Advertisement
E-Paper

অনাস্থা পঞ্চায়েত সমিতিতেও

এত দিন গ্রাম পঞ্চায়েতে ছিল। এ বার পঞ্চায়েত সমিতিতেও শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রভাব পড়তে শুরু করল পুরুলিয়ায়। তৃণমূল পরিচালিত রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি এবং এক কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলেন ওই সমিতির তৃণমূলেরই সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য। ব্লকে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর ‘নির্দেশ’ অমান্য করায় সম্প্রতি সমিতির ১৩ জন সদস্য সহ-সভাপতি রিনা বাউরি এবং শিশু ও নারী কল্যাণ কর্মাধ্যক্ষ কণিকা চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিয়েছেন রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসকের কাছে।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৪ ০০:২২

এত দিন গ্রাম পঞ্চায়েতে ছিল। এ বার পঞ্চায়েত সমিতিতেও শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রভাব পড়তে শুরু করল পুরুলিয়ায়।

তৃণমূল পরিচালিত রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি এবং এক কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলেন ওই সমিতির তৃণমূলেরই সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য। ব্লকে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর ‘নির্দেশ’ অমান্য করায় সম্প্রতি সমিতির ১৩ জন সদস্য সহ-সভাপতি রিনা বাউরি এবং শিশু ও নারী কল্যাণ কর্মাধ্যক্ষ কণিকা চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিয়েছেন রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসকের কাছে। মহকুমাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মিনা সোমবার বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনাস্থা নিয়ে সভা ডাকা হবে।”

প্রশাসন সূত্রে অবশ্য বলা হয়েছে, কর্মাধ্যক্ষ স্থায়ী সমিতির সভায় নির্বাচিত হন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে পারেন ওই স্থায়ী সমিতির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যেরাই। ফলে, কণিকাদেবীর বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা গৃহীত হবে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বস্তুত, রঘুনাথপুর ১ ব্লকে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তুঙ্গে উঠেছে। গত দুই-তিন মাস ধরেই ওই ব্লকের তৃণমূল শাসিত গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে পরপর অনাস্থা আনছেন দলেরই সদস্যদের একাংশ। দলের মধ্যেই অভিযোগ উঠছে, শীর্ষ নেতৃত্ব কড়া পদক্ষেপ করতে সক্ষম না হওয়ায় রঘুনাথপুর এলাকায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে বারবার মুখ পুড়ছে দলের। আর তার রাজনৈতিক ফায়দা পাচ্ছে বিরোধীরা। দলের নিচুতলার কর্মীদের একাংশের ক্ষোভ, এই দ্বন্দ্বের জেরেই পঞ্চায়েতের গণ্ডী ছাড়িয়ে এ বার পঞ্চায়েত সমিতিতেও দলেরই নির্বাচিত পদাধীকারীদের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হচ্ছে! তৃণমূল সূত্রের খবর, রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতিতে অনাস্থা আনার প্রক্রিয়ার সূত্রপাত দুই সপ্তাহ আগে, রাজ্য এসসি-এসটি কর্পোরেশনের আওতায় ‘ফ্যামিলি ওরিয়েন্টটেড ওয়েলফেয়ার ডেভলেপমেন্ট’ প্রকল্পের অনুষ্ঠানকে ঘিরে। পঞ্চায়েত সমিতির আওতায় থাকা ১৯টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ছাগল প্রতিপালনের জন্য আর্থিক সাহায্য দেওয়ার অনুষ্ঠান ছিল ২০ অক্টোবর। অনুষ্ঠানটি হয়েছিল রঘুনাথপুর শহরের কমিউনিটি হলে। উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো।

অভিযোগ, পঞ্চায়েত সমিতিকে এড়িয়ে রঘুনাথপুর ১ ব্লকের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরোধী হিসাবে পরিচিত জেলা পরিষদের দুই স্থানীয় সদস্যের উদ্যোগে অনুষ্ঠান হওয়ায় ব্লক তৃণমূলের দাপুটে নেতা প্রদীপ মাজি ওই অনুষ্ঠানে সমিতির সদস্যদের অনুপস্থিত থাকার ‘নির্দেশ’ দিয়েছিলেন। পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের মোট ১৬ জন সদস্যের মধ্যে ১৪ জনই অনুপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন শুধু সহ-সভাপতি রিনা বাউরি ও কর্মাধ্যক্ষ কণিকা চক্রবর্তী। আর সে জন্যই রঘুনাথপুর ১ ব্লকে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতা প্রদীপবাবুর ‘রোষে’ ওই দু’জনকে পড়তে হয় বলে তৃণমূলের স্থানীয় কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন। ‘শাস্তিমূলক’ ব্যবস্থা হিসাবে রিনাদেবী ও কণিকাদেবীর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার প্রক্রিয়াও শুরু করে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। ব্লকের এক তৃণমূল নেতার কথায়, “যে ভাবে এলাকার জেলা পরিষদের দুই সদস্য পঞ্চায়েত সমিতিকে এড়িয়ে সভাধিপতিকে এনে চেক বিলির অনুষ্ঠান করিয়েছেন, তাতে ক্ষুব্ধ হয়েই ব্লকের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী সমিতির দুই সদস্যের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে নির্দিষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছে।”

সরকারি ভাবে অবশ্য মহকুমাশাসককে দেওয়া চিঠিতে অনাস্থা আনার কারণ হিসাবে দুর্নীতির বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও সহ-সভাপতি বলেন, “স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে চেক বিলির ওই সরকারি অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন আমাদেরই নেতা প্রদীপ মাজি। কিন্তু, যে অনুষ্ঠানে সভাধিপতি উপস্থিত থাকছেন, সেখানে এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত থাকা আমার কর্তব্য বলেই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। তার জন্যই আমাদের দু’জনের বিরুদ্ধে প্রদীপবাবুর নির্দেশে অনাস্থা এনেছেন সমিতির সদস্যরা।” প্রদীপবাবুর অবশ্য দাবি, “ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে। ওই দুই সদস্যের কাজে পঞ্চায়েত সমিতির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য অখুশি। তাই তাঁরাই অনাস্থা এনেছেন।”

প্রদীপবাবু এই দাবি করলেও অনাস্থা আনার কড়া সমালোচনা করেছেন সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো। তিনি বলেন, “স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ছাগল প্রতিপালনের চেক বিলি করার ক্ষেত্রে রঘুনাথপুরে আমাদের দলের একাংশ দুর্নীতি করছে, এই খবর আমার কাছে ছিল। পুরো পক্রিয়াটি যাতে স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হয়, তাই আমি নিজে গিয়ে চেক বিলি করেছিলাম। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির দুই সদস্য। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তাঁদেরই বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ তুলে অনাস্থা আনা হয়েছে। কিন্তু, এই ধরনের ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না।” রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতিতে অনাস্থার বিষয়টি জানার পরেই প্রদীপ মাজিকে ডেকে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে ব্যাপারে সর্তক করা হয়েছে।”

panchayat samity unreliability subhraprakash mondal raghunathpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy