Advertisement
০৭ মে ২০২৪
আড়শা পঞ্চায়েত সমিতি

অনাস্থায় সরলেন তৃণমূলের সভাপতি

গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। অথচ দলীয় কোন্দলের জন্য ফের অনাস্থা ভোটের সম্মুখীন হতে হল আড়শা পঞ্চায়েত সমিতিকে। জঙ্গলমহলের এই পঞ্চায়েত সমিতি অতীতে একাধিক অনাস্থা ভোটের সম্মুখীন হয়েছে।

অনাস্থা ভোটের পরে পঞ্চায়েত সমিতির অফিস থেকে বেরিয়ে আসছেন সদস্যেরা। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

অনাস্থা ভোটের পরে পঞ্চায়েত সমিতির অফিস থেকে বেরিয়ে আসছেন সদস্যেরা। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আড়শা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:০৭
Share: Save:

গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। অথচ দলীয় কোন্দলের জন্য ফের অনাস্থা ভোটের সম্মুখীন হতে হল আড়শা পঞ্চায়েত সমিতিকে। জঙ্গলমহলের এই পঞ্চায়েত সমিতি অতীতে একাধিক অনাস্থা ভোটের সম্মুখীন হয়েছে। বামফ্রন্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় বিগত দিনে একাধিকবার অনাস্থার ভোট দেখেছে এই পঞ্চায়েত সমিতি। তখন বিরোধীরা বারেবারে অভিযোগ তুলেছেন, কীভাবে ব্যাহত হয়েছে উন্নয়ন। আর একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও ফের সেই অনাস্থার ছবি আড়শা পঞ্চায়েত সমিতিতে।

মঙ্গলবার অনাস্থার ভোটাভুটিতে দলের সভাপতি অপসারিত হয়েছেন। এ দিন ২৩ সদস্যের মধ্যে ১৪ জন সদস্যই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সকলেই তৃণমূলের সভাপতির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। আড়শা পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট আসনের মধ্যে তৃণমূল ১৩, সিপিএম ৮, ফরওয়ার্ড ব্লক ও কংগ্রেস ১টি করে আসন পায়। গত ২৩ ডিসেম্বর তৃণমূলের ৬, ফব এবং কংগ্রেসের ১ জন করে সদস্য তৃণমূলের সভাপতি তুষ্টরাণি রাজোয়াড়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। মহকুমাশাসকের (পুরুলিয়া সদর) কাছে ওই দিন তৃণমূলের যে ছয় সদস্য দলীয় সভাপতি’র বিরুদ্ধে অনাস্থার চিঠি দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে ৫ জনই কর্মাধ্যক্ষ।

দলের সভাপতির বিরুদ্ধে ৫ জন কর্মাধ্যক্ষ অনাস্থা আনায় জেলার অন্য পঞ্চায়েত সমিতির মতোই আড়শায় দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত সমিতির কাজকর্ম ঘিরে বেশ কিছুদিন ধরেই ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছিল। অভিযোগ, সদস্যদের বাইরে ঠিকাদারদের ঘনিষ্ঠ কিছু লোকজন পঞ্চায়েত সমিতি পরিচালনায় নাক গলাচ্ছিলেন। এই বিষয়টি সদস্যদের অনেকেই মেনে নিতে পারছিলেন না। অনাস্থা সেই ক্ষোভেরই প্রতিফলন বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

আড়শার যুগ্ম সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক স্বর্ণকমল চৌধুরী জানিয়েছেন, অনাস্থার চিঠি মহকুমাশাসকের কাছে জমা দেওয়া হয়েছিল। তাঁর অনুমতি সাপেক্ষে এ দিন অনাস্থা প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটি হয়েছে। উপস্থিত ১৪ জন সদস্যই অনাস্থার প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। অনাস্থা আনা তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির দুই কর্মাধ্যক্ষ রুমকি দাস ও প্রতিমা মাহাতো অভিযোগ করেন, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তাঁদের সঙ্গে কোনও সমন্বয় রেখে কাজ করতেন না। অনাস্থার পক্ষে সমর্থন জানানো সদস্যদের কেউ কেউ এও অভিযোগ করেছেন, বাইরের লোক পঞ্চায়েত সমিতি চালাত। বেশ কিছু কাজকর্মে ঠিকাদারদের ঘনিষ্ঠ কিছু লোকজন হস্তক্ষেপ করত। এই বিষয়গুলি সদস্যরা মেনে নিতে পারছিলেন না। এ দিনের সভায় অবশ্য উপস্থিত ছিলেন না সদ্য প্রাক্তন সভাপতি তুষ্টরাণি রাজোয়াড়। তাঁর প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

দলীয় সভাপতি অপসারিত হওয়ার পরে আড়শার তৃণমূল নেতা (কমিটি ভাঙার আগে ব্লক সভাপতি) আনন্দ মাহাতো বলেন, “এ দিন অনাস্থা প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটিতে আমাদের সদস্যদের বেশ কয়েকজন দলের সভাপতির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। এটা সত্যি যে, কিছু কাজ নিয়ে সভাপতির সঙ্গে দলের সদস্যদের মতানৈক্য তৈরি হয়েছিল। সেই কারণেই অনাস্থার ভোটাভুটি এড়ানো গেল না। এই বিষয়টি নিয়ে আমরা সতর্ক থাকব।” পঞ্চায়েত সমিতি পরিচালনার ক্ষেত্রে বাইরের এবং ঠিকাদার ঘনিষ্ঠ কিছু লোকজনের হস্তক্ষেপ অভিযোগ প্রসঙ্গে আনন্দবাবু বলেন, “এরকম কিছু জায়গায় শোনা যাচ্ছে। এর সবটা ঠিক নয়। তবে এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

no confidence motion arsha panchyat samity tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE