেক আগেই খাবারের মান নিয়ে দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকা সংস্থা একাধিকবার ওই কমিটির নোটিশ পেয়েছে। সংস্থার তরফে কমিটির কাছে রোগী পিছু খাবার বাবদ বরাদ্দ বাড়ানোর দাবিও জানানো হয়েছে।

কী খবার দেওয়া হয় বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি রোগীদের?

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, খাবার দেওয়া হয় সকাল, দুপুর ও রাতে। সকালে ডিম, পাউরুটি, চিনি, কলা আর দুধ। দুপুরে ভাত, সব্জি, ডাল। মঙ্গল আর শুক্রবার দু’ টুকরো মুরগির মাংস থাকে। বাকি দিনগুলিতে দুপুরের পাতে থাকে মাছ। রাতে ভাত বা রুটি। সঙ্গে সব্জি, ডাল আর ডিম। তিন বেলার খাবার মিলিয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যালে রোগীপিছু বরাদ্দ ৪৩ টাকা ৮২ পয়সা। ঠিকাদার সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে সেই বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছে ডায়েট কমিটির কাছে। তবে নানা মামলা মোকদ্দমার জেরে কম পক্ষে বছর পাঁচেক বরাদ্দের অঙ্কটা একই জায়গায় থমকে রয়েছে। হাসপাতাল সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু অবশ্য বলেন, “বরাদ্দ বাড়ানো যায়নি বলে খাবারের মান খারাপ হবে, এটা মানা যায় না। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরেই ওই ঠিকাদার সংস্থাকে মৌখিক ভাবে আমরা সতর্ক করেছি। শীঘ্রই নোটিশ ধরানো হবে।’’ জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “নোটিশ তৈরি করা হচ্ছে। আমরা পুরো ব্যবস্থাটা ঢেলে সাজাতে নতুন করে টেন্ডার করার কথাও ভাবনা চিন্তা করছি।”

অন্য দিকে মেডিক্যালের নজির দেখে আগে ভাগে সতর্ক হওয়ার পন্থা নিয়েছে জেলার অন্য হাসপাতালগুলিও। বাঁকুড়ার জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাস বলেন, “জেলার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালগুলিতে স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা গিয়ে খাবারের মান দেখে আসছেন। যে ঠিকাদার সংস্থাগুলি দ্বায়িত্বে রয়েছে, তাদের আমরা জানিয়ে দিয়েছি, অভিযোগ পেলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের সুপার পৃথ্বীশ আকুলি বলেন, “আমাদের হাসপাতালের খাবারের মান নিয়ে কোনও দিনই অভিযোগ ওঠেনি। তবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে রান্নার দ্বায়িত্বে থাকা ঠিকাদার সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এই ধরনের অভিযোগ যাতে না ওঠে তার জন্য আমরা সবসময় সতর্ক থাকি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

District Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE