Advertisement
০৭ মে ২০২৪

খেলা দেখে ফেরার পথে নদীতে মৃত্যু

ফুটবলের প্রতি প্রবল টানই কাল হল। খেলা দেখতে গিয়ে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল এক যুবক। পরের দিন মঙ্গলবার নদীতে মিলল সেই যুবকের দেহ। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম সুকুমার বাগদি (৩৫)। পাত্রসায়রের হামিরপুরে তাঁর বাসিন্দা।

ভাঙা সাঁকো। পাত্রসায়রের হামিরপুরে।—নিজস্ব চিত্র

ভাঙা সাঁকো। পাত্রসায়রের হামিরপুরে।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৬ ০১:০৯
Share: Save:

ফুটবলের প্রতি প্রবল টানই কাল হল। খেলা দেখতে গিয়ে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল এক যুবক। পরের দিন মঙ্গলবার নদীতে মিলল সেই যুবকের দেহ। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম সুকুমার বাগদি (৩৫)। পাত্রসায়রের হামিরপুরে তাঁর বাসিন্দা। বাসিন্দাদের দাবি, নদী সাঁতরে পার হতে গিয়ে ডুবে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। এরপরেই ওই এলাকায় শালি নদীতে সেতু তৈরির দাবি নতুন করে তুলেছেন তাঁরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুকুমার ছিলেন ফুটবল অন্ত প্রান্ত। নিজে ফুটবল না খেললেও গ্রামের হামিরপুর পূর্বপাড়া মহামায়া ক্লাবের যে কোনও ফুটবল খেলায় তিনি উপস্থিত থাকতেন। সোমবার পাত্রসায়রেরই নিমাইনগর এলাকায় একদিনের ফুটবল টুর্নামেন্ট ছিল। সেখানে খেলতে গিয়েছিল হামিরপুর পূর্বপাড়া মহামায়া ক্লাব।

হামিরপুর থেকে নিমাইনগর যেতে হয় শালি নদী পার হয়ে। ওই নদী পারাপারের কোনও স্থায়ী সেতু বা কজওয়ে নেই। সে ক্ষেত্রে হামিরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের গড়ে দেওয়া বাঁশের সাঁকোই বাসিন্দাদের ভরসা। সম্প্রতি টানা নিম্নচাপে শালি নদীর জল বেড়ে যাওয়ায় বানের তোড়ে ওই বাঁশের সাঁকো ভেসে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাত্রসায়র ব্লক প্রশাসন অস্থায়ী ভাবে ওই এলাকায় একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকোর ব্যবস্থা করে দেয় বাসিন্দাদের পারাপারের জন্য। যাত্রীরা নামমাত্র টাকার বিনিময়ে সেই নৌকোয় চড়েই নদী পারাপার করছিলেন গত কয়েকদিন।

সুকুমার-সহ হামিরপুর ক্লাবের সদস্যেরা সেই নৌকোয় চড়েই সোমবার নিমাইনগরে ফুটবল খেলতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সে দিন দুপুরের পরেই নৌকো পরিষেবা বন্ধ করে দেয় ব্লক প্রশাসন। ফলে ফেরার সময় গ্রামের ছেলেরা নৌকো না পেয়ে অগত্যা সাঁতরেই নদী পার হন। রাতে সবাই বাড়ি ফিরলেও সুকুমারের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। রাতভর ক্লাবের ছেলেরা সুকুমারের খোঁজ চালান গ্রামের বিভিন্ন জায়গায়। কিন্তু তাঁর কোনও হদিস মেলেনি।

এ দিন সকালে শালি নদীতে এক জেলের জালে উঠে আসে সুকুমারের দেহ। খবর চাউর হতেই গোটা গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। এ দিনই দেহ দাহ করা হয়।

পেশায় দিনমজুর সুকুমারের স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। স্বামীর মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন স্ত্রী বন্দনা। কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। হামিরপুর পূর্বপাড়া মহামায়া ক্লাবের সম্পাদক মানিক ঘোষের আক্ষেপ, “সুকুমার কোনও দিন ফুটবল খেলেনি। তবে খেলাটা ওর কাছে নেশার মতো ছিল। যেখানেই আমাদের ক্লাবের ম্যাচ থাকত, ও সব কাজ ফেলে খেলার মাঠে চলে যেত।’’

ক্লাবের এক সদস্য রাজু বাড়ি জানান, সোমবার বিকেল থেকে যে নৌকো পারাপার বন্ধ হয়ে যাবে তা তাঁদের জানা ছিল না। নদী পার না হলে প্রায় ১২ কিলোমিটার ঘুরপথে আসতে হবে ভেবে সবাই মিলে সাঁতরে আসার কথা ঠিক করেন। তাঁর কথায়, “সুকুমার সবার পিছনে ছিল। তীরে উঠে সবাই যে যার বাড়ির পথ ধরেছিলাম। সুকুমার যে নদী থেকে ওঠেনি, তা কারও নজরে আসেনি।’’

এই ঘটনার পরেই নদী থেকে নৌকা তুলে নেওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। মানিকবাবু বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে শালি নদীতে আমরা সেতু বা কজওয়ে তৈরির দাবি তুলে আসছি। প্রশাসন যদি আমাদের সেই দাবি মেনে নিত, তাহলে ছেলেটাকে এ ভাবে মরতে হতো না। ওর সংসারটাই ভেসে গেল।” হামিরপুরের বাসিন্দা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় জানান, এই নদীতে সেতু না থাকায় আট থেকে ন’টি গ্রামের মানুষ সমস্যায় পড়ছেন। এই ঘটনার পরে যদি প্রশাসনের টনক নড়ে। শালি নদীর উপর স্থায়ী সেতু গড়ার দাবি গ্রামবাসী বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁকে একাধিকবার জানিয়েছেন।

তবে পাত্রসায়রের বিডিও আশিসকুমার বিশ্বাস বলেন, “আমাদের কাছে খবর ছিল নদীর জল একেবারেই নেমে যাওয়ায় নৌকো চালানোর পরিস্থিতিই নেই। তাই নৌকো তুলে নেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর আশ্বাস, ওই এলাকায় সেতুর দাবিটি জেলা প্রশাসনের ভাবনায় রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Youth Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE