Advertisement
০৫ মে ২০২৪
খাতড়াকে ফের পুরসভা ঘোষণা

এ বার কথা কম, কাজ হোক, চায় আমজনতা

আশা-নিরাশার দোলাচলে কেটে গিয়েছে অনেকগুলি বছর। কিন্তু, আশ্বাস বাস্তবায়িত হয়নি। বুধবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার পরে নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছেন খাতড়ার মানুষ। তাঁদের বিশ্বাস, এ বার খাতড়া পুরসভার মর্যাদা পাবেই।

দেবব্রত দাস
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৪ ০০:৫৭
Share: Save:

আশা-নিরাশার দোলাচলে কেটে গিয়েছে অনেকগুলি বছর। কিন্তু, আশ্বাস বাস্তবায়িত হয়নি। বুধবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার পরে নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছেন খাতড়ার মানুষ। তাঁদের বিশ্বাস, এ বার খাতড়া পুরসভার মর্যাদা পাবেই।

অথচ, প্রায় চার বছর আগে বাম জমানায় বাঁকুড়া জেলার চতুর্থ পুরসভা হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল খাতড়াকে। তার পর দীর্ঘদিন কেটে গেলেও পুরসভা গঠনের প্রক্রিয়া আর শুরু হয়নি। এ দিন বিধানসভায় এক বিধায়কের প্রশ্নের উত্তরে খাতড়া-সহ রাজ্যে ২১টি পুরসভা হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এই ঘোষণা বাস্তবায়িত হলে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে প্রথম পুরসভা হবে খাতড়াই!

খাতড়া শহরের বাসিন্দাদের আশা, এ বার সত্যিই পুরসভা গঠনের প্রশাসনিক কাজ শুরু হবে। দক্ষিণ বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের এই জনপদ ১৯৮৬ সালের ২৭ মার্চ জেলার অতিরিক্ত মহকুমা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ১৯৯২ সালের ২ নভেম্বর জেলার তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ মহকুমায় উন্নীত হয় খাতড়া। ৯টি থানা, ৮টি ব্লক নিয়ে গঠিত এই মহকুমা। তবে, মহকুমা সদর হলেও এটি দীর্ঘদিন ধরে পঞ্চায়েত এলাকা হিসাবেই থেকে গিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে খাতড়াকে পুরসভা হিসাবে ঘোষণা করার দাবি থাকলেও তা কার্যকর হয়নি। শেষে, ২০১০ সালের ১৫ জুলাই বিগত বামফ্রন্ট সরকার খাতড়াকে পুরসভা হিসাবে ঘোষণা করে। কিন্তু, ঘোষণাই সার! কাজের কাজ একচুলও এগোয়নি। ঘোষণার বাইরে কিছুই করতে পারেনি তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকার।

এরই মধ্যে ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদল হয়েছে। তারও তিন বছর পরে ফের খাতড়াকে পুরসভা করার ঘোষণা হল। বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, পুরসভা গঠনের প্রক্রিয়া যথেষ্ট দীর্ঘ ও জটিল। খাতড়া পুরসভা কোন কোন এলাকা নিয়ে গঠিত হবে, তা এখনও স্থির হয়নি। হয়নি পুরসভা গঠনের ‘নোটিফিকেশন’ বা বিজ্ঞপ্তি জারি। বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয়ভারতী বলেন, “খাতড়াকে নতুন পুরসভার স্বীকৃতি দেওয়ার খবর পেয়েছি। তবে, বিজ্ঞপ্তি জারির নির্দেশ এখনও পাইনি।” খাতড়া মহকুমা প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, খাতড়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সমগ্র এলাকা, এবং খাতড়া ২, দহলা, ধানাড়া ও সুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কিছু এলাকা নিয়ে গঠিত হতে পারে খাতড়া পুরসভা। খাতড়ার মহকুমাশাসক শুভেন্দু বসু বলেন, “কোন কোন এলাকা পুরসভার অন্তর্ভুক্ত হবে, তা বিজ্ঞপ্তি জারির নির্দেশ এলে বোঝা যাবে।”

সাধারণ মানুষ অবশ্য এত জটিলতা বোঝেন না। তাই খবরটা জানার পরেই খাতড়া শহরে পুরসভা গঠন নিয়ে চর্চা হয়েছে। শহরবাসী সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষ, ব্যবসায়ী থেকে রাজনৈতিক নেতা— সকলের প্রত্যাশার পারদ চড়ছে এই পুরসভার ঘোষণায়। খাতড়া শহরের ভ্যানচালক হেলু বাউরি, কালিপদ বাউরিরা বললেন, “অনেক দিন ধরে শুনছি পুরসভা হচ্ছে। এ বার সত্যিই পুরসভা হলে আমাদের আয়ও বাড়বে।” শহরের বাসিন্দা শেখ আব্দুল সালাম, রাজু সূত্রধর বলেন, “পুরসভা হলে উন্নয়ন খাতে টাকা বেশি মিলবে। এলাকায় ভাল রাস্তা হবে, প্রতিটি পাড়ায় হাইড্রেন-সহ নানা উন্নয়ন কাজ হবে। সার্বিক ভাবে এলাকার অর্থনীতি অনেকটাই বদলাবে বলে আমাদের আশা।” আবার স্থানীয় ব্যবসায়ী সোমনাথ আশমোদকের কথায়, “পুরসভার ঘোষণা তো অনেক দিন আগে এক বার হয়েছিল। কিন্তু কাজ হয়নি। এ বার দ্রুত কাজ শুরু হলে আমরা সবাই উপকৃত হব।” খাতড়া ১ পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূলের অজয় বাউরি বলেন, “শহরে দিন দিন বসতি বাড়ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পঞ্চায়েতের বরাদ্দ টাকা নিকাশি নালা, রাস্তা সংস্কার আর রাস্তার আলো জ্বালাতেই খরচ হয়ে যাচ্ছে। পরিকল্পনা থাকলেও অর্থের অভাবে অনেক কাজ করা যাচ্ছে না। পুরসভা হলে এই সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে।”

নতুন করে খাতড়াকে পুরসভার ঘোষণায় রীতিমতো খুশি শাসকদলের নেতা-কর্মীরাও। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা জেলা তৃণমূলের কো-চেয়ারম্যান অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “বিগত বামফ্রন্ট সরকার শুধু চমক দেওয়ার জন্য খাতড়াকে পুরসভা ঘোষণা করলেও বাস্তবে তা রূপায়িত করার জন্য কিছুই করেনি। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গলমহলের মানুষের উন্নয়নের যে কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন, খাতড়াকে পুরসভার মর্যাদা দেওয়া তার অন্যতম। এর জন্য জঙ্গলমহলের মানুষের তরফে আমি মুখ্যমন্ত্রীকে শ্রদ্ধার সঙ্গে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।” খাতড়ার বাসিন্দা তথা জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শ্যামল সরকারের প্রতিক্রিয়া, “উন্নয়নে সিপিএম যা করতে পারেনি, আমাদের সরকার তাই করে দেখাচ্ছে। এর সব কৃতিত্ব আমাদের নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর। দ্রুত নোটিফিকেশনের জন্য আমরা চেষ্টা করব।”

সিপিএমের খাতড়া জোনাল কমিটির সম্পাদক সুশীল মুখোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, “বামফ্রন্ট সরকারের আমলে খাতড়া মহকুমায় উন্নীত হয়েছে। এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জল সরবরয়াহ থেকে রাস্তা নানা উন্নয়নমূলক কাজ আমাদের সরকারই করেছে। পুরসভার ঘোষণাও তো আমাদের সরকারের আমলেই হয়েছে।” সামনে আরও একটা পুরভোট আসছে, তাই দ্বিতীয়বার পুরসভার ঘোষণা করে চমক দিলেন মুখ্যমন্ত্রীএমনই কটাক্ষ সুশীলবাবুর। স্থানীয় বাসিন্দা, বিজেপি-র জেলা সম্পাদক অভিজিৎ দাস বলেন, “দু-দু’বার খাতড়াকে পুরসভা হিসাবে ঘোষণা করা হল। আগের সরকারও কিছু করেনি। এই সরকারও করেনি শুধু ঘোষণাটুকু ছাড়া। সত্যিই খাতড়া পুরসভা গঠনের প্রশাসনিক কাজ শুরু হলে আমরা সবাই খুশি হব। তবে, সেটা এখন কবে হবে সেটাই দেখার।”

বস্তুত, এটাই মনের কথা খাতড়ার আম জনতারও। রাজনৈতিক কচকচানি আর নয়, বিলম্বও নয়, ঘোষিত এই পুরসভার কাজ অবিলম্বে শুরু হোক- চাইছেন সাধারণ মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

khatra announcement of municipality debabrata das
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE