Advertisement
০৫ মে ২০২৪

আগুন লেগেছে, প্রচার ফেলে ছুট লাগালেন প্রার্থী

ভোটারদের বাড়িতে আগুন লেগেছে, খবরটা কানে যেতেই এক প্রার্থী দৌড় লাগালেন প্রচার ফেলে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছুটলেন আঝপেটা খেয়েই! রবিবার বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস ও বিজেপির প্রার্থীদের প্রচার ছাপিয়ে রাজনৈতিক তরজার কেন্দ্রে রইল সেই পোড়া বাড়িই!

রাইপুরের নামোবাজারে উমাকান্ত ধরের তোলা ছবি।

রাইপুরের নামোবাজারে উমাকান্ত ধরের তোলা ছবি।

দেবব্রত দাস ও রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
খাতড়া ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৪ ০১:৫৮
Share: Save:

ভোটারদের বাড়িতে আগুন লেগেছে, খবরটা কানে যেতেই এক প্রার্থী দৌড় লাগালেন প্রচার ফেলে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছুটলেন আঝপেটা খেয়েই! রবিবার বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস ও বিজেপির প্রার্থীদের প্রচার ছাপিয়ে রাজনৈতিক তরজার কেন্দ্রে রইল সেই পোড়া বাড়িই!

৪১ ডিগ্রিরও বেশি তাপমাত্রা আর দিনভর প্রায় ঝড়ের মতো বইতে থাকা গরম হাওয়াকে উপেক্ষা করেই বাঁকুড়ার কংগ্রেস প্রার্থী নীলমাধব গুপ্ত এবং বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকার এ দিন প্রচারে গিয়েছিলেন জঙ্গলমহলের অন্যতম ব্লক রাইপুরে। জেলা কংগ্রেস সভাপতি রাধারানি বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে নীলমাধববাবু চষে ফেললেন রাইপুরের সবুজবাজার, থানাগড়া, নামোপাড়া এলাকা। অন্য দিকে বিজেপি প্রার্থী সুভাষবাবু ঘুরলেন ওই ব্লকেরই কুমারমোহন, ঠাকুরবাধা, বেনাশুলির মতো একাধিক গ্রামে। কোথাও ফুলের মালা পরিয়ে, কোথাও শাঁখ বাজিয়ে তাঁকে বরণ করলেন অনেক মানুষ।

তালকাটল রাইপুরের নামো বাজারে মোট পাঁচটি বাড়িতে আগুন লাগার খবরে। খবরটা পেয়েই সঙ্গীসাথীদের নিয়ে সেখানে ছোটেন নীলমাধববাবু। বাড়ির আগুন নেভাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে তিনিও হাত লাগান। দমকল বাহিনীকে ফোন করে অগ্নিকাণ্ডের খবর দেন। ঠিক সেই সময় স্থানীয় বেনাশুলি গ্রামে একটি আদিবাসী পরিবারে নেমন্তন্ন পেয়ে সেখানে দুপুরের খাওয়া সারছিলেন সুভাষবাবু। ওই বাড়ির গিন্নি আলমণি হেমব্রম নিজে হাতে ভাত, ডাল, শাক আর আলুভাজা যত্ন করে রেঁধেছিলেন পেশায় ডাক্তার এই বিজেপির প্রার্থীর জন্য। কিন্তু, আগুন লাগার খবর পেয়ে আধপেটা খেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে যান সুভাষবাবু। আলমণিদেবীর আক্ষেপ তাই আর যাচ্ছে না “ডাক্তারবাবু আমাদের পূর্ব পরিচিত। চিকিৎসা করাতে গিয়েই ওঁর সঙ্গে পরিচয়। গ্রামে এসেছেন শুনে কত সাধ করে তাঁকে খাওয়াবো ভাবলাম। কিন্তু, মানুষটা ভাল করে খেতেই পেলেন না!”

আগুন নিভে যাওয়ার দেড় ঘণ্টা পরে দমকল আসে ঘটনাস্থলে। ভোটের বাজারে যা নিয়ে রাজ্য সরকারে বিঁধেছেন কংগ্রেস প্রার্থী। নীলমাধবাবুর বক্তব্য, “ উন্নয়নের জন্য এত টাকা ঢালছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু, গ্রামের নলকূপগুলিতে জল নেই। গোটা খাতড়া মহকুমায় দমকল কেন্দ্র নেই। আগুন নেভাতে এ দিন হিমশিম খেতে হল সবাইকে। উন্নয়নের এত টাকা যাচ্ছে কোথায়, তার জবাব দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।”

আগুন নেভার পরেই তিনি বেরিয়ে যান। তার পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিজেপি প্রার্থী সুভাষবাবু রাইপুরের বিডিও-কে ফোন করে অবিলম্বে ত্রাণ সামগ্রী পাঠাতে অনুরোধ করেন। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিকদের সান্ত্বনা দেন এবং তাঁদের সাহায্যের জন্য বিডিও-কে দরখাস্ত লেখেন। সেই দরখাস্তে সই করেন ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিকেরা। পরে বিডিও ওই গ্রামে এলে তাঁর হাতে দরখাস্তটি তুলে দেওয়া হয়। বিডিও দীপঙ্কর দাস বলেন, “ব্লকের বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দফতরের আধিকারিককে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছিলাম, আমি নিজেও ওখানে গিয়েছিলাম, সরকারি নিয়ম মেনেই ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।”

পুড়ে যাওয়া বাড়িগুলির মালিক সন্তোষ দুলে, মানিক দুলে, বচন দুলে, কানন দুলে ও তপন দুলে বলেন, “আমরা দিন মজুরি করে খাই। আগুনে আমাদের সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল। কংগ্রেস ও বিজেপির দুই প্রার্থীই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিজেপি প্রার্থী তাঁর ফোন নম্বরও দিয়েছেন। ক্ষতিপূরণ না পেলে ওঁকে জানাবো।” এই ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও শাসকদলকে এক হাত নিয়েছেন সুভাষবাবুও। তাঁর দাবি, “প্রশাসনের কেউ আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে আসেননি। খবর পাওয়ার তিন ঘণ্টা পরে দমকল আসে। শাসকদলের লোকজনও গরহাজির। আসলে এই খেটে খাওয়া মানুষগুলোর পাশে কেউ দাঁড়াতেই চান না।”

রাইপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি জগবন্ধু মাহাতো অবশ্য দাবি করেন, “খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি দমকলে ফোন করি। ওই এলাকার বাসিন্দা, রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ পল্টু রজক নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আগাগোড়া দেখভাল করে কাজের তদারকি করেছেন।” তাঁর কটাক্ষ, “ভোটের মরসুমে ফায়দা তুলতেই এই ঘটনাকে ঘিরে রাজনীতি করতে চাইছে কংগ্রেস-বিজেপি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

debabrata das rajdip bandyopadhyaya khatra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE