কবে কাটবে এই অচলাবস্থা? বৃহস্পতিবার মানভূম ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনের সামনে ছবিটি তুলেছেন সুজিত মাহাতো।
তাদের থাকার কথা ছিল ক্লাসঘরের ভিতরে। পড়াশোনা না করে সেই ছাত্রদের একাংশ স্কুলের দরজা আটকে বিক্ষোভ দেখাল। আর সেই বিক্ষোভের জেরে বাকি ছাত্রেরা স্কুলের দরজা থেকে ফেরত গেল। স্কুলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ছাত্রদের একাংশ জড়িয়ে পড়ায় বৃহস্পতিবারও পঠনপাঠন বন্ধ থাকল পুরুলিয়ার মানভূম ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনে। কাটল না অচলাবস্থাও।
দুই শিক্ষককে সাসপেন্ড করার জেরে বুধবার থেকেই ওই স্কুলে গোলমাল চলছে। এ দিন ওই দুই শিক্ষকের শাস্তি প্রত্যাহারের দাবিতে স্কুলের মূল ফটক আটকে বিক্ষোভ দেখায়। পরিচালন সমিতির সম্পাদক উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভও জানায় তারা। খবর পেয়ে স্কুলে যায় পুলিশ। শতাব্দী প্রাচীন এই স্কুলে শিক্ষকদের একাংশকে জুড়ে এই নজিরবিহীন ঘটনায় স্কুলের শৃঙ্খলা ব্যবস্থার হাল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকরা। এ দিকে সাসপেন্ড হওয়া দুই শিক্ষকের মদতে কিছু ছাত্র স্কুলের শিক্ষক ও করণিকের দু’টি মোটরবাইক ভাঙচুর করেছে বলে উত্তমবাবু পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন।
শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে স্কুলের দুই শিক্ষক ব্যোমকেশ দাস ও সোমনাথ দত্তকে সাসপেন্ড করেন কর্তৃপক্ষ। বুধবার স্কুলে এসে তাঁরা বিষয়টি জানতে পারার পরেই স্কুলে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। শিক্ষকদের একাংশ ক্লাস বয়কট করেন। ছাত্রদের একাংশও ক্লাস করতে রাজি হয়নি। সে দিনও কোনও ভাবে প্রথম পিরিয়ডের পরে পড়ুয়াদের ছুটি দেওয়া হয়। সেই অচলাবস্থা এ দিনও থাকায় অধিকাংশ অভিভাবক অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছেন। স্কুলের সামনে পড়ুয়াদের এ দিন অবস্থানের জেরে সামনের রাস্তায় কিছুক্ষণ যান চলাচলও ব্যাহত হয়।
স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ যাওয়ার পরে বিক্ষোভকারী ছাত্রেরা সরে গিয়েছে। কয়েকজন পড়ুয়ারা মাঠে ক্রিকেট খেলছিল। কিছু ছাত্র দোতলায় টিচার-ইনচার্জের অফিসের সামনে বারান্দায় ভিড় করে রয়েছে। তারা দাবি করে, “আমাদের দুই শিক্ষকের উপর থেকে শাস্তি প্রত্যাহার করতে হবে। টিচার-ইনচার্জকে অবিলম্বে সরিয়ে দিতে হবে।” একতলার বারান্দায় কয়েকজন শিক্ষক ইতস্তত ঘোরাঘুরি করছিলেন।
তাঁরা বলেন, “এ দিন পড়ুয়ারা ক্লাস করেনি। আমরা রয়েছি। কী করব বুঝতে পারছি না।” পরে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক রাজেশ দরিপা অভিযোগ করেন, “এ দিন স্কুলে যেতেই দরজায় আটকে দেওয়া হয়। বহিরাগত কিছু যুবক এবং তাঁদের সঙ্গে আমাদের কিছু ছাত্রও থাকতে পারে, তারা আমার দিকে তেড়ে আসে। তখন আমি সেখান থেকে সরে যাই।”
বিক্ষোভ চলার সময় সেখানে যান এবিটিএ-র এক প্রতিনিধিদল। সংগঠনের সহ-সভাপতি দিলীপ গোস্বামী বলেন, “আমরা এই বিক্ষোভে যোগ দিতে আসিনি। ছাত্রদের বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল বলে আমরা সেখান থেকে সরে গেলাম। শাস্তি প্রত্যাহারের দাবিতে টিচার ইনচার্জকে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলাম।” পরে তাঁরা জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে ওই দাবি জানান। এ দিন মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির পক্ষ থেকেও জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে দুই শিক্ষকের সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। দুই শিক্ষকই দু’টি সংগঠনের নেতা।
পরিচালন সমিতির সম্পাদক বলেন, “মোটরবাইক ভাঙচুরে দুই শিক্ষকের ইন্ধন থাকায় তাঁদের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি। বহিরাগত কিছু মানুষ পড়ুয়াদের ভুল বুঝিয়ে এই বিক্ষোভে উৎসাহ দিচ্ছেন। আমরা অভিভাবকদের অনুরোধ করছি, তাঁরা যেন স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রকৃত ঘটনা জেনে সন্তানদের আন্দোলন থেকে সরিয়ে আনেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy