Advertisement
০৩ মে ২০২৪

অনাস্থা নয়, কড়া বার্তা তৃণমূলের

মিষ্টিতে কাজ হয়নি। তাই এ বার তেতো দাওয়াই। এক হয়ে চলার বার্তা দিয়েও যে কাজ হচ্ছে না, তা গত এক সপ্তাহে জেলার দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতে দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে দলীয় সদস্যেরই আনা অনাস্থা স্পষ্ট করে দিয়েছে। মিষ্টি ওষুধে কাজ যে হওয়ার নয়, সেটা সম্যক বুঝেছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বও। তাই এ বার পঞ্চায়েতে অনাস্থা রুখতে দলীয় কর্মীদের ‘দল থেকে বহিষ্কার’ করে দেওয়ার মতো কঠোর বার্তা দিলেন জেলা সভাধিপতি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:০৩
Share: Save:

মিষ্টিতে কাজ হয়নি। তাই এ বার তেতো দাওয়াই।

এক হয়ে চলার বার্তা দিয়েও যে কাজ হচ্ছে না, তা গত এক সপ্তাহে জেলার দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতে দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে দলীয় সদস্যেরই আনা অনাস্থা স্পষ্ট করে দিয়েছে। মিষ্টি ওষুধে কাজ যে হওয়ার নয়, সেটা সম্যক বুঝেছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বও। তাই এ বার পঞ্চায়েতে অনাস্থা রুখতে দলীয় কর্মীদের ‘দল থেকে বহিষ্কার’ করে দেওয়ার মতো কঠোর বার্তা দিলেন জেলা সভাধিপতি।

বুধবার বাঁকুড়ার যুগিপাড়ার একটি লজে তৃণমূলের জেলা কমিটির বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। বৈঠকে জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী কড়া সুরে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “এই সব (অনাস্থা প্রসঙ্গে) বন্ধ করতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটাতে হবে, এটাই দলের নির্দেশ। কিন্তু, তা মানা হচ্ছে না। এই ধরনের ঘটনা যারা ঘটাবে, তাদের এ বার দল থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হবে!”

বস্তুত, দলে গোষ্ঠী কোন্দলের ঘটনা সম্প্রতি যে ভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, তা নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। পাত্রসায়রে তো প্রায় দিনই দলের এক গোষ্ঠীর সঙ্গে অন্য গোষ্ঠীর সংঘর্ষ বাধছে। পাশাপাশি রাইপুর, গঙ্গাজলঘাটি, শালতোড়াএকের পর এক ব্লকে দলের অভ্যন্তরের দ্বন্দ্ব নানা চেহারায় প্রকাশ্যে এসে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বকে।

সেই দ্বন্দ্বেই নতুন সংযোজন, গ্রাম পঞ্চায়েতে অনাস্থা। জেলার একাধিক পঞ্চায়েতে দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধেই অনাস্থা আনছেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যেরা। গত বৃহস্পতিবারই সিমলাপাল গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএম সদস্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৃণমূল সদস্যদের একাংশ অনাস্থা আনেন তৃণমূলেই প্রধানের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই মঙ্গলবার বিষ্ণুপুরের বেলশুলিয়া গ্রামপঞ্চায়েতের আট জন তৃণমূল সদস্য দলীয় প্রধান ও উপপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে আরও কিছু পঞ্চায়েতে একই ছবি শীঘ্রই দেখা যাবে বলে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের আশঙ্কা।

অথচ মাত্র এক বছর হল, গোটা রাজ্যের পাশাপাশি বাঁকুড়া জেলাতেও পঞ্চায়েত ভোটে বিপুল জয় পেয়ে পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরেই ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। ফলে, এখনই শক্ত হাতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামলানো না গেলে এই তালিকা যে দীর্ঘতর হবে, তা অনুমান করতে পেরেছেন দলের জেলা নেতৃত্ব। কোন্দলে লাগাম টানতেই এ দিনের এই বৈঠকের আয়োজন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। বৈঠকে জেলা নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্লক থেকে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু, দ্বন্দ্ব মেটানোর এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, বড়জোড়ার বিধায়ক আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, শালতোড়ার বিধায়ক স্বপন বাউরিরা। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ। তৃণমূল সূত্রেই জানা যাচ্ছে, বৈঠকে অরূপবাবু বলেন, “যে সব বিধায়ক এই বৈঠকে যোগ দেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে রাজ্য নেতৃত্বকে জানাব।”

এ দিনের বৈঠকে বিভিন্ন ব্লকের তৃণমূল কর্মীরা পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েত ও জেলা পরিষদের কাজ নিয়ে জেলার নেতাদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তৃণমূলের এক ব্লক নেতার দাবি, “ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার সঙ্গে দলের কোনও যোগসূত্র নেই। সবাই নিজের নিজের মতো করে কাজ করছেন।” এই সমন্বয় সাধনের জন্য তিনটি স্তরেই দলীয় কমিটি গড়ে কাজ করার প্রস্তাব ওঠে। যদিও এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী। দল সূত্রের খবর, তিনি বলেন, “কাজ দেখাশোনা করার জন্য সরকারি প্ল্যানিং কমিটি রয়েছে। আলাদা করে দলীয় কমিটি গড়ার কোনও নির্দেশ দল আমাদের দেয়নি। আমরা যা কাজ করি তার রিপোর্ট দলকে পাঠাই।”

বৈঠকে দ্বন্দ্ব রুখতে সভাধিপতি কড়া বার্তা দেওয়ার পরেও কাজ কতটা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ বৈঠক শেষে বিভিন্ন ব্লকের তৃণমূল কর্মীরা জেলার উচ্চ নেতৃত্বের কার্যকলাপ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। এক ব্লক নেতার ক্ষোভ, “আমাদের এলাকার সমস্যা নিয়ে এখানে কোনও আলোচনাই হল না। ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে আমাদের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। আমরা সেগুলি জেলা সভাপতির কাছে জানিয়েছিলাম। কিন্তু, দলের তরফে কোনও পদক্ষেপই করা হয়নি।”

সম্প্রতি গঙ্গাজলঘাটি ব্লক তৃণমূল সভাপতির বিরুদ্ধে এলাকায় সিন্ডিকেট চালানোর অভিযোগ তুলেছেন দলেরই একাংশ। শালতোড়ার ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে আবার অঞ্চল নেতার লিফলেট বিলি করেছেন। কিন্তু ওই দুই ব্লকের পাশাপাশি পাত্রসায়র, রাইপুর ব্লকে লাগাতার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনায় কী ভাবে লাগাম টানা যাবে, তা নিয়ে অবশ্য বৈঠকে কোনও রফাসূত্র বেরোয়নি। রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের কথা প্রচার করতে ট্যাবলো গাড়ি ব্লকে ব্লকে ঘোরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বৈঠকে। তবে দলের নেতাদের একাংশের কথায়, “সরকারি প্রকল্পের প্রচারের আগে দলের ভিতরের দ্বন্দ্ব মেটানোর বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নিলেই দল ভাল করত। এ ভাবে চলতে থাকলে দলের অবস্থা আরও খারাপ হবে।”

যদিও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা জেলায় আছে বলেই মানতে নারাজ জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁ। যে সব ঘটনা ঘটছে, তার সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই দাবি করে তিনি বলেন, “আমাদের সংসার অনেক বড়। কারও সঙ্গে কারও ব্যক্তিগত মতানৈক্য থাকতেই পারে। তা বলে সেই ব্যক্তিগত সমস্যাকে দলের গোষ্ঠীকোন্দল বলাটা ঠিক নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

no confidence tmc bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE