খন্দপথেই নিত্য ঝুঁকির যাত্রা। —নিজস্ব চিত্র
রাস্তার মধ্যে বড়মাপের অসংখ্য গর্ত। কোথাও পিচ উঠে পাথর বেরিয়ে পড়েছে। কোথাও রাস্তাই নেই। এমনই বেহাল ছবি শিল্পায়নের মুখ হিসেবে তুলে ধরা রঘুনাথপুর মহকুমার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা রঘুনাথপুর-চেলিয়ামা। জেলা পরিষদের আওতায় থাকা প্রায় ১৫ কিলোমিটার ওই রাস্তা সংস্কারের জন্য বিভিন্ন মহলে জানানো থেকে শুরু করে অবরোধ সবই হয়েছে। কিন্তু রাস্তার আমূল সংস্কারে ক্ষেত্রে তৃণমূল পরিচালিত জেলাপরিষদ উদাসীন বলে অভিযোগ। তবে সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর দাবি, ওই রাস্তাটি মেরামতির জন্য দু’দফায় ৮৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে।
রঘুনাথপুর ২ ব্লক থেকে মহকুমা সদর রঘুনাথপুর বা জেলা সদর পুরুলিয়া যাওয়ার জন্য এই একটি রাস্তাই ভরসা ব্লকের প্রায় সাড়ে আট লক্ষ বাসিন্দার। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি প্রায় তিন বছর ধরে বেহাল হয়ে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা তথা শিক্ষক অভিষেক মিশ্রের অভিযোগ, “রাস্তাটি সংস্কারের দাবিতে একাধিকবার জেলা প্রশাসনের সমাধান সেলে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও সদুত্তর মেলেনি। প্রতিদিন রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করি। অথচ রাস্তার বেহাল অবস্থার জন্য কার্যত প্রাণ হাতে করে যাতায়ত করতে হয় আমাদের।” কয়েকবার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা অবরোধ হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে অবরোধে নেতৃত্ব দিয়েছে স্থানীয় তৃণমূলের নেতারাই।
ঘটনা হল শুধু স্থানীয় বাসিন্দারাই নয়, রাস্তার বেহাল অবস্থার বিষয়ে ক্ষুব্ধ ব্লক প্রশাসনের একাংশও। ব্লকের এক পদস্থ কর্তার কথায়, “বিভিন্ন সময়ে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে হওয়া অবরোধ তুলতে গিয়ে আমাদের রাস্তা সংস্কারের আশ্বাস দিতে হয়েছে। তা ছাড়া আমাদের করার কিছু নেই। এরপরে অবরোধ হলে ব্লকের কর্তাব্যক্তিরা গিয়ে আশ্বাস দিলেও বাসিন্দার শুনবেন কি না সন্দেহ রয়েছে।” এই রাস্তাটির আমূল সংস্কারের জন্য জেলাশাসকের কাছে কয়েকবার লিখিতভাবে জানিয়েছে ব্লক প্রশাসন। বিডিও উৎপল ঘোষ বলেন, “পুরো একটি ব্লকের বাসিন্দাদের ভরসা এই রাস্তাটির দ্রুত আমূল সংস্কার প্রয়োজন। পঞ্চায়েত সমিতির তরফে কয়েকবার প্যাচ ওয়ার্ক করেছি আমরা। কিন্তু আর্থিক সমস্যায় এর বেশি করা সম্ভব নয় আমাদের পক্ষে। তাই আমূল সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার জানানো হয়েছে।” ব্লক সূত্রেই জানা গিয়েছে, জেলাপরিষদ দুই দফায় যে ৮৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে, তাতে রাস্তাটির মাত্র তিন-চার কিলোমিটার অংশ সংস্কার সম্ভব। বাকি এলাকা বেহাল থেকেই যাবে।
অন্য দিকে, এলাকায় শিল্পায়নের প্রসারে রাস্তাটির সংস্কার অবশ্যই প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রঘুনাথপুর ২ ব্লক এলাকায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব-২ গড়ে ওঠার কথা। ওই এলাকায় রয়েছে দু’টি পাইপ তৈরির কারখানা। রয়েছে একটি সিমেন্ট ও অ্যাসবেস্টস তৈরির কারখানা। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার কাজ শুরু করেছে দিশেরগড় পাওয়ার সাপ্লাই(ডিপিএস)। এই পরিস্থিতিতে মহকুমা সদর থেকে ব্লক সদরে যাওয়ার একটি মাত্র রাস্তার বেহালের জন্য শিল্প গড়ার আগে পরিকাঠামো গড়ার কাজটাই অবহেলিত বলে অভিযোগ উঠছে। পাইপ কারখানা দু’টির মালিক তথা কলকাতার বাসিন্দা শিল্পদ্যোগী অঞ্জন মজুমদার বলেন, “রাজ্য সরকার রঘুনাথপুর এলাকায় শিল্পায়নে বিশেষ নজর দিচ্ছে বলে শুনছি। কিন্তু শিল্প গড়ার আগে পরিকাঠামো তৈরি করা অন্যতম শর্ত। রঘুনাথপুর থেকে চেলিয়ামা যাওয়ার রাস্তাটি দেখলে মনে হবেই এখানে ন্যূনতম পরিকাঠামো গড়ার কাজ এখনও হয়নি।”
পাশাপাশি আরও অভিযোগ উঠছে, রঘুনাথপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতি সিপিএমের দখলে থাকায় ওই এলাকায় রাস্তা সংস্কারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দ্বিচারিতা করছে তৃণমূলের জেলাপরিষদ। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মনীষা ঘোষ বলেন, “জেলা পরিষদের সাধারণ সভায় বহুবার রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানানো হয়েছে। তখন শুনতে হয়েছে এর চাইতে আরও খারাপ রাস্তা জেলায় রয়েছে। তাই সন্দেহ হওয়াটা স্বাভাবিক। বিরোধী এলাকা হওয়াতে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি সংস্কারে গড়মসি করছে জেলাপরিষদ।” তবে জেলাপরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির আমূল সংস্কারের ক্ষেত্রে আর্থিক সমস্যা রয়েছে জেলাপরিষদের। তাই রাস্তাটি পূর্ত দফতরকে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে জেলাপরিষদ। সৃষ্টিধরবাবু বলেন, “রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকার ওই রাস্তটির দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আমরা পূর্ত দফতরকে ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy