Advertisement
০৩ মে ২০২৪
বাঁকুড়ায় নির্দেশ তৃণমূলের

কলেজ ধরে রাখতে ভোটে নামছে যুবও

পুরুলিয়ার কলেজে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের ফল নড়িয়ে দিয়েছে বাঁকুড়ার শাসকদলের শীর্ষ নেতাদের। আসন্ন ছাত্রসংসদ নির্বাচনে বাঁকুড়ার কলেজগুলিতে কর্তৃত্ব ধরে রাখতে তাই এ বার জেলাস্তরে টিএমসিপি-র কর্মীদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করলেন মন্ত্রী, সভাধিপতি, সাংসদ ও বিধায়কেরা। কলেজ দখলে রাখতে টিএমসিপি-র সঙ্গে লড়াইয়ে নামার নির্দেশ দেওয়া হল যুব তৃণমূলকেও।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০৮
Share: Save:

পুরুলিয়ার কলেজে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের ফল নড়িয়ে দিয়েছে বাঁকুড়ার শাসকদলের শীর্ষ নেতাদের। আসন্ন ছাত্রসংসদ নির্বাচনে বাঁকুড়ার কলেজগুলিতে কর্তৃত্ব ধরে রাখতে তাই এ বার জেলাস্তরে টিএমসিপি-র কর্মীদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করলেন মন্ত্রী, সভাধিপতি, সাংসদ ও বিধায়কেরা। কলেজ দখলে রাখতে টিএমসিপি-র সঙ্গে লড়াইয়ে নামার নির্দেশ দেওয়া হল যুব তৃণমূলকেও।

গত শুক্রবারই ইঁদপুর মোড়ের সভায় তৃণমূলকে সাবধান করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেছিলেন, “জঙ্গলমহলে আমরা ঢুকে গিয়েছি। পুরুলিয়ার কলেজ ভোটে জয় তারই প্রমান।” পুরুলিয়ার লালপুর মহাত্মা গাঁধী কলেজে টিএমসিপিকে সরিয়ে ছাত্র সংসদর দখল করেছে আরএসএস প্রভাবিত অখিল ভারতীয় বিদ্যাথয পরিষদ (এবিভিপি)। ঝালদা কলেজেও তারা একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও ছাত্র পরিষদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত ছাত্র সংসদ ধরে রাখে টিএমসিপি।

বস্তুত রাহুলের সভার দিনেই সন্ধ্যায় জেলার যুব তৃণমূল সভাপতি (প্রাক্তন টিএমসিপি জেলা সভাপতি) শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়কে দ্রুত নির্বাচনী প্রস্তুতি সভা করার নির্দেশ দেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অরূপ খাঁ। রবিবার বাঁকুড়ার সতীঘাটের একটি লজে এই সভায় অরূপবাবু ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীর মতো তৃণমূলের জেলা শীর্ষ নেতৃত্ব। সভায় টিএমসিপির জেলা সভাপতি চুমকি বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছিলেন জেলার ২২টি ব্লকের টিএমসিপি ও যুব তৃণমূলের সভাপতি ও কয়েকশো কর্মী।

শেষ কবে কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে এই ধরনের প্রস্তুতি সভা হয়েছে, জানতে চাওয়া হলে সদুত্তর মেলেনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত টিএমসিপি ও যুব নেতাদের কাছ থেকে। অনেকেরই কথায়, বাম আমলে নির্বাচনী সভা হতো ঠিকই, কিন্তু তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে এই সব সভার দরকারই পড়েনি। টিএমসিপি সূত্রে খবর, গত সাত মাস আগে বাঁকুড়ার টিএমসিপি-র জেলা সভাপতির পদ থেকে শিবাজীকে সরিয়ে জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি পদে বসানো হয়। শিবাজীবাবুর জায়গায় ছাত্র সংগঠনের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় চুমকির হাতে। কিন্তু সংগঠনেরই একাংশ চুমকিকে এই পদে বসানোর বিরোধিতা করে। তাঁরা শিবাজীকেই অনুসরণ করতে থাকে। তাই পদ থেকে সরে গেলেও টিএমসিপির একটা বড় অংশের রাশ রয়ে যায় শিবাজীর হাতে। গত কয়েক বছর শিবাজীর নেতৃত্বে জেলার অনেক কলেজে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিএমসিপি জিতে গিয়েছিল।

এ বারও তেমনই ভাবা হয়েছিল। কিন্তু পুরুলিয়ায় ছাত্র সংসদের নির্বাচনে এবিভিপি-র হঠাত্‌ উত্থান নড়িয়ে দিয়েছে পাশের জেলা বাঁকুড়ার তৃণমূল নেতৃত্বকে। সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার পরে আসন্ন ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে আর মোটেই হাল্কা ভাবে নিতে চাইছেন না তাঁরা। তার উপরে এখানে দলের মতোই ছাত্র সংগঠনেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বড় মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার পাত্রসায়রে ছাত্র নেতাদের গোলামালের পরে আরও সতর্ক হতে চাইছেন নেতৃত্ব। তাই ছাত্র নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে রাশ টানা যে জরুরি তা ভাল ভাবেই টের পেয়েছে শাসক দল। আর সেই কারণেই চুমকির পাশাপাশি শিবাজীকেও ছাত্রসংসদ নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ভাবে যোগ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন তৃণমূল নেতাদের একাংশ।

তিনি বলেন, “টিএমসিপি তৃণমূলেরই শাখা সংগঠন। তাই নির্বাচনে এই দলের অন্যান্য সংগঠন অংশ নেবে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমাদের দলে কোনও গোষ্ঠী নেই।” অন্যদিকে শিবাজীর বক্তব্য, “কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে টিএমসিপি-র সঙ্গে যুবকে একসাথে কাজ করতে বলা হয়েছে। এই নির্দেশ মেনে চলব।”

উল্লেখ্য, আগামী ৭ জানুয়ারি বাঁকুড়া মহকুমা ও ৮ জানুয়ারি বিষ্ণুপুর ও খাতড়া মহকুমার কলেজগুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনের জন্য পুরোদমে প্রস্তুতি চালু করেছে বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদও। বিজেপির জেলা মুখপাত্র অজয় ঘটক বলেন, “জেলার সব ক’টি কলেজেই আমরা প্রার্থী দেব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। বিজেপি এই কাজে তাদের সহযোগিতা করছে।” তাঁরা অভিযোগ, টিএমসিপি ওন্দা ও শালতোড়ার কলেজে এবিভিপি সদস্যদের উপরে হামলা করেছে। তিনি জানান, বাধা দেওয়া হলে, ময়দান ছাড়া হবে না বলে এবিভিপি সদস্যদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জেলা তৃণমূল সভাপতি খাঁয়ের দাবি, “সব কলেজেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোট হবে।” জেলা পুলিশকে কলেজে অশান্তি রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক বিজয় ভারতীও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE