সরকারি প্রকল্পের পশুর খাবার কোথায় গেল তা নিয়ে তোলপাড় ঝালদা ১ ব্লক।
সিপিএমের অভিযোগ, এঁড়ে বাছুরদের খাবারের কমবেশি ৮০০ প্যাকেট উপভোক্তাদের হাতে না গিয়ে মাঝপথেই উধাও হয়ে গিয়েছে। তাঁদের অভিযোগের তির কংগ্রেসের পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে। তদন্তের দাবিতে তারা জেলা প্রশাসনের বিভিন্নস্তরে অভিযোগ জানিয়েছেন। জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “পশু খাদ্য নিয়ে গরমিলের একটি অভিযোগ জমা পড়েছে। আমি প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরকে তদন্ত করে একটি রিপোর্ট জমা দিতে বলেছি।” তিনি জানান, কারও গাফিলতি প্রমাণিত হলে বা নিয়ম বর্হিভূত ভাবে কাজ হয়েছে জানা গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনায় ২০১২-‘১৩ আর্থিক বছরে জেলার দু’টি ব্লকে এঁড়ে বাছুর প্রতিপালনের একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পাইলট প্রকল্পের জন্য জেলার ঝালদা ১ ও মানবাজার ২ ব্লককে বাছা হয়। মূলত কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি বা চাষিদের এই প্রকল্পের উপভোক্তা হিসেবে বাছা হয়েছিল। ঝালদা ১ ব্লকে এ রকম উপভোক্তার সংখ্যা ৫১৬ জন। প্রতি উপভোক্তাকে দু’টি করে এঁড়ে বাছুর দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে গোয়াল তৈরি, বিমা, ওষুধপত্রের খরচ, খাবার খরচ ও আনুষঙ্গিক খরচও দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে প্রতি উপভোক্তা পিছু প্রায় ১০,৫০০ টাকা খরচ ধরা হয়।
জানা গিয়েছে, ঝালদা ১ ব্লক এলাকায় ২০১৩ সালে যখন উপভোক্তাদের কাছে এঁড়ে বাছুরগুলি পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল প্রথমবারের খাবারের প্যাকেটও সেই সময় তাঁদের দেওয়া হয়। সাধারণ খাবারের সঙ্গে ওই প্যাকেটের গুড়ো খাবার বাছুরদের মিশিয়ে দেওয়া হয়। মাস দেড়েক আগে ফের উপভোক্তাদের দ্বিতীয় পর্যায়ের খাবারের প্যাকেট দেওয়া হয় বলে ঝালদা ১ পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে দাবি করা হয়েছে। আর ওই খাবারের প্যাকেট বিলি নিয়েই বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
ঝালদা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সিপিএমের উজ্জ্বল চট্টরাজের দাবি, “বিভিন্ন গ্রাম থেকে খবর পাচ্ছি, বেশির ভাগ উপভোক্তাই দ্বিতীয় পর্যায়ে বাছুরের খাবারের প্যাকেট পাননি। পঞ্চায়েত সমিতি থেকেও এর কোনও সদুত্তর পাচ্ছি না। তাহলে এত পশুখাদ্য গেল কোথায়? জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছি।” সিপিএমের অভিযোগ, তাঁরা খোঁজ খবর নিয়ে যা জেনেছেন, তাতে প্রায় ৪০০ জন উপভোক্তা খাবারের প্যাকেট পাননি। অথচ তাঁদের দু’প্যাকেট করে ওই খাবার পাওয়ার কথা ছিল। অনেকে এও অভিযোগ করছেন, রেশনের মাল যেমন অনেক সময় ডিলার বা ডিস্টিবিউটর্সের গুদাম থেকে উধাও হয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে। অথচ উপভোক্তার নামে বিলি করা হয়েছে বলে দেখানো হয়। এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে। সম্প্রতি এই অভিযোগের তদন্ত দাবি করে উজ্জ্বলবাবুরা ঝালদা ১ বিডিওকে স্মারকলিপি দেন। সেখানে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি হয়েছে বলে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির নাম করে স্লোগানও দেওয়া হয়।
এই প্রকল্পের উপভোক্তা মাঠারি গ্রামের বাসিন্দা পেশায় চাষি রসরাজ মাহাতো বলেন, “আমি এই প্রকল্পের একজন উপভোক্তা। দু’টো এঁড়ে বাছুর পেয়েছিলাম। তখন দু’প্যাকেট খাবার দেওয়া হয়েছিল। তারপর আর খাবারের প্যাকেট পাইনি।” অর্দনা গ্রামের বাসিন্দা পেশায় ক্ষুদ্র চাষি অবিনাশ মাহাতোরও দাবি, তিনি দ্বিতীয়বার আর বাছুরের খাবার পাননি। তাঁর উভিযোগ, “খোঁজ নিয়ে জেনেছি আমার বাছুরের জন্য বরাদ্দ খাবারের প্যাকেট আমার নামে সই করে অন্য কেউ তুলে নিয়েছে। কিন্তু আমি পাইনি।”
কী ভাবে উপভোক্তাদের এই খাবারের প্যাকেট বিলি করা হয়েছে?
প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পের উপভোক্তা কারা হবেন তা ঠিক করেছিল পঞ্চায়েত সমিতি। বাছুরদের জন্য বারদ্দ দ্বিতীয় পর্যায়ের খাবারের প্যাকেটগুলি পঞ্চায়েত সমিতির গুদাম থেকেই বিলি করা হয়েছে। সেই কাজ করেছে পঞ্চায়েত সমিতিই। প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতর বিলি করেনি। কাজেই তারা বিলি করা নিয়ে গোলমালে জড়িত নয় বলে দাবি করেছে। ঝালদা ১ বিডিও মৃন্ময় দাস বলেন, “প্রকল্পে বাছুরদের জন্য বরাদ্দ খাবার বেশ কিছু উপভোক্তার কাছে পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ পেয়েছি। বর্তমানে ব্লক প্রাণী সম্পদ বিকাশ আধিকারিক এখানে নেই। তিনি ফিরলে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।” ঝালদা ১ ব্লক প্রাণী সম্পদ আধিকারিক রীতেশ বিশ্বাস টেলিফোনে বলেন, “আমরা ওই প্যাকেট বিলি করিনি। কারা প্যাকেটগুলি পেয়েছে তা তদন্ত করা হবে।”
কী বলছেন ঝালদা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের বুলু সিংহ মুড়া? তাঁর কথায়, “পশুখাদ্যের প্যাকেটগুলি বিলি করে দেওয়া হয়েছে। উপভোক্তারাই তা পেয়েছেন বলে আমি জানি। এখন অন্য অভিযোগ উঠেছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” কিন্তু চাষিদের কী রকম নথি দেখে খাবারের প্যাকেটগুলি দেওয়া হয়েছে? এর সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। এমনকী কারা এই বিলি ব্যবস্থায় ছিলেন তাও স্পষ্ট করে জানাতে পারেননি। জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা স্থানীয় বিধায়ক নেপাল মাহাতো বলেন, “অভিযোগের কথা শুনেছি। আমিও চাই প্রকৃত তদন্ত হোক। তদন্তে দলের কেউ জড়িত প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে জল গড়াতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই জেলাশাসকের নির্দেশে তদন্তে নেমেছে প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতর। জেলা প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের উপ-অধিকর্তা রূপম বড়ুয়া বলেন, “ঝালদা ১ ব্লকে পশু খাদ্য নিয়ে বেনিয়মের যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy