Advertisement
২০ মে ২০২৪
তোলপাড় সদাইপুরের তাপাসপুর

স্বামীর মৃত্যুর জন্য দায়ী করে মারধর

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় অভিজিতের। গ্রামের মাঝপাড়ায় স্ত্রী মণি ওরফে সাবিত্রীর সঙ্গে বসবাস করতেন পেশায় ট্রাক্টর চালক অভিজিৎ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সদাইপুর শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৭ ০১:৫৬
Share: Save:

কমে গিয়েছিল হিমোগ্লোবিন। ফুলে গিয়েছিল চোখ, মুখ। প্রথমে সিউড়ি জেলা হাসপাতাল, পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গিয়েও বাঁচানো যায়নি বীরভূমের সদাইপুরের তাপাসপুরের অভিজিৎ বাগদিকে (২২)। সেই মৃত্যুর জন্য সদ্য বিধবা স্ত্রী মণি ওরফে সাবিত্রীকে দায়ী করে তাঁকে বেধড়ক পেটাল এলাকার মানুষ। সোমবার সকালের ঘটনা।

এলাকার কয়েক জনের অবশ্য দাবি, ওই বধূ ও তাঁর বাপের বাড়ির লোকজনের তন্ত্রসাধনা, ঝাড়ফুঁক, তুকতাকের জন্যই মারা গিয়েছেন অভিজিৎ। মারধর শুরু হতে স্থানীয় কিছু মানুষ, পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করেন। মণির কথায়, ‘‘বাড়ির মঙ্গলের জন্য এক মামা বাড়িতে সত্যনারায়ণ পুজো করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এর থেকে বেশি কিছু নয়।’’ মৃত্যুর কারণ হিসাবে ঠিক কী লেখা হয়েছে, তা জানা যায়নি। তবে এলাকার বেশ কয়েক জন শিক্ষক- যুবক বলছেন, ‘‘হাসপাতালের রিপোর্টে কিডনির সমস্যার কথাই লেখা হয়েছে।’’ নানা রোগে ভুগেই মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের, প্রাথমিক তদন্তের পরে এমন দাবি করেছে পুলিশও।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় অভিজিতের। গ্রামের মাঝপাড়ায় স্ত্রী মণি ওরফে সাবিত্রীর সঙ্গে বসবাস করতেন পেশায় ট্রাক্টর চালক অভিজিৎ। তাঁদের বছর খানেকের এক সন্তানও রয়েছে। অভিজিতের বাবা-মা ও দুই ভাই গ্রামের অন্য প্রান্তে থাকেন। বেশ কিছু দিন ধরেই রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়ায় সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। মুখ, চোখ ফুলে গিয়েছিল। সপ্তাহ দেড়েক আগে সিউড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল অভিজিতকে। তিন বোতল রক্ত নেওয়ার পর সামান্য সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও বুধবার ফের অসুস্থ হয়ে সিউড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি হন। বৃহস্পতিবারই অভিজিতকে রেফার করা হয় বর্ধমানে। রবিবার রাতে মারা যান তিনি।

এলাকায় গিয়ে পড়শিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এমনিতে শ্বশুরবাড়ির বাকি সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল ছিল না মণির। প্রায়ই শাশুড়ি ছবি বাগদির সঙ্গে ঝগড়া হত। সম্পর্ক ভাল ছিল না পড়শিদের সঙ্গেও। তবে সকলের রাগের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল, স্বামীর চিকিৎসার বদলে কেন কুসংস্কার, ঝাড়ফুঁকের মতো তন্ত্র-সাধনার দিকেই ঝুঁকলেন অভিজিতের স্ত্রী। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, এর পিছনে পূর্ণ মদত ছিল ওঁর বাপের বাড়ির লোকজনের। বিশেষ করে ওর দুই ভাই। এই নিয়ে ক্ষোভ জমছিল।

দেহ বাড়িতে পৌঁছনোর পরই সেই ক্ষোভে ঘি পড়ে। উত্তেজিত জনতা চড়াও হয় বধূ ও তাঁর ভাইয়ের উপর। আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাননি মণির মা অঞ্জলি বাগদি এবং দাদা পবনও। এলাকার নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য, উপপ্রধান জাবির হোসেন এবং তৃণমূলের বুথ সভাপতি উৎপল গড়াইরা বলছেন, ‘‘ওঁদের বাঁচাতে গিয়ে আমরাও মার খেয়েছি। কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসের জন্যই এমন পরিণতি।’’ জনতার হাত থেকে বাঁচাতে স্থানীয় ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হলেও মার থামেনি। শেষ পর্যন্ত সদাইপুর থানার পুলিশ এসে বধূ তাঁর পরিজনেদের উদ্ধার করে।

মণি তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর দাদা পবন বলেন, ‘‘আমি কলেজে পড়ি। কেন এ সব বুজরুকিতে বিশ্বাস করতে যাব।’’ যদিও সে কথা মানতে নারাজ পাড়া। পুলিশ জানিয়েছে, এ নিয়ে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। এক পুলিশ-কর্তার দাবি, ‘‘আমরা শুধু ওই বধূকে জনরোষ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছিলাম। পরে ওঁরা চলে যান।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Beaten অভিজিৎ বাগদি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE