Advertisement
১৭ মে ২০২৪

কর্তব্যে গাফিলতি, পুরুলিয়ায় দুই থানার ওসি ‘ক্লোজ’

খোঁজ মিলছে না পুলিশের একটি সার্ভিস রিভলভার সমেত ছয় রাউন্ড গুলির। পাওয়া যাচ্ছে না থানায় অস্ত্র সংক্রান্ত নথি তথা আর্মস রেজিস্টার। থানায় তদন্তে আসার পরেই ঘটনার গাফিলতির দায়ে রঘুনাথপুর থানার ওসি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেলা পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ’ করার নির্দেশ দিলেন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৪ ০০:২৯
Share: Save:

খোঁজ মিলছে না পুলিশের একটি সার্ভিস রিভলভার সমেত ছয় রাউন্ড গুলির। পাওয়া যাচ্ছে না থানায় অস্ত্র সংক্রান্ত নথি তথা আর্মস রেজিস্টার। থানায় তদন্তে আসার পরেই ঘটনার গাফিলতির দায়ে রঘুনাথপুর থানার ওসি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেলা পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ’ করার নির্দেশ দিলেন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার।

বুধবার রাতে ওই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেবাশিসবাবুর পরিবর্তে বৃহস্পতিবারই রঘুনাথপুরের দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে বলরামপুর থানার ওসি দীপঙ্কর সরকারকে। পুলিশ সুপারের সঙ্গে এ দিন বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসের জবাবও দেননি। তবে, জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, রঘুনাথপুর থানা থেকে রিভলভার উধাও হওয়ার ব্যাপারে থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি হয়েছে। ওই কারণেই রঘুনাথপুরের ওসি-কে আপাতত ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করার জন্য রঘুনাথপুরের এসডিপিও-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চলতি জুন মাসের শেষের দিকে কর্তব্যে গাফিলতির জন্য পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছিল সাঁতুড়ি থানার ওসি ফলারি কুমারকে। পুলিশ সূত্রের খবর, এলাকায় অবৈধ কয়লার কারবার বন্ধে ওই ওসি-র ভূমিকা ‘সন্তোষজনক’ ছিল না বলেই তাঁকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাঁতুড়ি থানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার সুজিত পতিকে। ফলে, এক সপ্তাহের মধ্যে রঘুনাথপুর মহকুমার দু’টি থানার ওসি-কে দায়িত্ব থেকে সরানো হল।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রঘুনাথপুর থানা থেকে একটি সার্ভিস রিভলভার সমেত ছয় রাউন্ড গুলি নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি সামনে আসে গত ২৫ জুন। ওই দিন সকালে থানার ডিউটি অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন সেকেন্ড অফিসার ননীগোপাল শী। তিনি-ই দেখেন, একটি রিভলভার এবং ছয় রাউন্ড গুলির হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। এএসআই অনিরুদ্ধ চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে ওই দিন ডিউটি অফিসারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ননীগোপালবাবু। অনিরুদ্ধবাবুও ওই রিভলভার ও গুলির বিষয়ে কিছু জানাতে না পারায় থানার রেজিস্টারে একটি মিসিং ডায়েরি দায়ের করেন ননীগোপালবাবু। সেই ঘটনা জানাজানি হতেই জেলা পুলিশ মহলে বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হয়। খবর পৌঁছয় পুলিশকর্তাদের কানে।

পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখতে বুধবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্যকে সঙ্গে নিয়ে রঘুনাথপুর থানায় এসেছিলেন পুলিশ সুপার। দীর্ঘক্ষণ ধরে থানার পুলিশকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন পুলিশ কর্তারা। আর ওই রাতেই দেবাশিসবাবুকে ক্লোজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়

বস্তুত থানা থেকে রিভলভার-সহ গুলি নিখোঁজ হয়েছে, না কি কোনও পুলিশকর্মীর হেফাজত থেকে সেগুলি হারিয়ে গিয়েছে, এই প্রশ্নের সদুত্তর মিলছে না। কারণ, থানায় অস্ত্র সংক্রান্ত নথি তথা আর্মস রেজিস্টারটিও বেপাত্তা! এই রেজিস্টারেই উল্লেখ থাকে, ডিউটিতে যাওয়ার আগে কোন পুলিশকর্মীকে কী ধরনের বন্দুক ও ক’টা গুলি দেওয়া হয়েছে। ডিউটি সেরে ওই কর্মীরা অস্ত্র ও গুলি ফেরত দেন। সে কথা আর্মস রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করেন ডিউটি অফিসার।

জেলা পুলিশেরই একটি সূত্রের দাবি, রিভলভার সমেত গুলি হারানোর বিষয়টি ২৫ জুন সামনে এলেও ঘটনাটি ঘটেছে তার দিন তিনেক আগে। ওই রাতে সাদা পোশাকে গুলিভর্তি রিভলভারটি নিয়ে বেরিয়েছিলেন এক পুলিশকর্মী। তাঁর কাছ থেকেই সেটি হারিয়েছে বলে জেলার পুলিশকর্তাদের ধারণা। এক কর্তা জানান, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পরেই আসল ঘটনা বোঝা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

negligency in duty close of CC raghunathpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE