Advertisement
E-Paper

কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের সব শাখায় এ বার বন্ধ লেনদেনও

বিপুল খেলাপি ঋণ অনাদায়ী থাকায় ২০০৭ সালেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল নতুন ঋণদান। ২০১২ সাল থেকে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। এ বার সেই বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের ১৭টি শাখাতেই সব রকমের লেনদেন বন্ধের নির্দেশ দিল ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৪ ০০:২৩
সমবায় ব্যাঙ্কে লেনদেন বন্ধ হওয়ার খবর চাউর হতেই চিন্তিত আমানতকারীরা ভিড় জমাচ্ছেন সমবায় সমিতিতেও। টাকা অমিল থাকায় পূর্ব দুবরাজপুর সমবায় সমিতিতে বিক্ষোভ।—নিজস্ব চিত্র।

সমবায় ব্যাঙ্কে লেনদেন বন্ধ হওয়ার খবর চাউর হতেই চিন্তিত আমানতকারীরা ভিড় জমাচ্ছেন সমবায় সমিতিতেও। টাকা অমিল থাকায় পূর্ব দুবরাজপুর সমবায় সমিতিতে বিক্ষোভ।—নিজস্ব চিত্র।

বিপুল খেলাপি ঋণ অনাদায়ী থাকায় ২০০৭ সালেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল নতুন ঋণদান। ২০১২ সাল থেকে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। এ বার সেই বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের ১৭টি শাখাতেই সব রকমের লেনদেন বন্ধের নির্দেশ দিল ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। শনিবারই কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের প্রতিটি শাখায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওই নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার জেরে বেকায়দায় পড়লেন ব্যাঙ্কের আড়াই লক্ষেরও বেশি আমানতকারী। ব্যাঙ্কে তাঁদের গচ্ছিত সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার ভবিষ্যত্‌ কী, তা নিয়ে ঘোর আশঙ্কায় ওই আমানতকারীরা। ওই ব্যাঙ্কের জেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম অবশ্য তাঁদের চিন্তামুক্ত হতেই পরামর্শ দিচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য, “আমানতকারীদের দুশ্চিন্তা করার কোনও প্রয়োজন নেই। আপনারা একটু ধৈর্য ধরুন। আপনাদের সব টাকাই সুরক্ষিত রয়েছে। এইু সমবায় ব্যাঙ্ক রাজ্য সরকারের ব্যাঙ্ক। আমরা সব দিক থেকেই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি। আশা করছি, দিন কয়েকের মধ্যেই সমস্যা মিটে যাবে।”

কিন্তু সমস্যাটা ঠিক কোথায়?

ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, প্রায় ৬২ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়ায় ২০০৭ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ‘ব্যাঙ্কিং রেগুলেশন অ্যাক্ট ১১/১’ আরোপ করে বীরভূম জেলার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের সব ক’টি শাখায় ঋণদানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম হল, কোনও ঋণ তথা অনুত্‌পাদক সম্পদের (এনপিএ) পরিমাণ ৫ শতাংশের বেশি হওয়া চলবে না। কিন্তু বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক যে পরিমাণ ঋণ দিয়েছিল, তার ৫২ শতাংশই খেলাপি বা অনুত্‌পাদক সম্পদে পরিণত হয়। সে জন্যই এমন কড়া পদক্ষেপ করা শুরু হয়েছিল। ব্যাঙ্কেরই একটি সূত্রের খবর, বহু বছর ধরে এমন সব ঋণ দেওয়া হয়েছিল যার অধিকাংশই আদায় করা হয়নি। ব্যাঙ্কিং আইনে এনপিএ হয়ে যাওয়া টাকার অঙ্কের পুরোটাই ক্ষতি হিসেবে দেখানো হয়। ২০০৭ সালের ৩১ মার্চ জমা পড়ার পর দেখা যায় এনপিএ হওয়া টাকার অঙ্ক ব্যাঙ্কের মোট সম্পত্তির একটা বড় অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই প্রথমে ঋণদানে নিষেধাজ্ঞা এবং পরিস্থিতি না বদলানোয় পাঁচ বছর পরে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলাতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সমস্যার সূত্রপাত সেই তখন থেকেই। ‘রি-ফিনান্স’ ও নতুন গ্রাহক না পাওয়ায় ব্যাঙ্কের টাকার জোগান কমে যায়। ফান্ডের অভাবে মার খেতে থাকে সমবায় ব্যাঙ্কের উপর নির্ভরশীল বহু ‘এমপ্লোয়িজ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি’গুলিকে। অ্যাকাউন্ট খুলতে না পেরে সমস্যায় পড়ে বহু স্বনির্ভর গোষ্ঠীও।

২০১২ সালের পর থেকে অনাদায়ী ঋণের মধ্যে ২০ কোটি টাকা আদায় করতে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ সমর্থ হলেও গত ১৫ মে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর (ইর্স্টান রিজিওন) দীপালি পন্ত যোশীর সই করা একটি নির্দেশনামা বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের কর্তাদের হাতে পৌঁছয়। যাতে লেখা, এখন থেকে এই ব্যাঙ্কে সব ধরনের লেনদেন বন্ধ করতে হবে। মাথায় হাত পড়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের। নির্দেশ কার্যকর করলেও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই পদক্ষেপে চূড়ান্ত হতাশ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম। তাঁর ক্ষোভ, “যে সময় বেহিসেবী ঋণ দিয়ে ব্যাঙ্ককে এমন পরিস্থিতির মুখে দাঁড় করানো হয়েছে, সে সময় ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির দায়িত্বে ছিল বামেরা। তখন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তেমন কড়া পদক্ষেপ করেনি। ৫ বছরেও অনাদায়ী ঋণ আদায়ের চেষ্টা না করা সত্ত্বেও কোনও অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি হল তখন, যখন আমরা সবে পরিচালন সমিতির দায়িত্বে এসেছি। তা সত্ত্বেও সচেতনতা শিরির করে, সুদের একটা বড় অংশ মুকুব করে, বা আইনগত ব্যবস্থা-সহ সব ধরনের চেষ্টা করে গত কয়েক বছরে ২০ কোটি টাকারও বেশি খেলাপি ঋণ আদায় করেছি। এ ছাড়া কৃষি সমবায় সমিতিগুলি ৯ লক্ষ টাকার শেয়ার ব্যাঙ্কে দিয়েছে। আরও ৯ কোটি টাকার শেয়ার দেওয়ার ব্যাপারে লিখিত সম্মতিও দিয়েছে।” ব্যাঙ্কের এই ঘুরে দাঁড়ানোর সময়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই নির্দেশিকা সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিল বলেই তাঁর মত। তাঁর আরও দাবি, কী ভাবে এই অনাদায়ী ঋণ পরিমাণ মিটিয়ে দেওয়া যায়, এ নিয়ে রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী, মত্‌স্য মন্ত্রী, সচিব ও ব্যাঙ্কের উচ্চ পদস্থ কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গে গত ফেব্রুয়ারিতে বৈঠক হয়েছে। সেখানে ৪০ কোটি টাকা অর্থ দফতর থেকে দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভোট এসে পড়ায় সেই টাকা মঞ্জুরির প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়। তার পরেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই নির্দেশ।

বোলপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্য সরকারের মত্‌স্য মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “বিগত কেন্দ্রীয় সরকারের বিমাতৃসূলভ আচরণের প্রভাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশেই আমরা এই শাস্তি পাচ্ছি। এর জন্য আমরা দায়ী নই। বাম আমলেই চূড়ান্ত অব্যবস্থার ফলে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক সমস্যায় পড়েছিল। সেই অবস্থা থেকে ব্যাঙ্ককে টেনে তুলতে সব ধরনের চেষ্টা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেও করা হচ্ছে। গ্রাহকদের গচ্ছিত অর্থ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। সবার টাকা সুরক্ষিত থাকবে। সমস্যাও মিটবে।” ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের সিইও অজয় রাম সমাধান সূত্র বের করতে কলকাতায় গিয়েছেন।

central cooperative bank dayal sengupta siuri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy