বর্ধমান মেডিক্যালে নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন রত্নাবলী বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: উদিত সিংহ
নির্যাতিতা ছাত্রীর সঙ্গে কথা না বলেই শনিবার ফিরে গেলেন ইউজিসি-র ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির সদস্যরা। মাত্র ১৫ মিনিট বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছিলেন কমিটির দুই সদস্য, ইউজিসি-র পূর্বাঞ্চল শাখার যুগ্ম সচিব রত্নাবলী বন্দ্যোপাধ্যায় ও অসমের তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মিহির কুমার চৌধুরী। তাঁরা ফিরে যাওয়ার পর নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা জানান, তিনি মেয়ের সঙ্গে ওই দুই সদস্যকে দেখা করতে দেননি। তাঁর সঙ্গেও কথা কাটাকাটি হয়ে গিয়েছে কমিটির সদস্যদের। ওই ছাত্রীর বাবা জানান, “আমাকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়েছেন কমিটির সদস্যরা।”
কেন এই সমস্যা দেখা দিল? ওই ছাত্রীর বাবার বক্তব্য, “আমার মেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। তাঁকে বারবার ওই ঘটনা নিয়ে জেরা করা হচ্ছে। আর কেউ আমার মেয়েকে জেরা করুক সেটা আমি চাই না। তাই আমি ওই দু’জনকে দেখা করতে দিইনি।” তিনি জানান, শনিবার সারাদিন বোলপুরে প্রবল হয়রানির হয়েছে তাঁর। এরপর তিনি আর সুবিচার পাওয়ার আশা করেন না।
কী হয়েছে শনিবার? ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, বিশ্বভারতীর নিরাপত্তা আধিকারিক শুক্রবার তাঁকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। সেই চিঠিতে মেয়েকে নিয়ে এ দিন বিশ্বভারতীতে দেখা করতে বলা হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমি বিশ্বভারতীকে জানাই, মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি। তাই সে যেতে পারবে না। তখন আমাকে একাই যেতে বলা হয়।” সেই মতো তিনি সকাল ১১টা নাগাদ বেরিয়ে সাড়ে বারোটায় বিশ্বভারতীতে পৌঁছন। কিন্তু চিফ সিকিউরিটি অফিসার তাঁকে বলেন, এখন ভিতরে প্রেস রয়েছে। ওই ছাত্রীর বাবাকে বোলপুর থানায় যাওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। সেই মতো তিনি বোলপুর থানায় গিয়ে বসে থাকেন প্রায় তিন ঘণ্টা। তারপর বিশ্বভারতী থেকে তাঁকে কর্মীরা নিতে আসেন। তাঁদের সঙ্গে ফিরে গেলে চিফ সিকিউরিটি অফিসার ওই ছাত্রীর বাবাকে প্রশ্ন করেন, তিনি মেয়েকে নিয়ে আসেননি কেন। এ বিষয়ে তিনি আগেই জানিয়েছিলেন, তা জানালে চিফ সিকিউরিটি অফিসার বলেন, মেয়ের সঙ্গেই কথা বলা দরকার। এই নিয়ে তাঁদের কথা কাটাকাটি হয়।
ধর্ষণ-বিরোধী মিছিলে সামিল বিশ্বভারতীতে উত্তর-পূর্ব থেকে পড়তে আসা ছাত্রীরা। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ ওই ছাত্রীর বাবা যখন বর্ধমান মেডিক্যালে ফিরে আসেন, তখন তিনি তিনি দৃশ্যতই বিধ্বস্ত। সাংবাদিকদের বলেন, “সারাদিন কিছু খাইনি। আমাকে যে ভাবে হয়রান করল, তাতে আমি মর্মাহত (শক্ড)।” তিনি জানান, এ দিনও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে তাঁকে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক নেতা বা মিডিয়ার কাছে না যেতে। “আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই,” বলেন তিনি।
এ দিন সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ আসে ইউজিসি কমিটি। মিনিট পনেরো পরে দুই সদস্য চলে যাওয়ার পর ওই ছাত্রীর বাবা সাংবাদিকদের জানান, কমিটির সদস্যরা শুধু তাঁর মেয়েকে চোখের দেখা দেখে চলে এসেছে। তিনি মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে দেননি বলে কমিটির সদস্যদের সঙ্গে তাঁর কথা কাটাকাটিও হয়েছে। “আমি আর বিচারের আশা করি না,” বলেন তিনি।
এ দিন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির সদস্যরা প্রথমে যান বিশ্বভারতীতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুরক্ষা বাহিনীর ঘেরাটোপে থেকে তাঁরা বিভিন্ন নথি সংগ্রহ করেন। ওই ছাত্রীর অভিযোগে উল্লিখিত ঘটনার জায়গাগুলি পরিদর্শন করেন। যান কলাভবনেও। গোটা পূর্বপল্লি এবং আশেপাশের দুটি অতিথি নিবাস সুরক্ষায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল। সাংবাদিকদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিশ্বভারতীর মুখ্য নিরাপত্তা আধিকারিক ইউ পি সিংহ কার্যত অলিখিত ফতোয়া জারি করেছিলেন। যার জেরে শান্তিনিকেতন ঘুরতে আসা বেশ কিছু পর্যটক পূর্বপল্লি অতিথিশালার ক্যান্টিনে খেতে গিয়ে নিরাপত্তা রক্ষীদের জেরার মুখে পড়েন।
দুপুর আড়াইটা নাগাদ কলাভবনের একাধিক ছাত্রছাত্রীকে পূর্বপল্লি অতিথিশালায় অপেক্ষা করতে দেখা যায়। নিজেদের কথা লিখিত ভাবে জানানোর জন্য কেউ কেউ তৈরি হয়ে এসেছিলেন। বিকেল পৌনে চারটা নাগাদ রথীন্দ্র অতিথি গৃহে আসেন মিহিরবাবু এবং রত্নাবলী দেবী। তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্য নিরাপত্তা আধিকারিক ইউ পি সিংহ, ছাত্র পরিচালক হরিশ্চন্দ্র মিশ্র, কর্ম সচিব ডি গুণশেখরন এবং ওই সময়ে কর্ম সচিবের দায়িত্বে থাকা অধিকর্তা মণিমুকুট মিত্র। ছিলেন অন্যান্য আধিকারিকেরাও। এ দিন বিশ্বভারতী কাণ্ডের প্রতিবাদ করে কলকাতার নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা মিছিল করে কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy