মল্লরাজাদের চালু করা ঝাঁপান উত্সবের সেই রমরমা নেই। কিন্তু উত্সাহে ভাটা পড়েনি। রবিবার বিষ্ণুপুরের পথে সাপ নিয়ে সাঁপুড়েদের কসরত্ দেখতে ভিড় জমালেন বাসিন্দারা। ছবিটি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।
বাঘের পিঠে চড়ে বসেছেন সাপুড়ে। তাঁর হাতে, গলায় মাথা দোলাচ্ছে খরিশ, চন্দ্রবোড়া।
রবিবার বিষ্ণুপুরের পথে গোরুরগাড়িতে মাটির তৈরি বাঘের পিঠে চড়ে সাপের খেলা দেখালেন সাপুড়েরা। মোবাইলে, ডিজিটাল ক্যামেরায় খচাখচ ছবি তুলে যাচ্ছিলেন তরুণ থেকে মাঝবয়সিরা। বছরের পর বছর ঝাঁপান উত্সবে সাপুড়েদের এই খেলা দেখতে বিষ্ণুপুরবাসী অভ্যস্ত হয়ে পড়লেও, উদ্দীপনা কিছুমাত্র কমেনি। রবিবার সাপুড়ে যখন ঝাঁপি খুলে গলা ছেড়েছেন ‘মাগো বিষহরি, তোমায় স্মরি’, তখন বাগীশ পাড়া, শাঁখারিবাজারে রাস্তার দু’পাশে মানুষের ভিড় থিকথিক করছে। সাপুড়েদের মিছিল চলল রাজদরবার পর্যন্ত। তাঁদের পিছু পিছু দৌড়ল ছেলেবুড়োর দল। জেলার বিভিন্ন এলাকা তো বটেই, বাইরে থেকেও বহু মানুষ বিষ্ণুপুরের এসেছিলেন। সাপুড়েদের বুক পকেটে সানন্দে কেউ-কেউ সেঁটে দিয়েছেন ১০-২০ টাকা।
বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ সাপুড়েরা যাত্রা শুরু করেছিলেন। মাইকে বাজছিল বাংলা ও হিন্দি সিনেমার গান। শোভাযাত্রা যখন রাজদরবারের মাঠে এসে থামল সূর্য তখন অস্তাচলে। জেনারেটরের নানা রঙের মায়াবী আলোয় শুরু হল নতুন নতুন খেলা। খেলা দেখাতে শুরু করলেন উত্তম পাল ও গোপাল ধীবররা। জিভে, কানের লতিতে, সাপ ঝুলিয়ে দেখাতে লাগলেন কেরামতি।
সেই সাপ জ্যান্ত...। বিষ্ণুপুরের খাদাইতলায় নাগপঞ্চমী
উপলক্ষে আয়োজিত সাপ মেলায় সজল চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ তথা বিষ্ণুপুর মিউজিয়ামের সচিব চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত বলেন, “আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে এই এলাকায় অনেকগুলি মনসা পুজো হয়। সবই সাপের ছোবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। সপ্তদশ শতকে শ্রাবণ সংক্রান্তিতে বিষ্ণুপুরে মল্লরাজারা মন্ত্রবলে সাপকে বশে আনার খেলা দেখানোর এই উত্সব শুরু করেন। রাজদরবারে উত্সব স্থলে গুণীন সাপুড়েদের উপঢৌকনও দিতেন তাঁরা। এখন রাজসমাদর সে ভাবে না জুটলেও ঐতিহ্যের টানেই আসেন সাপুড়েরা।” উত্সবটিকে এখনও টিম টিম করে টিকিয়ে রেখেছেন শাঁখারিবাজার দশের কালীমাতা ঝাঁপান উত্সব কমিটি ও বাগীশ পাড়া মুনলাইট ক্লাব। দশের কালীমাতা ঝাঁপান কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বিষ্ণুপুর পুরসভা ও বিষ্ণুপুর মহকুমা তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের সামান্য আর্থিক সহযোগিতায় বহু কষ্টে এই লোক উত্সবটিকে তাঁরা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
হেতিয়া গ্রাম থেকে খেলা দেখাতে আসা উত্তম পাল, লালমোহন রায় বলেন, “আমাদের পূর্ব পুরুষরা আসতেন। সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরাও প্রতি বছর আসার চেষ্টা করি। টাকার জন্য নয়, হাজার হাজার মানুষের সামনে খেলা দেখিয়ে আনন্দ পাওয়া যায় এখানে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy