Advertisement
০৫ মে ২০২৪
তৃণমূলের দ্বন্দ্ব আড়শায়

এ বার সভাপতির বিরুদ্ধেই অনাস্থা

রঘুনাথপুর ১ ব্লকের তৃণমূলের অন্দরের অনাস্থার ‘অসুখ’ ছড়াচ্ছে পুরুলিয়ার অন্যত্রও। কয়েক দিন আগেই পাশের ব্লক রঘুনাথপুর ২-এর নীলডি পঞ্চায়েতে তৃণমূলের উপ-প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছেন ওই পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান-সহ বাকি সদস্যেরা। এ বার জঙ্গলমহল এলাকায় একই ছবি। আড়শা পঞ্চায়েত সমিতির দলীয় সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলেন তৃণমূলেরই বাকি সদস্যদের একাংশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আড়শা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫৯
Share: Save:

রঘুনাথপুর ১ ব্লকের তৃণমূলের অন্দরের অনাস্থার ‘অসুখ’ ছড়াচ্ছে পুরুলিয়ার অন্যত্রও।

কয়েক দিন আগেই পাশের ব্লক রঘুনাথপুর ২-এর নীলডি পঞ্চায়েতে তৃণমূলের উপ-প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছেন ওই পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান-সহ বাকি সদস্যেরা। এ বার জঙ্গলমহল এলাকায় একই ছবি। আড়শা পঞ্চায়েত সমিতির দলীয় সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলেন তৃণমূলেরই বাকি সদস্যদের একাংশ। অনাস্থা প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লক ও কংগ্রসের দুই সদস্যও। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সভাপতি বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত সমিতির আট জন সদস্যের আনা অনাস্থা প্রস্তাব মহকুমাশাসকের (পুরুলিয়া পশ্চিম) কাছে জমা পড়েছে। অনাস্থা যাঁরা এনেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের পাঁচ কর্মাধ্যক্ষ্যও। মহকুমাশাসক নিমাইচাঁদ হালদার বলেন, “বিধি মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তলবি সভা ডাকা হবে।” রঘুনাথপুরের মতো আড়শাতেও অনাস্থা আসার ক্ষেত্রে শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই দায়ী বলে তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে।

পঞ্চায়েত নির্বাচনে আড়শা পঞ্চায়েত সমিতির ২৩টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ১৩টি। সিপিএম পায় ৮টি। একটি করে আসনে জিতেছিল ফব এবং কংগ্রেস। সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন তুষ্টরানি রাজোয়াড়। কিন্তু, বোর্ড গঠনের দেড় বছরের মধ্যেই সমিতি পরিচালনা নিয়ে দলীয় কোন্দল বেড়ে যাওয়ায় অনাস্থা এসেছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত সমিতি চালানোর ক্ষেত্রে কার্যত শেষ কথা বলতেন আড়শার ব্লক তৃণমূল সভাপতি আনন্দ মাহাতো। আর এই বিষয়টিতেই আপত্তি রয়েছে দলের একাংশের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার কথায়, “যে ভাবে আনন্দবাবু ও তাঁর অনুগামীরা সমিতি পরিচালনা করছিলেন, তা নিয়ে দলের অন্দরেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।” আর এক তৃণমূল নেতার অভিযোগ, “সমিতির সভাপতিকে সামনে রেখে আসলে আনন্দবাবুই পঞ্চায়েত সমিতি পরিচালনা করেন। বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কর্মাধ্যক্ষ-সহ অন্য সদস্যদের মতামতই নেওয়া হয় না। কার্যত একতরফা ভাবে সমিতি পরিচালনা করেন উনি। ফলে, এলাকার উন্নয়নে কোথায় কত টাকা খরচ হচ্ছে, তা জানতেই পারেন না কর্মাধ্যক্ষেরা। পুরো ঘটনায় এলাকায় দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি হচ্ছে।”

আড়শা পঞ্চায়েত সমিতি পরিচালনা নিয়ে আনন্দবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ আগেই জেলার নেতৃত্বকে জানানো হয়েছিল বলে দাবি অনাস্থা আনা তৃণমূল সদস্যদের একাংশের। তাঁদের ক্ষোভ, দলের নেতারা স্থানীয় ভাবে বসে সমস্যা মেটানোর কোনও চেষ্টাই করেননি। ফলে, দলের ভিতরের দ্বন্দ্ব ক্রমেই বেড়েছে। ঘটনা হল, জেলার রাজনীতিতে আনন্দবাবু জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর ঘনিষ্ঠ হিসাবেই পরিচিত। এ বার অনাস্থা আনার পিছনে শান্তিরামবাবুর বিরোধী গোষ্ঠীর প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে বলেও দল সূত্রে জানা যাচ্ছে।

সব মিলিয়ে রঘুনাথপুরের ক্ষেত্রে অনাস্থা রুখতে কিছুটা কড়া অবস্থান নিলেও আড়শার ঘটনা ফের অস্বস্তিতে ফেলেছে জেলা তৃণমূল নেতাদের। অনাস্থা ও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানতে চাওয়া হলে, ‘মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি’ জানিয়ে বুধবার ফোন কেটে দেন আনন্দ মাহাতো। সভাপতি তুষ্টরানিদেবী অবশ্য মেনে নিয়েছেন আনন্দবাবুর ‘কথামতো’-ই তিনি সমিতির কাজ চালান। তাঁর কথায়, “আমি আনন্দবাবুর পরামর্শেই সমিতির কাজ পরিচালনা করছিলাম। আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা এসেছে জানি। এ ব্যাপারই দলই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে।”

তবে, দল সূত্রের খবর, যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করতে এ দিনই পুরুলিয়ায় ডাকা হয়েছিল সব ব্লকের সভাপতিদের। পরে আড়শা নিয়ে আলাদা করে আলোচনা হয়েছে। জেলা সভাপতি শান্তিরামবাবু বলেন, “আড়শার বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তবে যদি কেউ বলে থাকে, আগে পঞ্চায়েত সমিতি পরিচালনা নিয়ে দলের স্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমাদের কাছে জানিয়েছে, তাহলে ভুল কথা বলছে।” একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, দলের নীতির ঊর্ধ্বে কেউ নয়। অভিযোগ উঠলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। “কিন্তু দলের নির্দেশ অমান্য করে অনাস্থা আনা বরদাস্ত করা হবে না।”—মন্তব্য শান্তিরামবাবুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE