Advertisement
০৬ মে ২০২৪

খুনে ছেলেকে ধরুক পুলিশ, চান বাবা

চোখের সামনে ছেলেকে বৌমার গলায় ছুরি বসাতে দেখে আটকাতে গিয়েছিলেন বৃদ্ধ। কিন্ত বৌমাকে বাঁচাতে পারেননি। উল্টে সেই ছেলেই তাঁর হাতে ছুরি মেরে পালায়। শনিবার সকালে বাঁকুড়ার মল্লেশ্বরপল্লির ওই ঘটনার পরে সেই বৃদ্ধ শম্ভুনাথ লোহারকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু মা হারা দুই নাতির টানে সে দিনই বাঁকুড়া হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন তিনি। বলছেন, “আমার হাতের আঘাত কম নয়। কিন্তু মা হারানো দুই নাতিকে ছেড়ে হাসপাতালে থাকতে পারলাম না। ওদের দেখাশোনার জন্য ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।”

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৩৩
Share: Save:

চোখের সামনে ছেলেকে বৌমার গলায় ছুরি বসাতে দেখে আটকাতে গিয়েছিলেন বৃদ্ধ। কিন্ত বৌমাকে বাঁচাতে পারেননি। উল্টে সেই ছেলেই তাঁর হাতে ছুরি মেরে পালায়।

শনিবার সকালে বাঁকুড়ার মল্লেশ্বরপল্লির ওই ঘটনার পরে সেই বৃদ্ধ শম্ভুনাথ লোহারকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু মা হারা দুই নাতির টানে সে দিনই বাঁকুড়া হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন তিনি। বলছেন, “আমার হাতের আঘাত কম নয়। কিন্তু মা হারানো দুই নাতিকে ছেড়ে হাসপাতালে থাকতে পারলাম না। ওদের দেখাশোনার জন্য ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।”

বাবা হয়েও খুনে অভিযুক্ত ছেলে তারকনাথ লোহারকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন তিনি। যদিও রবিবার পর্যন্ত পুলিশ অভিযুক্তের হদিস করতে পারেনি।

বাঁকুড়া শহরের মল্লেশ্বরপল্লিতে তারক স্ত্রী সীমা, দুই নাবালক ছেলে ও বাবাকে নিয়ে বাস করত। বাঁকুড়া শহরে একটি দোকানে দর্জির কাজ করত তারক। সম্প্রতি সেই দোকানের কাজ ছেড়ে সে একটি সেলাই মেশিন কিনে বাড়িতেই কাজ শুরু করে। কিন্তু তাতে রোজগার হচ্ছিল না। এ নিয়ে বাড়িতে স্বামী-স্ত্রীর অশান্তি লেগে ছিল। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের রান্নার কাজ করতেন সীমা। তিনি স্বামীকে ফের দোকানে কাজ করতে যেতে বলতেন। কিন্তু তারকের তাতে আপত্তি ছিল। শনিবার ঝড়গার সময় সীমা বাপের বাড়ি চলে যাবে বলে স্বামীকে হুঁশিয়ারী দেন। তাতেই তারকের মাথা গরম হয়ে যায়। কোথা থেকে একটি ছুরি বের করে সে সীমার উপর চড়াও হয়। সীমা তখন উঠোনে সব্জি কাটছিলেন। সামনেই ছিল দুই ছেলে। মুড়ি খাচ্ছিলেন তারকের বাবা শম্ভুনাথবাবু। তাঁদের সামনেই স্ত্রী সীমার গলার নলি কেটে খুন করে গা ঢাকা দেয় তারক। পালাবার আগে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বাবা শম্ভুনাথ লোহার ও এক পড়শি বধূ কল্পনা চক্রবর্তীকেও জখম করে সে। দু’জনকেই বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। রাতেই বাড়ি ফিরে আসেন শম্ভুনাথবাবু। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে রবিবার কল্পনাদেবীর অবস্থা স্থিতিশীল। তাঁর পিঠে ছুরির আঘাত লেগেছিল।

ডাক্তাররা রাতটা হাসপাতালেই কাটাতে বলছিলেন। কিন্তু আমি ওখানে থাকলে নাতি দু’টোকে কে দেখবে? তাই ওদের কথা বলে ডাক্তারদের বুঝিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।

শম্ভুনাথ লোহার

(নিহত বধূর শ্বশুর)

তারকনাথের বড় ছেলে অভিজিত্‌ ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ছোটছেলে তুষারের বয়স তিন বছর। শনিবার ওই ঘটনার পর দুই ভাই শুকনো মুখে বাড়িতে বসেছিল। খুন করে পালানোর সময় তারক নিজের বাবার বাঁ হাতের কনুইয়ে ছুরির কোপ মারে। সদ্য মা হারা দুই নাতির টানে শনিবার রাতেই অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে আসেন শম্ভুনাথবাবু। ঘটনার কথা শুনে রবিবার সকালে বেলিয়াতোড় থেকে মল্লেশ্বরপল্লিতে এসেছেন শম্ভুনাথবাবুর মেয়ে চম্পা লোহার। আপাতত শম্ভুনাথবাবু ও তাঁর দুই নাতিকে চম্পাদেবীই দেখভাল করছেন।

শম্ভুনাথবাবু বলেন, “ডাক্তাররা রাতটা হাসপাতালেই কাটাতে বলছিলেন। কিন্তু আমি ওখানে থাকলে নাতি দু’টোকে কে দেখবে? তাই ওদের কথা বলে ডাক্তারদের বুঝিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।” এ দিন দিনভর বাড়িতে গুম হয়ে বসেছিল অভিজিত্‌। যদিও মা হারানোর ঘটনা পুরোপুরি এখনও বুঝে উঠতে পারেনি তিন বছরের তুষার। তাই পাড়ায় ছুটে বেড়িয়েছে সে। তবে মাঝে মাঝেই বাড়ি এসে মা-বাবাকে খুঁজেছে। নাঝে মধ্যে কান্নাকাটিও করছে। পিসি ওকে স্নান করাতে গিয়েছিল। করতে চায়নি। তাই ব্যান্ডেজ বাঁধা হাতেই তুষারকে এ দিন স্নান করিয়েছেন শম্ভুনাথবাবু। নাতিদের কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে তিনি বলেন, “ওরা জানে না কত বড় ক্ষতি হয়ে গেল ওদের। অভিজিত্‌ কিছুটা বুঝতে পেরেছে। তাই সারাদিন চুপচাপ হয়ে হয়ে রয়েছে। তুষার খেলার ফাঁকে বাড়ি এসে আধো গলায় বাবা-মা বলে শুধু ডাকছে। সংসারটা ছারখার হয়ে গেল।” এই ঘটনার জন্য দায়ী নিজের ছেলেকে অবিলম্বে গ্রেফতার করার দাবি তুলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “আমি চাই তারক পুলিশের হাতে দ্রুত গ্রেফতার হোক। ওর জন্যই এই বাচ্চাগুলোর জীবন শেষ হয়ে গেল। দুই নাতিকে মানুষ করাই এখন আমার লক্ষ।” শনিবার রাতে নিহতের দেহ বাঁকুড়া শহরের লখ্যাতড়া শ্মশানে দাহ করা হয়।

শনিবারই বাঁকুড়া সদর থানায় তারকনাথের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেন সীমার বাবা ওন্দার বুলানপুরের বাসিন্দা শিবপ্রসাদ লোহার। পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার পর্যন্ত তারকনাথের খোঁজ পাওয়া যায়নি। ওর খোঁজে তল্লাশি চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rajdip bandyopadhyay bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE