Advertisement
E-Paper

কর্মবিরতির ফল, দু’দিনেই আলুর দর ছুঁল ২৮ টাকা

কোথাও আগুনে দাম। কোথাও বিলকুল গায়েব! ব্যবসায়ী ও রাজ্য সরকারের সংঘাতের জেরে ‘আলু’ ক্রমেই মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তের ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া—দুই জেলারই বিভিন্ন বাজারে আলুর আকাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪১
আকালের মধ্যে বস্তা থেকে বেরোচ্ছে পচা আলুও। ফলে, দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন বলে দাবি বাঁকুড়ার খুচরো ব্যবসায়ীদের।

আকালের মধ্যে বস্তা থেকে বেরোচ্ছে পচা আলুও। ফলে, দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন বলে দাবি বাঁকুড়ার খুচরো ব্যবসায়ীদের।

কোথাও আগুনে দাম। কোথাও বিলকুল গায়েব! ব্যবসায়ী ও রাজ্য সরকারের সংঘাতের জেরে ‘আলু’ ক্রমেই মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া—দুই জেলারই বিভিন্ন বাজারে আলুর আকাল। মঙ্গলবার থেকে রাজ্য জুড়ে চলতে থাকা পাইকারি আলু ব্যবসায়ীদের কর্মবিরতি বৃহস্পতিবারে তিন দিনে পড়ল। এ দিনই অবশ্য ধর্মঘট তুলে নেওয়ার ঘোষণা করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবু এই ক’দিনের ধর্মঘট চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, ফের আলু ব্যবসায়ীরা কর্মবিরতি ডাকলে সাধারণ মানুষ কতটা অসুবিধায় পড়বেন। আড়তদার ও খুচরো ব্যবসায়ীরা যে পরিমাণ আলু তুলে রেখেছিলেন, তা প্রায় শেষের মুখে। বহু খুচরো ব্যবসায়ীর ভাঁড়ারেই আর আলু নেই। যাঁদের আছে, তাঁরা কর্মবিরতির সুযোগ নিয়ে কোথাও ২৪, কোথাও ২৬ টাকা আবার কোথাও কোথাও ২৮-৩০ টাকা কেজি দরে পর্যন্ত আলু বিক্রি করছেন। উপায় না পেয়ে ওই দামেই আলু কিনতে বাধ্য হয়েছেন ক্রেতারা।

শুক্রবার বাঁকুড়া জেলা শহরের অলিগলির বেশির ভাগ সব্জি দোকানেই আলুর দেখা মেলেনি। শহরের বিভিন্ন বাজারে সব্জি ব্যবসায়ীদের একাংশের কাছে আলু নেই। যে পরিমাণ আলু কিছু খুচরো ব্যবসায়ীর কাছ রয়েছে, তা-ও দ্রুত শেষ হয়ে যাবে বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতারা। মাচানতলার বাজারে এ দিন আলু বিক্রি হতে দেখা গেল কেজিতে ২৪ টাকা। সেখানে চকবাজারের কিছু জায়গায় দাম উঠেছে কেজি প্রতি ২৬ টাকা। খুচরো ব্যবসায়ীদের দাবি, পাইকারি আলু কেজিতে ২১ টাকা করে কিনতে হচ্ছে। কিন্তু, আড়তদাররা বেশ কিছু দিন আগে হিমঘর থেকে আলু তুলে রেখেছেন। তাই বস্তায় পচা আলুর পরিমাণও বেড়েছে। বহু আলু ফেলা যাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই পড়ে থাকা ভাল আলুর দাম বাড়াতে হচ্ছে।

মাচানতলা বাজারের খুচরো ব্যবসায়ী স্বপন হাজরা, তরুণচন্দ্র দাসরা বলেন, “বস্তা পিছু গড়ে ১০ কেজি আলু ফেলা যাচ্ছে। বাছাই করে বস্তা নিতে দেওয়া হচ্ছে না আমাদের। দাম না বাড়ালে তো পুজোর মুখে আমাদের বিরাট লোকসান হবে।” চকবাজারের এক পাইকারি ব্যবসায়ীর কথায়, “হিমঘর থেকে আলু তুলে বেশিদিন ঘরে রাখা যায় নয়। তাই পচন ধরছে। আমাদের কিছু করার নেই। কর্মবিরতি না উঠলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”

এ দিন বিষ্ণুপুরের বাজারগুলিতেও হাতে গোনা কিছু ব্যবসায়ীর কাছেই আলু মজুত ছিল। বাজারগুলিতে আলু বিকিয়েছে ২৫ টাকা কেজি দরে। চকবাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শ্যামসুন্দর দাস, মনসাতলা বাজারের ব্যবসায়ী আশিস মুদি বলেন, “আড়তদারের কাছেও আলুর জোগান কমে গিয়েছে। হাতেপায়ে ধরে আমরা কিছু আলু পাচ্ছি। কর্মবিরতি চলতে থাকলে আলু বাজারে আর পাওয়া যাবে না।” আলুর আগুনে দামে অনেক গরিব মানুষের পাত থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে এই সব্জিটি। বাঁকুড়ার দোলতলার বাজারে আলু কিনতে আসা হেমা বাউরি, শীতলা বাউরিদের ক্ষোভ, “বাজার থেকে ছোট মাপের আলুগুলি আমরা কম দামে কিনে নিয়ে যাই। ওই আলু সাধারণত কেউ কেনে না। কিন্তু, যা অবস্থা সরকারি চাকরি করা লোকেরাই ভাল আলু না পেয়ে ওই ছোট আলুগুলো কিনে নিচ্ছেন। তাই ছোট আলুর দামও বেড়ে গিয়েছে।”

বিষ্ণুপুরে পড়ে রয়েছে সামান্য আলু। অথচ দাবিদার দুই!

সমস্যায় পড়েছেন যাঁরা মুদির দোকান থেকে বা পাড়ার সব্জি দোকান থেকে আলু বিক্রি করেন। বাঁকুড়া শহরের এই রকম মুদির দোকানির কথায়, “যাঁরা খোলা বাজারে আলু বেচেন, তাঁদেরই আলু দিচ্ছেন আড়তদাররা। ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।” এই ঘটনার জেরে শহরের অধিকাংশ দোকানেই আলু পাওয়া যায়নি। ক্রেতারাও অসুবিধায় পড়েছেন। অরবিন্দনগরের বাসিন্দা জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাড়ির সামনেই মুদির দোকানে আলু পাওয়া যায়। এ দিন সেখানে আলুই ছিল না।”

বৃহস্পতিবার ছবিটা একই ছিল পুরুলিয়ায়। এ দিন জেলার বেশির ভাগ বাজারেই আলু কিনতে গিয়ে ক্রেতাদের নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে। কোনও কোনও বাজারে খুচরো ব্যবসায়ীর কাছে আলু মিললেও তাঁরা মওকা বুঝে দাম হেঁকেছেন ২৮-৩০ টাকা প্রতি কেজি। এ দিন সকালের দিকে পুরুলিয়া বড় হাটে কিছু খুচরো ব্যবসায়ীর কাছে আলু পাওয়া গেলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই তা ফুরিয়ে যায়। বড় হাটের বিক্রেতা সুনীল সাউ বলেন, “পাইকারি বাজারে আলু পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা কী করব!” পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা অরুণ মিশ্র বলেন, “বড় হাটে আলু কিনতে গিয়ে দেখি নেই। তাই ডিএম অফিসের সামনের বাজারে যাই। সেখানে ৩০ টাকা কেজি দাম বলছে বিক্রেতারা।” এই বাজারের আলু বিক্রেতা শম্ভু দাস, শেখ শাহজাহান বলেন, “আমাদের ১২০০ টাকা দরে বস্তা (৫০ কেজির) কিনতে হয়েছে। সেই বস্তায় আবার পুরো ৫০ কেজি আলু নেই।”

জেলা কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিক সুধীর মাঝি বলেন, “এ দিন আলু বেশি দামে বিক্রি হয়েছে, তা শুনেছি। আমরা জেলা পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে কথা বলব।” জেলা পাইকারি আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক প্রবীর সেন বলেন, “কর্মবিরতির জেরে পুরুলিয়ায় চারদিন কোনও মাল আসেনি। যেখানে পুরুলিয়া শহর ও লাগোয়া এলাকায় প্রতিদিন দশ গাড়ি (লরি) আলুর চাহিদা রয়েছে, সেখানে এক গাড়িও মাল ঢোকেনি। কোনও ব্যবসায়ীর কাছে অল্প কিছু আলু ছিল। তা অল্প করে কিছু খুচরো ব্যবসায়ীকে দেওয়া হয়েছিল।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন পুঞ্চা থানা এলাকায় দুই ট্রাক আলু আটক করে পুলিশ। এই ট্রাকগুলি আলু নিয়ে কোথায় যাচ্ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

—নিজস্ব চিত্র

bankura purulia potato
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy