বরাবাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আশিস মণ্ডল ও প্রমথ মণ্ডল।—নিজস্ব চিত্র
বুধবার হাল্কা ভাবে শুরু হয়েছিল। বৃহস্পতিবার তা বড় আকার ধারণ করল। বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপির সদস্যদের বরাবাজারের বিক্রম টুডু মেমোরিয়াল কলেজে চত্বরে ফেলে মারধরের অভিযোগ উঠল রাজ্যে শাসকদলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। বুধবার ওই কলেজে এবিভিপি-ক সদস্যদের ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাদের বিরুদ্ধে। ঘটনায় এক এভিবিপি সদস্যের মাথা ফেটেছে। কয়েকজন নেতা-সদস্য অল্পবিস্তর আহত হয়েছেন। তাঁদের আরও অভিযোগ, ঘটনার সময় পুলিশ কলেজে থাকলেও টিএমসিপি-র হয়ে আক্রান্তদের উপরেই লাঠি চালায়।
পুরুলিয়ার ডেপুটি পুলিশ সুপার (বরাবাজারের দায়িত্বে) দেন্দুপ শেরপা অবশ্য পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিচার্জের অভিযোগ মানেন নি। তিনি দাবি করেছেন, “বরাবাজার কলেজে সামান্য গোলমাল হয়েছিল। দু’পক্ষের মধ্যে বড় গণ্ডগোল আটকাতে পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করেছিল মাত্র। সেই সময় পড়ে গিয়ে কেউ আহত হয়ে থাকতে পারেন।”
বুধবার এভিবিপি-র তিন সদস্য কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ভোটার তালিকা চাইতে গিয়েছিলেন। অভিযোগ সেই সময় টিএমসিপির সদস্যরা মূল ফটক আটক করে তাদের হেনস্থা ও ধাক্কাধাক্কি করে। ওই তিন সদস্য কোনওক্রমে পালিয়ে বাঁচেন। সন্ধ্যায় তাঁরা বরাবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তারপরে এ দিনও ফের ছাত্র নির্বাচনের প্রাক্কালে তেতে উঠল ওই কলেজ। এভিবিপি-র বরাবাজার ব্লক সভাপতি রসরাজ মাহাতো জানান, বৃহস্পতিবার তাঁরা জনা দশেক ছাত্র কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়, সে জন্য অনুরোধ জানাতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাঁরা ভোটার তালিকা নিয়ে বেরোচ্ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, “কলেজের প্রশাসনিক ভবন থেকে বেরোতেই প্রায় ৩০-৪০ টিএমসিপি সদস্য আমাদের ঘিরে ধরে। তারপর ওরা আমাদের সদস্য প্রথম বর্ষের আশিস মণ্ডলকে শাসানি দেয়, ‘কাল তুই চোখ রাঙিয়ে কথা বলেছিলি না?’ আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওরা সবাই আশিসের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমরা আটকাতে যেতেই ওরা আমাদের উপর কিল, চড়, লাথি মারতে থাকে। দেখি মাটিতে পড়ে রয়েছে আশিস। ওর মাথা ফেটে রক্ত ঝরছিল।” এভিবিপির সদস্য আশিস মণ্ডল বরাবাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের শয্যায় শুয়ে বলেন, “ওরা সবাই এই কলেজের ছাত্র। সবাই আমার বন্ধু। ওরাই এ ভাবে তাড়া করে আমাকে মারবে ভাবতে পারিনি।” সংগঠনের বরাবাজার ব্লক সম্পাদক প্রমথ মণ্ডলের দাবি, “মার খেয়ে সোজা হয়ে বসে থাকতে পারছি না।”
এমন ঘটনার আশঙ্কা আগে থেকেই করেছিল বিজেপি। তাই ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের কলেজের ভিতরে ঢুকতে বলে বাইরে ছিলেন বিজেপি-র কয়েকজন কর্মী। দলের জেলা সহ-সভাপতি তথা স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন হোতার অভিযোগ, “বুধবারের ঘটনার পরে এ দিন আমরা সতর্ক ছিলাম। এ দিন আমরা কলেজের বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। দেখলাম পুলিশের সামনেই টিএমসিপি-র ছেলেরা আমাদের ছেলেদের মারছে। পুলিশকে অনুরোধ করায় উল্টে ছাত্রদের সাথে তৃণমূলের লোকজন আমাদের দিকে লাঠিসোটা নিয়ে তেড়ে আসে। ওরা আমাদের লাঠি পেটা করল।” তিনি জানান, অনেকে লাঠির ঘায়ে আহত হয়েছেন। কেউ বা পালাতে গিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন। বিজেপির বরাবাজার ব্লক সভাপতি বিষ্ণুপদ মাহাতো বলেন, “পুলিশের এই আচরণে আমরা অবাক হয়ে গিয়েছি। পুলিশ কোথায় গণ্ডগোল থামাবে, তার বদলে শাসক দলের হয়ে আমাদের তাড়া করে লাঠিচার্জ করল। আমার পিঠেও লাঠির ঘা মেরেছে।” পরে বিজেপি এবং এবিভিপি কর্মীরা থানার সামনে বিক্ষোভ দেখাতে যান। সেখানেও পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাঁদের হটিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি নিরঞ্জন মাহাতো যথারীতি এ দিনও বিষয়টা হাল্কা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, “আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি বৃহস্পতিবার ছাত্রদের সাথে কয়েকজন বহিরাগত ঢুকেছিল। টিএমসিপির ছেলেরা ওরা কেন ভেতরে ঢুকেছেন জানতে গিয়েছিল। তাতে ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। তেমন বড় ঘটনা নয়।” কলেজে এ ধরনের গোলমাল সামাল দিতে তিনি কি ব্যবস্থা নিয়েছেন? কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ চন্দ্রকান্ত পণ্ডাকে ফোনে এই প্রশ্ন করতেই তিনি লাইন কেটে দিয়ে মোবাইল বন্ধ করে দেন। কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “কলকাতায় আছি। কলেজে কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy