Advertisement
E-Paper

আমার স্বামীও ট্রাইবাল, ভরতকে পাশে বসিয়ে বললেন মুনমুন

শ্রীমতী দেব বর্মা এসে গিয়েছেন! হাল্কা গেরুয়া রঙের শিফন শাড়ি পরনে। যতবার হাত দিয়ে স্টেপকাট চুল সেট করে নিচ্ছেন, ততবারই হিরের নাকছাবি ঝিলিক দিয়ে উঠছে! কপালে লাল বড় টিপ। সিঁথির কাছে সিঁদুরটা একটু বেশিই ধেবড়ে আছে। বাঁ হাতে অনেকগুলো সাদা-নীল রিস্টব্যান্ড। আঙুলে মানানসই গেরুয়া নেলপলিশ। লিপস্টিকের রং-ও তাই। সেই ঠোঁটে টানা হাসি। চাঁদিফাটা গরমেও তা মুছছে না।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:০৫
এই প্রথম প্রচার শুরু করলেন বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেন। মঙ্গলবার মেজিয়ার বাগানগোড়ায় জনসভার মঞ্চে উঠেই সোজা চলে গেলেন সাজিয়ে রাখা সুচিত্রা সেনের বিশাল ছবির দিকে। ফুল দিয়ে প্রণাম করলেন মাকে। ছবিটাকে আলতো ছুঁয়ে মাইক্রোফোন ধরে নামলেন ভোট রঙ্গমঞ্চে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

এই প্রথম প্রচার শুরু করলেন বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেন। মঙ্গলবার মেজিয়ার বাগানগোড়ায় জনসভার মঞ্চে উঠেই সোজা চলে গেলেন সাজিয়ে রাখা সুচিত্রা সেনের বিশাল ছবির দিকে। ফুল দিয়ে প্রণাম করলেন মাকে। ছবিটাকে আলতো ছুঁয়ে মাইক্রোফোন ধরে নামলেন ভোট রঙ্গমঞ্চে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

শ্রীমতী দেব বর্মা এসে গিয়েছেন!

হাল্কা গেরুয়া রঙের শিফন শাড়ি পরনে। যতবার হাত দিয়ে স্টেপকাট চুল সেট করে নিচ্ছেন, ততবারই হিরের নাকছাবি ঝিলিক দিয়ে উঠছে! কপালে লাল বড় টিপ। সিঁথির কাছে সিঁদুরটা একটু বেশিই ধেবড়ে আছে। বাঁ হাতে অনেকগুলো সাদা-নীল রিস্টব্যান্ড। আঙুলে মানানসই গেরুয়া নেলপলিশ। লিপস্টিকের রং-ও তাই। সেই ঠোঁটে টানা হাসি। চাঁদিফাটা গরমেও তা মুছছে না।

শ্রীমতী এলেন। এবং মঙ্গলবার মেজিয়ার বাগানগোড়ায় জনসভার মঞ্চে উঠেই সোজা চলে গেলেন সাজিয়ে রাখা সুচিত্রা সেনের বিশাল ছবির দিকে। ফুল দিয়ে প্রণাম করলেন। আলতো ছুঁলেন ছবিটাকে। মঞ্চের মাইক্রোফোনে তখন ‘এই পথ যদি না শেষ হয়...’। শ্রীমতী দেব বর্মা এ বার নস্ট্যালজিক। “মায়ের এই গানটা কত দিন পরে শুনলাম! আমার পথ কিন্তু আজ আপনাদের জায়গা থেকে শুরু হল। প্লিজ, আমাকে কাজ করার একটা সুযোগ দেবেন।”ভোটের প্রচার শুরু করে দিলেন শ্রীমতী।

গত ২৩ মার্চ বাঁকুড়া শহরের কর্মিসভায় এসে নিজের ‘সুচিত্রা সেনের মেয়ে’ পরিচয়কে বারবার সামনে এনেছিলেন। এ দিনও‘মা’ এবং ‘মমতা’-কেই ছুঁয়েছেন শ্রীমতী। তাঁর বক্তৃতার কেন্দ্রে ছিল নিজের মহানায়িকা মায়ের অসুস্থতা, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোগিতার কথা। বাঁকুড়া শহর লাগোয়া পোয়াবাগানের তৃতীয় জনসভায় তিনি বললেন, “কিছু না জানিয়েই দিদি আমার নাম ঘোষণা করে দিলেন! আমি বললাম, এটা কী করলেন? উনি আশ্বাস দিলেন, ‘তুমি ঠিক পারবে। আমি পাশে আছি।’ এখন বুঝতে পারছি, উনি আমার পাশে আছেন। আপনাদের পাশেও আছেন।”

কাট। তুমুল হাততালিতে ভেসে যাচ্ছে মঞ্চ।

কখনও মেজিয়ার সভায় বললেন, “হাসপাতালে মমতা এসে বললেন, ‘উত্তম-সুচিত্রা বাঙালির রক্তে। তাই না এসে পারলাম না’।” আবার শালতোড়ার সভায় সুচিত্রা-কন্যার উক্তি, “মায়ের মৃত্যুর পরে আমি ঠিক যে ভাবে যা চেয়েছিলাম, সেই ভাবেই সব মমতা করলেন। উনি ছাড়া কিছুই হত না।” যা শুনে খানিকটা কটাক্ষের সুরে তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ, সিপিএমের পোড়খাওয়া প্রার্থী বাসুদেব আচারিয়ার মন্তব্য, “জনপ্রতিনিধি হওয়ার বাসনা রাখছেন। এত মা মা করলে চলবে! সুচিত্রা সেন এসে কি তাঁকে ভোটে জেতাবেন? উনি জিতলে কী কী করবেন, সেটাই সাধারণ মানুষকে বলুন।” শ্রীমতী অবশ্য তিনটি জনসভাতেই আপ্রাণ বলতে চেয়েছেন, মানুষ তাঁকে ভোট দিলে, তিনি তাঁদের জল দেবেন। বলেছেন, “ওরা (সিপিএম) ন’বছর বারবার ভোট পেয়ে কিছুই করল না! এই সে দিন সুব্রতদা (মুখোপাধ্যায়) দেখালেন, রাস্তার ধারে সব জলের পাইপ পড়ে আছে। সুব্রতদা আনিয়ে রেখেছেন। কিন্তু, চালু করা যায়নি। সিপিএম কিছুই করল না। কোনও সভ্য দেশে জল আর বিদ্যুৎ নেই, এটা ভাবা যায় না।”

প্রতিটি সভাতেই তৃণমূলের নেতারা ঘোষণা করেছেন, লোরেটোর ছাত্রী প্রার্থীকে জেতালে বাঁকুড়ার মানুষের সুবিধা হবে। কারণ, তিনি নাকি দিল্লি গিয়ে ইংরেজি আর হিন্দিতে বাঁকুড়ার মানুষের অসুবিধার কথা বলতে পারবেন। জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী বা যুব তৃণমূল সভাপতি শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি, “উনি বলতে পারবেন, ‘আই ওয়ান্ট ডেভেলপমেন্ট ফর বাঁকুড়া’।” শুনে কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুত হাসি বাঁকুড়ার তারকা-প্রার্থীর মুখে। বললেন, “আমার স্বামী, আমার মেয়েরা পাশে থাকবেন। প্লিজ আমাকে জিতিয়ে আনুন।

রানিগঞ্জে পীর সাহেবের দরগায়। —নিজস্ব চিত্র।

ছবির জগৎ, নাটক-যাত্রার মঞ্চ তাঁর পরিচিত। কিন্তু, রাজনীতির মঞ্চে তিনি আনকোরা। আড়ষ্টতা পুরোপুরি কাটেনি। তবে, সাবলীল থাকার চেষ্টায় খামতি নেই। সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় অভ্যস্ত চোস্ত ইংরেজি এসে পড়া মাত্র দ্রুত তা শুধরে নিয়ে বাংলা প্রতিশব্দ হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি দেব বর্মা নাকি দেব বর্মন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধীরা। বিতর্ক মেটাতে তিনটি সভাতেই স্বামী ভরত দেব বর্মাকে পাশে বসিয়ে বলেছেন, “আমার স্বামীকে সঙ্গে এনেছি, আপনাদের দেখাব বলে। উনিও ‘ট্রাইবাল’! ভোটার কার্ডে আমি শ্রীমতী দেব বর্মা। স্বামীর পদবি অনুযায়ী।”

এই পর্যন্ত মোটামুটি সামলে নিয়ে শ্রীমতী জোর হকচকিয়ে গিয়েছেন, পোয়াবাগানের শেষ সভায় পৌঁছে। যখন তৃণমূল নেতা অরূপ চক্রবর্তী বলে বসলেন, “এই হলেন মুনমুন সেন। আমাদের সুপ্রিয়াদেবীর মেয়ে!”

সভাজুড়ে হাসির রোল। কেউ এক জন ভুল শুধরে দিলেন। মাথা নেড়ে অরূপবাবু বললেন, “সুপ্রিয়াদেবীকে কেউ ভুলে যাননি!” প্রায় ছুটে গিয়ে মাইক কেড়ে শ্রীমতী বললেন, “উনি অনেক পরিশ্রম করেছেন তো। তাই একটু ভুল হয়ে গিয়েছিল। তবে, সুপ্রিয়াদেবীও আমার মায়ের মতোই।”

মহিলারা মুখে আঁচল চাপা দিয়ে হাসছেন। এমন সময় ফিসফিসানিটা কানে এল, “একটা পারিবারিক শিক্ষা আছে। হাজার হোক সুচিত্রার মেয়ে তো!” তবে, যাঁকে ঘিরে তারকা-প্রার্থীর এত প্রচার, সেই সুচিত্রা সেনের ছবি মেজিয়ার সভা শেষে পড়ে রইল একাকী। তৃণমূলের নেতারা জানালেন, মেজিয়ার পার্টি অফিসেই ঠাঁই হবে সুচিত্রার।

moonmoon sen tmc parijat bandyopadhyay rajdeep bandyopadhyay munmun sen
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy