জমি জটেই থমকে রয়েছে সিউড়ি-প্রান্তিক রেল পথ!
স্থানীয়দের দাবি, প্রকল্প যখন হয় হবে, আপাতত জনস্বার্থে সিউড়ির উপর দিয়ে যে সমস্ত দূরপাল্লার ট্রেন চলে, সেগুলির স্টপেজ এবং সিউড়ি-হাওড়া ও সিউড়ি-শিয়ালদা ভায়া সাঁইথিয়া দু’জোড়া ট্রেন চালানো হোক। রেল সে নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও, রেল পথের প্রয়োজনীয় জমি সংক্রান্ত নথি দিয়েছে জেলাপ্রশাসনকে। জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলেন, ‘‘সম্প্রতি জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয় নথিপত্র আমাদেরকে দিয়েছে। তারপর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’’
রেল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয়দের দাবি মেনে ২০০৬ সালে সে সময়ের রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব সিউড়িতে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সিউড়ি-প্রান্তিক নতুন রেলপথ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন। ২০১০-এ প্রকল্পের কাজ শুরুও হয়েছিল। ঠিক হয়, প্রান্তিক থেকে লাইনটি ভাগ হয়ে সিউড়ির দিকে যাবে। সিউড়ি থেকে পুরন্দরপুর, সালোন, কসবা, মঙ্গলডিহি এবং অবিনাশপুর— এই পাঁচটি স্টেশন হবে সিঙ্গেল লাইনে। এরমধ্যে মঙ্গলডিহি আর অবিনাশপুর এই দুটি স্টেশনে দুটি ট্রেনের ক্রশিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।
দু’দিকেই কিছুটা পথে মাটি ও পাথরের কাজ সম্পন্ন হয়। তারপর আর এগোয়নি। পূর্ব রেল সূত্রে খবর, ২০১০-এর সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী ওই রেল পথ করতে ৭৫ হেক্টর জমি প্রয়োজন। যার মধ্যে ২৮৫৯টা প্লট পড়বে। এবং প্রজেক্ট কস্ট ধরা হয়েছিল আনুমানিক ১৪৮ কোটি টাকা। রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘‘অনেক আগেই জমির তালিকা বীরভূমের এডিএমকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।’’
প্রকল্প কবে বাস্তবায়িত হবে, না আদৌ হবে না— এ নিয়ে নানা প্রশ্ন জেলার মানুষের।
বীরভূম যাত্রী সমিতির সভাপতি তমাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বোলপুর থেকে সিউড়ি যাতায়তের জন্য বাস ছাড়া কোনও যোগাযোগ নেই। ট্রেন লাইন হলে খুব ভালো হয়। বিশেষ করে রাতে, বোলপুর থেকে সিউড়ির দিকে ফেরা খুব অসুবিধে হয়।’’
সিউড়ির বাসিন্দা চিকিৎসক দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, পুলিশ কর্মী ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়, অধ্যাপক সুশান্তকুমার বর্ধন, শিক্ষক বরুন দাসরা জানান, ‘‘একাধিকবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। কোনও সমাধান হয়নি।’’ সিউড়ির বাসিন্দা মানস চক্রবর্তী, শিল্পী স্বপ্না চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এ দাবি নতুন নয়। এর আগেও বহু বার জানিয়েছি। রেলপথ হলে খুবই উপকার হয়।’’ একই কথা বলছেন বোলপুর-প্রান্তিকের বাসিন্দারা। প্রান্তিকের এক ব্যবসায়ী বলছেন, ‘‘এই লাইনের কাজ শেষ হলে, বহু মানুষের উপকার হয়।’’
সিউড়ির পুস্তক ব্যবসায়ী জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যতদিন না ওই রেলপথ হচ্ছে ততদিন হাওড়া, শিয়ালদহ, কাটোয়া, মালদা-সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভায়া সাঁইথিয়া হয়ে সিউড়ি পর্যন্ত ট্রেন চালানো হোক। সাঁইথিয়া-অন্ডাল লাইনে দুটি ট্রেন সারাদিনে মাত্র পাঁচবার যাতায়াত করে। মাঝে ১১টা থেকে ৪.৪৫ পর্যন্ত অন্ডালের দিকে এবং ৯.২০ থেকে ৩.২০ পর্যন্ত সাঁইথিয়ার দিকে যাওয়ার কোনও লোকাল ট্রেন নেই!’’
রেল সূত্রের খবর, এ বারের বাজেটেও ওই প্রকল্পে টাকা অনুমোদন করেছে রেল মন্ত্রক। তবে প্রকল্প গড়তে জেলা প্রশাসনের কাছে প্রস্তাবিত জমির আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও প্রয়োজনীয় জমি পাওয়া যায়নি। তাই প্রকল্পের কাজ থেমে আছে! জেলা প্রশাসনের পাল্টা দাবি, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জমির সঠিক নথিপত্র না দেওয়ার কারণেই এতদিন জমি অধিগ্রহণ করা যায়নি।
সিউড়ি-প্রান্তিক রেল লাইন বিষয়ে পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার আর কে গুপ্তা বলেন, ‘‘এ বিষয়ে রেলের সিপিআরও বলতে পারবেন।’’ সিপিআরও রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘প্রান্তিক ও সিউড়িতে রেলের নিজস্ব জমি ৩.৭০ কিলোমিটার মত রেল লাইনে মাটি ও পাথরের কাজ হয়েছে। বীরভূম প্রশাসনকে জায়গার জন্য চিঠি করা হয়েছে। এখনও জমি পাওয়া যায়নি। তাই কাজ থেমে আছে।’’ তিনি জানান, ২০১৬-১৭ রেল বাজেটে ৫ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে রেল মন্ত্রক। দূরপাল্লার ট্রেনের স্টপেজ ও ভায়া সাঁইথিয়া হয়ে ট্রেন চালানোর বিষয়ে কোনও কোনও মন্তব্য করতে চাননি সিপিআরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy