ফুট ওভারব্রিজ সম্পূর্ণ নয়। তাই প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই পেরতে হয় রেল লাইন। শুক্রবার সকালে সেই লাইন পেরতে গিয়েই প্রাণ হারাল পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্র। লাইন পার করে প্ল্যাটফর্মে ওঠার মুখে দ্রুতগতিতে আসা ডাউন শতাব্দী এক্সপ্রেসের ধাক্কায় লাইনে ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রাকিবুল হাসান (১০) নামে ওই ছাত্রের। বর্ধমান-সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনের স্বাধীনপুর স্টেশনের ঘটনা। স্থানীয় প্রতাপপুর হাইস্কুলের ছাত্র রাকিবুলের বাড়ি রামপুরহাটের পাথরা গ্রামে। ঘটনার পরে রেল অবরোধ শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। সামিল হয় ওই স্কুলের পড়ুয়ারাও। ফুট ওভারব্রিজের কাজ শেষ করা, আন্ডারপাস তৈরি এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানাতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। অবরোধের জেরে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ও ডাউন গুয়াহাটি-ঝাঁঝা এক্সপ্রেসকে দীর্ঘ ক্ষণ স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। খবর পেয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে রামপুরহাট থেকে রেল পুলিশ আধিকারিক, রেলওয়ে সুরক্ষা বাহিনীর রামপুরহাট স্টেশন ইনচার্জ, এসডিপিও (রামপুরহাট) এবং রামপুরহাট ও মাড়গ্রাম থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে চলে আসে। প্রয়োজনীয় আশ্বাসে প্রায় দু’ঘণ্টা অবরোধ চলার পরে বিক্ষোভকারীদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।
রাকিবুল
রেল ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই স্টেশন থেকে স্কুলটির দূরত্ব প্রায় ১০০ মিটার। স্কুলে আসা-যাওয়া করতে রেল লাইনই ব্যবহার করতে হয় ওপার থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের। একই ভাবে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, রোজকার মতো এ দিন সকাল ১০টা ৪৪ মিনিট নাগাদ হাওড়ামুখী শতাব্দী এক্সপ্রেস স্টেশনের ৩ নম্বর লাইন দিয়ে পাস করছিল। স্টেশন ম্যানেজার নেমুয়েল টুডু বলেন, “ওই ছাত্রটি স্টেশনের ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে না গিয়ে প্রথমে ১ নম্বর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা গণদেবতা এক্সপ্রেসের ভিতর দিয়ে ২ নম্বর লাইনে পৌঁছয়। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়ির তলা দিয়ে ৩ নম্বর লাইন পেরিয়ে প্লাটফর্মে ওঠতে যাচ্ছিল। ঠিক ওই মুহূর্তেই ৩ নম্বর লাইনে ডাউন শতাব্দী এক্সপ্রেস এসে পড়ে। লাইন পেরোতে পারলেও ছাত্রটি আর প্লাটফর্মে উঠতে পারেনি।” প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। ঘটনার পরে ওই স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় তখনও ওই লাইনের ধারে কিশোরটির মৃতদেহ পড়ে। লাইনের উপরেই ছড়িয়ে পড়ে আছে তার স্কুলব্যাগ, বই, খাতা। খানিক দূরেই একজোড়া চটি।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, ওই ছাত্রটি ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করলেও ৩ নম্বর লাইনটি হেঁটেই পেরতে হত। এমনিতেই ওই স্কুলের ১৫০০-র মধ্যে অর্ধেকের বেশি পড়ুয়াই রেল লাইনের ওপার থেকে আসে। স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বলেন, “স্টেশনের ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে ১ নম্বর থেকে ২ নম্বর প্লাটফর্মে যাওয়া যায়। কিন্তু ২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম পৌঁছে বিপজ্জনক ভাবে ৩ নম্বর রেল লাইনটি পেরিয়েই পড়ুয়া থেকে স্থানীয় বাসিন্দা সকলকেই যাতায়াত করতে হয়।” পাথরার আলমগির শেখ, রঙ্গাইপুরের সুনীলকুমার দাসদের দাবি, “আমরা দীর্ঘদিন থেকে এখানে একটি আন্ডার পাসের দাবি করে আসছি। কিন্তু রেল সে ব্যাপারে উদাসীন।” তাঁদের অভিযোগ, ‘থ্রু’ ট্রেন যাওয়ার সময়ে স্টেশন থেকে কোনও ঘোষণাও করা হয় না।
রেলের রামপুরহাটের সহকারী বাস্তুকার নরেন্দ্র কুমার বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দারদের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।” অন্য দিকে, এসডিপিও (রামপুরহাট) কোটেশ্বর রাও বলেন, “রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা ওভারব্রিজের কাজ শেষ করা এবং আণ্ডারপাস তৈরির ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। রেলের তরফে মৃত ছাত্রের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলেও তাঁরা জানিয়েছেন।”