Advertisement
E-Paper

কাজ নেই, ঘর ছাড়ছে চাকলতা

গ্রাম ছাড়ছেন ওঁরা। নিজেদের জমি নেই। এতদিন ভরসা ছিল ১০০ দিনের কাজ। কিন্তু সেই কাজও মাসখানেক ধরে বন্ধ। আগের কাজের মজুরিও অনেকে পাননি। তাই এ বার বেশি সংখ্যায় অন্যত্র খাটতে গেল হুড়ার দলদলি পঞ্চায়েতের চাকলতা গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবার। রবিবার যে দলটি বাক্স-প্যাঁটরা কোলে, মাথায় নিয়ে গ্রাম ছাড়ল তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূলের দলদলি পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য রামপদ বাউরিও। রবিবার দুপুরে ঘরের দরজায় তালা ঝোলাচ্ছিলেন রামপদ বাউরি।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:২২
ভিন্ জেলায় কাজের খোঁজে হুড়ার চাকলতার অনেক বাসিন্দা বেড়িয়ে পড়লেন। রবিবার। ছবি: প্রদীপ মাহাতো

ভিন্ জেলায় কাজের খোঁজে হুড়ার চাকলতার অনেক বাসিন্দা বেড়িয়ে পড়লেন। রবিবার। ছবি: প্রদীপ মাহাতো

গ্রাম ছাড়ছেন ওঁরা।

নিজেদের জমি নেই। এতদিন ভরসা ছিল ১০০ দিনের কাজ। কিন্তু সেই কাজও মাসখানেক ধরে বন্ধ। আগের কাজের মজুরিও অনেকে পাননি।

তাই এ বার বেশি সংখ্যায় অন্যত্র খাটতে গেল হুড়ার দলদলি পঞ্চায়েতের চাকলতা গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবার।

রবিবার যে দলটি বাক্স-প্যাঁটরা কোলে, মাথায় নিয়ে গ্রাম ছাড়ল তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূলের দলদলি পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য রামপদ বাউরিও। রবিবার দুপুরে ঘরের দরজায় তালা ঝোলাচ্ছিলেন রামপদ বাউরি। তাঁর স্ত্রী লতা বাউরি পড়শিদের বলেন, “আমাদের ঘরটা একটু দেখো। ফিরতে তো মাস ফুরিয়ে যাবে।” পড়শিদের কাছ থেকে জবাব এল, “যে ক’দিন আছি দেখব। কিছু দিন পরে আমাদেরও যেতে হবে।” বাস রাস্তার দিকে হেঁটে যাওয়ার সময় রামপদ বলেন, “গ্রামে কাজ নেই। দক্ষিণ বাঁকুড়ার একটি ইটভাটায় বেশ কিছুদিন ধরে কাজ করছি। দাদা মারা যাওয়ায় তাঁর পারলৌকিক কাজে ফিরেছিলাম। স্ত্রী, ছেলে, বৌমা সবাইকে নিয়েই যাচ্ছি।”

এলাকার বাসিন্দারাও জানাচ্ছেন, একশো দিনের কাজ না পেয়েই তাঁরা এ বার বেশি সংখ্যায় অন্যত্র কাজ করতে যাচ্ছেন।

জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “এর মধ্যেই জেলায় ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে গড়ে ৩০ দিন কাজ দেওয়া গিয়েছে। তবে কাজ না পেয়ে লোকে গ্রাম ছাড়ছেন বলে শুনিনি। ওই এলাকার পঞ্চায়েতকে বলব বিডিও-র সঙ্গে কথা বলে আরও বেশি করে লোককে কাজ দিতে।”

কিন্তু কাজ কবে মিলবে সে ভরসায় তো পেটে খিদে নিয়ে ঘরে বসে থাকা যায় না। বলছেন বাসিন্দারাই। কালিদাস বাউরির কথায়, “আট মাস আগে পঞ্চায়েত থেকে জমি সমান করার কাজ পেয়েছিলাম। তারপর থেকে একশো দিনের প্রকল্পে আর কোনও কাজ পাইনি। বাধ্য হয়েই বাইরে যেতে হবে।” জলধর বাউরি জানান, “আট মাস আগে তিনদিন মোটে কাজ পাই। তার মজুরি পেয়েছি অনেকদিন পরে। পঞ্চায়েতের সদস্যকে কাজ চাইতে গেলে তিনি বলছেন উপরে যাও। ছেঁড়া লুঙ্গি পরে ব্লক অফিসে কি ঢুকতে দেবে?” তাঁদের অভিযোগ, কাজ প্রায় বন্ধ। কিছু জায়গায় মেশিনে মাটি কাটা হচ্ছে।

বস্তুত, গ্রামে কাজ নেই বলে পুজোর পরেই বাইরে ইটভাটায় কাজ করতে যান গৌতম বাউরি। তিনি বলেন, “মায়ের অসুস্থতার জন্য সম্প্রতি গ্রামে ফিরেছি। বছর দশেকের বড় ছেলেকে তার মামারবাড়িতে রেখে পড়াচ্ছি। কিন্তু উপায় না থাকায় ছোট ছেলেকে নিয়ে ইটভাটার ঘুপচি ঘরে থাকতে হচ্ছে।” এই পাড়ারই বাসিন্দা রবনী বাউরি ক্ষোভ উগরে বলেন, “আমাদের সবারই তো জবকার্ড রয়েছে। কিন্তু কার্ড থাকলে তো হবে না। কাজ কে দিচ্ছে? তাই ঘর ছেড়ে বাইরে পড়ে থাকতে হচ্ছে।’’ পোঁটলা-পুঁটলি নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন পান্ডব বাউরি। সঙ্গে স্ত্রী পুতুনা বাউরি। তাঁদের গন্তব্য বাঁকুড়ার অম্বিকানগরের ইটভাটায়। পান্ডবের কথায়, “খুবই অল্প জমি রয়েছে। এ বার বৃষ্টি হয়নি বলে চাষ হয়নি। আর পঞ্চায়েতেরও কাজ নেই। পেট ভরাতে বাইরে কাজ করতে যাচ্ছি।”

এই গ্রামের অদূরেই লালপুর টেলিকম ময়দানে গত জুলাইয়ের শেষে প্রশাসনিক বৈঠকের পর সভা করে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সভা থেকে তিনি জানিয়েছিলেন, গ্রামের মানুষের জন্য এলাকাতেই কাজের বন্দোবস্ত করতে হবে। কিন্তু তার পরেও এই অবস্থা কেন? তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত সদস্য রঞ্জন বাউরি বলেন, “আসলে এ বার বৃষ্টির জন্য চাষ মোটেই হয়নি। গ্রামেও অন্য কোনও কাজ নেই। তাই বাধ্য হয়েই মানুষজন বাইরে খাটতে যাচ্ছেন। গ্রামের এক হাজারেরও বেশি ভোটারের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ এখন জনমজুরের কাজে বাইরে রয়েছেন।” ১০০ দিনের কাজ কেন দেওয়া যায়নি? সদুত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, “যতটুকু সম্ভব কাজ দিয়েছি, আবার কাজ দিতে পঞ্চায়েতকে বলব।” আর পঞ্চায়েত প্রধান প্রভাসচন্দ্র বাউরি বলেন, “একশো দিনের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়াতেই এই সমস্যা। শুধু এই গ্রামই নয় আশপাশের একাধিক গ্রাম থেকেই এ ভাবে কাজের জন্য বাইরে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।”

প্রশাসনের আধিকারিকরা কিন্তু জানাচ্ছেন, একশো দিনের প্রকল্পের কাজ মোটেই বন্ধ হয়নি। জেলাশাসক বলেন, “মজুরি দেওয়ার পদ্ধতি কিছুটা বদল হয়েছে। সে জন্য মজুরি দেওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে অনেক শ্রমিকই তাঁদের বকেয়া মজুরি পেয়ে গিয়েছেন।”

হুড়ার বিডিও সুব্রত পালিত জানান, তাঁর ব্লকে গড়ে ২০-২২ দিন কাজ হয়েছে। তবে মাস তিনেক ধরে অনেক এলাকাতেই ওই প্রকল্পে কাজ বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, “প্রযুক্তিগত সমস্যা থাকায় এই অসুবিধা হচ্ছে। তবে এ সব কাটানোর চেষ্টা চলছে।”

hura prasanta pal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy