Advertisement
১৯ জুন ২০২৪
কাঁচামালের অভাবকে দায়ী করছে মালিকপক্ষ

কারখানা বন্ধে অনিশ্চয়তায় শতাধিক শ্রমিক

মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগেই বন্ধ হয়ে গেল পুরুলিয়ার একটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানা। আড়শা ব্লকের কৌরাং গ্রামের অদূরে পুরুলিয়া-জামশেদপুর ৩২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারের ওই কারখানার গেটে আপাতত ‘লে-অফ’ নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর সেই নোটিস আদতে পাকাপাকি ভাবে কারখানা বন্ধের প্রথম ধাপ বলেই মনে করছেন শ্রমিকেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের আগাম কিছু না জানিয়েই বৃহস্পতিবার লে-অফ (অর্থাৎ, এখন শ্রমিকদের কাজ দেওয়া যাচ্ছে না) নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।

(বাঁ দিক থেকে) আড়শার স্পঞ্জ আয়রন কারখানার গেটে সাঁটা ‘লে-অফ’ নোটিস। তা দেখে শুক্রবার উদ্বিগ্ন শ্রমিকরা। ছবি:সুজিত মাহাতো

(বাঁ দিক থেকে) আড়শার স্পঞ্জ আয়রন কারখানার গেটে সাঁটা ‘লে-অফ’ নোটিস। তা দেখে শুক্রবার উদ্বিগ্ন শ্রমিকরা। ছবি:সুজিত মাহাতো

নিজস্ব সংবাদদাতা
আড়শা শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:২৩
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগেই বন্ধ হয়ে গেল পুরুলিয়ার একটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানা। আড়শা ব্লকের কৌরাং গ্রামের অদূরে পুরুলিয়া-জামশেদপুর ৩২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারের ওই কারখানার গেটে আপাতত ‘লে-অফ’ নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আর সেই নোটিস আদতে পাকাপাকি ভাবে কারখানা বন্ধের প্রথম ধাপ বলেই মনে করছেন শ্রমিকেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের আগাম কিছু না জানিয়েই বৃহস্পতিবার লে-অফ (অর্থাৎ, এখন শ্রমিকদের কাজ দেওয়া যাচ্ছে না) নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আচমকা কারখানার গেটে তালা পড়ে যাওয়ায় কারখানার শতাধিক শ্রমিকের ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। ওই নোটিসে কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে দাবি করা হয়েছে, কাঁচামালের অভাবে দু’মাস ধরে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ। এই অবস্থায় কারখানার শ্রমিকদের বেতন দেওয়া আর সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুতের বিল মেটানোর মতো আর্থিক সঙ্গতিও কারখানা কর্তৃপক্ষের নেই বলে দাবি করা হয়েছে নোটিসে। জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো এবং জেলার ডেপুটি শ্রম কমিশনারকে উদ্দেশ করে লেখা নোটিসে কর্মীদের লে-অফ করার আবেদন জানানো হয়েছে। আপাতত তাই কারখানা বন্ধ করা হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে।

কৌরাং গ্রামের অদূরে বিজয়া স্পঞ্জ অ্যান্ড ইস্পাত প্রাইভেট লিমিটেড নামের এই কারখানায় উৎপাদন শুরু হয় ২০০৫ সালে। তার পর কারখানাটির একাধিক বার মালিকানা বদল হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে কারখানাটিতে উৎপাদন হচ্ছিল। সেই কারখানার গেটে বৃহস্পতিবার লে-অফের নোটিস দেখে অবাকই হয়ে যান শ্রমিকেরা। ওই দিনই কারখানার তৃণমূল প্রভাবিত কর্মী সংগঠনের হাতে ওই নোটিসের কপি ধরিয়ে দেওয়া হয়। জেলা আইএনটিটিইউসি-র মুখপাত্র প্রফুল্ল মাহাতো বলেন, “বৃহস্পতিবার হঠাৎই ওই নোটিস আমাদের দেওয়া হয়েছে। তার আগে পর্যন্ত এ বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ কোনও কিছু জানায়নি। যদিও নোটিসে ভবিষ্যতে তাঁরা কারখানা খুলবেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।”

এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেই শুক্রবার শ্রমিকেরা কারখানার গেটে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান। কী ভাবে তাঁদের সংসার চলবে, এখন সেই আতঙ্কই চেপে বসেছে শ্রমিকদের মনে। কারখানার কর্মী সংগঠনের সম্পাদক রণজিৎ মাহাতো জানান, কারখানায় ৭০ জন শ্রমিক ও ৪০ জন টেকনিক্যাল কর্মী রয়েছেন। এ ছাড়া কাঁচামাল যখন আসে, তা নামানোর জন্য আরও ৪২ জন শ্রমিক কাজ করেন। তিনি বলেন, “গত ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে। তার পর থেকেই কারখানা বন্ধ। কর্মীরা ডিসেম্বরের মাইনে পেলেও জানুয়ারির মাইনে এখনও পাননি। এই অবস্থায় কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে এত জন শ্রমিকের ভবিষ্যত চরম অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।”

কারখানার মালিক নিশান্ত দূতের দাবি, কারখানা চালাতে সমস্যা হওয়ার কারণেই তা বন্ধ করে দিতে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন। প্রথমত, কারখানা চালানোর জন্য যে কাঁচামাল লাগে, সেই লৌহ আকরিক আসে ওড়িশা থেকে। সেখানে খনি বন্ধ রয়েছে বেশ কয়েক মাস ধরে। ফলে কাঁচামাল মিলছে না। তা ছাড়া, তাঁদের কারখানায় উৎপাদনের তুলনায় শ্রমিকের সংখ্যাও কিছু বেশি। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কারখানা চালানো যাচ্ছে না বলে তাঁর দাবি। নিশান্তবাবু আরও বলেন, ‘‘কাঁচামালের জোগানের অপ্রতুলতা রাজ্যওয়ারি সমস্যা। আমাদের রাজ্য সংগঠনের পক্ষ থেকে এই সমস্যার কথা সরকারকে জানানো হয়েছে। এখন সরকার যদি এই সমস্যা নিয়ে ওড়িশার সঙ্গে বৈঠক করে, তাহলে সমাধান মিলতে পারে।” কারখানাটির আর এক মালিক বিনোদ কুমার দেবুকা বলেন, “ঝাড়খণ্ডের তুলনায় এ রাজ্যে বিদ্যুতের বিলও বেশি।”

কাঁচামাল পাওয়ার সমস্যাকে কারখানা বন্ধের মূল কারণ হিসাবে মালিকপক্ষ দাবি করলেও শ্রমিকরা তা মানতে নারাজ। রণজিৎ মাহাতো, দিলীপ গোস্বামী, শুকদেব মাহাতোর মতো শ্রমিকদের কথায়, “কাঁচামালের অভাবের বিষয়টিকে অজুহাত হিসেবে খাড়া করা হচ্ছে। কই অন্য কারখানাগুলোর তো ঝাঁপ বন্ধ হচ্ছে না! কারখানায় এই মুহূর্তে কিছু কাঁচামাল রয়েছে, যা ব্যবহার করে বেশ কয়েকদিন কারখানা চালানো যাবে।” রণজিৎবাবুর ক্ষোভ, কারখানায় কর্মীর সংখ্যা বেশি বলে মালিকপক্ষ বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু, তা ঠিক নয়। তিনি বলেন, “২০০৫ থেকে কারখানা এই সংখ্যক শ্রমিক নিয়েই দৈনিক ১০০ টন করে উৎপাদন করছে। আর এখন এই যুক্তি শুনতে হচ্ছে।”

ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরুলিয়া সফরে আসতে পারেন। তার আগে একটি কারখানার লে-অফ নোটিস অস্বস্তি বাড়িয়েছে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের। প্রফুল্লবাবু বলেন, “যে ভাবে মালিকপক্ষ কাঁচামাল পাওয়ার অসুবিধার যুক্তি দিচ্ছেন, সেটা মানা যায় না। তাহলে রাজ্যের অন্য কারখানাগুলি চলছে কী ভাবে? আমরা শ্রম দফতরে কারখানা বন্ধের বিষয়টি জানিয়েছি।” ১২ ফেব্রুয়ারি মালিক ও শ্রমিক সংগঠনকে নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুরুলিয়া (পশ্চিম)-এর সহকারী শ্রম কমিশনার সঞ্জয় দেবনাথ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arsha spong iron factory
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE