Advertisement
১৮ মে ২০২৪
রঘুনাথপুর পুরসভা

কুর্সি কার, মুখে নানা নাম

এ বার কে হচ্ছেন পুরপ্রধান? রঘুনাথপুরে পুরবোর্ড ফের দখল করার পরে এ নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। ইতিমধ্যেই পুরপ্রধান হিসেবে নতুন মুখ আনার দাবি উঠেছে। আবার অভিজ্ঞ কারুর হাতেই পুরসভা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার পাল্টা দাবিও উঠতে শুরু করেছে। দলের অন্দরেই আবার ভাসছে পুরপ্রধানের দায়িত্বে আনা হতে পারে কোনও মহিলা কাউন্সিলরকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৫ ০০:৪১
Share: Save:

এ বার কে হচ্ছেন পুরপ্রধান? রঘুনাথপুরে পুরবোর্ড ফের দখল করার পরে এ নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। ইতিমধ্যেই পুরপ্রধান হিসেবে নতুন মুখ আনার দাবি উঠেছে। আবার অভিজ্ঞ কারুর হাতেই পুরসভা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার পাল্টা দাবিও উঠতে শুরু করেছে। দলের অন্দরেই আবার ভাসছে পুরপ্রধানের দায়িত্বে আনা হতে পারে কোনও মহিলা কাউন্সিলরকে। বিশেষ করে রঘুনাথপুরের ইতিহাসে এখনও কোনও মহিলা পুরপ্রধানের দায়িত্ব না পাওয়ায় এ বার নতুন নজির তৈরি করার চেষ্টা চলছে। সব মিলিয়ে রঘুনাথপুরের পুরপ্রধানের কুর্সি কার ভাগ্যে জোটে তা নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে চলছে জোর জল্পনা। এমনকী তৃণমূল কাকে পুরপ্রধান করছে তা জানতে উৎসুক বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরাও।

পরপর টানা তিনবার পুরুলিয়ার অন্যতম পুরানো এই পুরসভায় জিতে হ্যাটট্রিক করেছে শাসকদল। ১৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টিতেই জিতেছে তৃণমূল। ফলে বোর্ড গঠন নিয়ে আপাত দৃষ্টিতে কোনও সমস্যাই নেই। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে কার হাতে দেওয়া হবে নতুন পুরবোর্ডের দায়িত্ব? এ ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি নাম উঠে আসছে। দলের একাংশের মতে, বিদায়ী পুরপ্রধান মদন বরাটকেই ফের পুরপ্রধান করুক নেতৃত্ব। তাঁদের যুক্তি, পরপর দু’বার পুরপ্রধানের দায়িত্ব সামলেছেন মদনবাবু। ফলে পুরসভার কাজকর্মে তাঁর বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। কাজেই তাঁর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শহরের সার্বিক উন্নয়ন করাটা তুলনামূলক সহজ হবে। নতুন কাউকে দায়িত্ব দিলে সে ক্ষেত্রে তাঁর কাজ শিখতে সময় লাগবে। ফলে উন্নয়নের প্রক্রিয়া কিছুটা হলেও ব্যাহত হবে। মদনবাবু নিজে বলছেন, ‘‘দেখা যাক কী হয়। দলের নির্দেশই আমার কাছে চূড়ান্ত। দল যাকে পুরপ্রধান করবেন তাঁকেই মেনে নেবেন সকলে।’’

আবার মদনবাবুকে ফের পুরপ্রধান করতে চাইছেন না দলেরই অন্য একটা অংশ। তাঁদের যুক্তি, মদনবাবুর পুরসভা পরিচালনা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। তাই তাঁকে ফের পুরপ্রধান হিসেবে মুখ করে নির্বাচনে লড়াই করেনি শাসকদল। এই যুক্তি দেখিয়ে দলের ওই নেতা-কর্মীরা এ বার নতুন কাউকে পুরপ্রধান করতে আগ্রহী। এ ক্ষেত্রে তাঁরা শহরের যুব নেতা ভবেশ চট্টোপাধ্যায়ের নাম করছেন। তাঁদের দাবি, ১৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে গোঁজ কাঁটা সামলে সবচেয়ে বেশি ভোটে জিতেছেন ভবেশবাবু। ফলে নতুন মুখ আনা হলে তাঁকেই পুরপ্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হোক। ভবেশবাবু বলছেন, ‘‘নেতা-কর্মীদের অনেকেই ও বেশ কিছু কাউন্সিলর এ বার পুরপ্রধান হিসেবে নতুন কাউকে চাইছেন। কিন্তু কে পুরপ্রধান হবেন সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন জেলা সভাপতি ও বিধায়ক। দলের সৈনিক হিসাবে সেই সিদ্ধান্তই সকলের মেনে নেওয়া উচিত।”

দলের অনেকে আবার মহিলা পুরপ্রধান চাইছেন। দলেই এক গুরুত্বপূর্ণ নেতার কথায়, ‘‘দলনেত্রী সব সময়েই মহিলাদের গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন। সেই প্রেক্ষিতে আমরা এ বার রঘুনাথপুরে মহিলা পুরপ্রধান চাইছি। সে দিক থেকে দলের ওই অংশের পছন্দ ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গীতা ভকত। দল সূত্রে জানা যাচ্ছে, মদনবাবু ও ভবেশবাবুর অনুগামীরা যে ভাবে তাঁদের নাম ভাসাচ্ছেন, তাতে একজনকে পুরপ্রধান করা হলে অন্যপক্ষের কর্মীরা অসন্তুষ্ট হতে পারেন। তাতে দলের সাংগঠনিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে তৃতীয় কাউকে পুরপ্রধান করা হলে ওই বিরোধ কমতে পারে। আবার নন্দুয়াড়া এলাকায় এ বার চারটি ওয়ার্ডের মধ্যে দু’টিতে তৃণমূল জয়ী হওয়ায়, সেখানকার কর্মীরা ওই এলাকা থেকে পুরপ্রধান করার দাবি তুলেছেন। তাই পরিস্থিতি যা, তাতে সর্বসম্মত ভাবে পুরপ্রধান নির্বাচন করা রঘুনাথপুরের ক্ষেত্রে কিছুটা কঠিন বলেই মত দলের কিছু শীর্ষস্থানীয় নেতারই।

গত বুধবার কলকাতায় বিজয়ী কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, পুরুলিয়ার দুই পুরসভায় বোর্ড গঠন নিয়ে স্থানীয় বিধায়কদের সাথে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো। দল সূত্রে জানা যাচ্ছে, ওই বৈঠকের পরে পুরুলিয়ায় দলের পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় শান্তিরামবাবুর উপস্থিতিতেই স্থানীয় বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরিকে রঘুনাথপুরের বোর্ড গঠনের বিষয়টি দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই রঘুনাথপুরের ক্ষেত্রে পূর্ণচন্দ্রবাবুর মতামত বাড়তি গুরুত্ব পাবে বলে আশা করছেন তাঁর অনুগামীরা।

কাকে পুরপ্রধান করা হচ্ছে, আঁচ দিতে চান না বিধায়ক। তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘‘কে পুরপ্রধান হবেন তা নিয়ে দলের মধ্যে জল্পনার কোনও অবকাশ নেই ঠিকই। তবে শান্তিরামবাবুর পরামর্শে শহরের নেতা-কর্মী ও কাউন্সিলরদের সাথে আলোচনা করেই নাম ঘোষণা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE