Advertisement
E-Paper

অভিযোগ নেয়নি থানা, এসপিকে নালিশ বধূর

বকেয়া টাকার জন্য রাতের অন্ধকারে স্বামীকে তুলে নিয়ে গিয়েছে পাওনাদাররা। থানায় অপহরণের অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন স্ত্রী। কিন্তু থানা অপহরণের অভিযোগ নেয়নি। নিছক একটি নিখোঁজ ডায়েরি করে দায় সারতে চেয়েছিল পুলিশ। অন্যথায় অভিযুক্তদের এলাকায় গিয়ে অপহরণের মামলা করার পরামর্শ দিয়েছিল বলে অভিযোগ। তাই খোদ পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হলেন অপহৃতের স্ত্রী। ঘটনাস্থল সেই বীরভূম।

নিজস্ব সংবাদদাতা ময়ূরেশ্বর

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৩১
সিউড়িতে পুলিশ সুপারের কাছে যাচ্ছে অপহৃত শেখ সাগরের পরিবার। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

সিউড়িতে পুলিশ সুপারের কাছে যাচ্ছে অপহৃত শেখ সাগরের পরিবার। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

বকেয়া টাকার জন্য রাতের অন্ধকারে স্বামীকে তুলে নিয়ে গিয়েছে পাওনাদাররা। থানায় অপহরণের অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন স্ত্রী। কিন্তু থানা অপহরণের অভিযোগ নেয়নি। নিছক একটি নিখোঁজ ডায়েরি করে দায় সারতে চেয়েছিল পুলিশ। অন্যথায় অভিযুক্তদের এলাকায় গিয়ে অপহরণের মামলা করার পরামর্শ দিয়েছিল বলে অভিযোগ। তাই খোদ পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হলেন অপহৃতের স্ত্রী। ঘটনাস্থল সেই বীরভূম।

এ বারের ঘটনাটি ময়ূরেশ্বর থানা এলাকার। পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই থানার দুনা গ্রামের সাগর শেখের সঙ্গে ইটের কারবার রয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙা থানার ভাবতা গ্রামের নুরজামাল শেখ এবং হাপিজুল শেখদের। তাঁদের কাছে ইট নিয়ে এলাকায় বিক্রি করতেন সাগরবাবু। সেই সূত্রে তাঁদের কাছে বেশ কিছু টাকা বকেয়াও পড়ে যায় তাঁর। সেই টাকা আদায়ের জন্যই গত ১৫ ডিসেম্বর রাতে পাওনাদাররা তাঁর স্বামীকে বাড়ি ফেরার পথে তুলে নিয়ে যায় বলে হিরা বিবির অভিযোগ। তাঁর দাবি, ওই রাতেই অভিযুক্তরা ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে স্বামীকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ফোন করতেই বিষয়টি জানতে পারেন হীরাবিবি।

পরদিনই অপহরণের অভিযোগ জানাতে থানায় যান তিনি। তাঁর অভিযোগ, সব কিছু শোনার পর থানা নিখোঁজ ডায়েরি করার পরামর্শ দেয়। আমি বলি, আমার স্বামী তো হারিয়ে যায়নি। তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মাত্র ২৬ হাজার টাকা বাকি রয়েছে। কিন্তু ১০ লক্ষ টাকা দাবি করে বারবার ফোন করছে অপহরণকারীরা। টাকা না পেলে কেটে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দিচ্ছে তারা।” তাঁর আরও অভিযোগ, “থানা সাফ জানিয়ে দেয় অপহরণের অভিযোগ জানাতে হলে বেলডাঙা থানায় যান। কিন্তু বৃদ্ধা শাশুড়ি এবং দুই শিশু পুত্রকে নিয়ে একা থাকি। কী করে বেলডাঙায় গিয়ে অভিযোগ জানাব। তা ছাড়া যেখানে নিজের থানাই অভিযোগ নিল না, সেখানে অন্য থানা অভিযোগ নেবে তার নিশ্চয়তা কোথায়।” তাই শুক্রবার দুই শিশুপুত্র এবং শাশুড়ি রসোবা বিবিকে নিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন হিরাবিবি। পুলিশ সুপারের অনুপস্থিতিতে তাঁরা অভিযোগ জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনন্দ রায়ের কাছে।

তবে পুলিশের এই হেনস্থার ঘটনা এই জেলায় নতুন নয়। গত অক্টোবর মাসে দুবরাজপুর থানার বিরুদ্ধে, অভিযোগ না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সে বার, এক নাবালিকা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েও অভিযোগ জানাতে গেলে এই থাকার ঘটনা নয় বলে, তাদেরকে বার বার ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। একটি নয়, দু’টি থানা তাদের ফিরিয়ে দিয়েছিল। গ্রামবাসীরা এসে ভিক্ষোভও দেখান। শেষ পর্যন্ত ওই বিক্ষোভের পরে পুলিশ অভিযোগ নেয়। কিন্তু, প্রথমে নাবালিকা নিগ্রহের যে ধারা সেটি দেয়নি। এই বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরে ওই ধারা যোগ করে মামলা শুরু করে।

স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। রামপুরহাট বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সামসুল ইসলাম বলেন, “যে কারণেই হোক না কেন, কাউকে তুলে নিয়ে আটকে রাখার অভিযোগ পেলে পুলিশের উচিৎ অপহরণের মামলা রুজু করে অপহরণকারীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি অপহৃতকে উদ্ধার করা।” যদিও ময়ূরেশ্বর থানার তরফে দাবি করা হয়েছে, অভিযোগকারিণীকে নিঝোঁজ ডায়েরি করা বা অন্য থানায় গিয়ে অভিযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়নি। বরং তাঁর অভিযোগ খতিয়ে দেখার পর আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। তা সত্ত্বেও তিনি কেন এমন অভিযোগ করছেন বুঝতে পারছি না। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, “ওই বধূর অভিযোগ পেয়েছি। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি থানার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।”

mayureswar police station mayureswar kidnapping charges kidnap
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy