Advertisement
০৪ মে ২০২৪

খেলার মাঠে দোকান তৈরি ঘিরে বিতর্ক রঘুনাথপুরে

পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কের পাশে বি-টিম গ্রাউন্ড নামে ওই মাঠ পরিচিত। সেই মাঠের সামনে দেওয়াল তুলে নির্মাণকাজ শুরু করেছেন স্থানীয় কিছু বাসিন্দা। এরপরেই এলাকার জিডি ল্যাং হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রী-সহ কয়েকটি ক্লাবের সদস্যেরা ওই মাঠ দখলের অভিযোগ তুলে মাঠ রক্ষার দাবিতে এলাকায় মিছিল করেন।

বি-টিম গ্রাউন্ডে নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।—নিজস্ব চিত্র।

বি-টিম গ্রাউন্ডে নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৫৯
Share: Save:

কয়েক দশক ধরে খেলার মাঠ হিসাবে ব্যবহৃত জমিতে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে।

পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কের পাশে বি-টিম গ্রাউন্ড নামে ওই মাঠ পরিচিত। সেই মাঠের সামনে দেওয়াল তুলে নির্মাণকাজ শুরু করেছেন স্থানীয় কিছু বাসিন্দা। এরপরেই এলাকার জিডি ল্যাং হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রী-সহ কয়েকটি ক্লাবের সদস্যেরা ওই মাঠ দখলের অভিযোগ তুলে মাঠ রক্ষার দাবিতে এলাকায় মিছিল করেন।

স্কুলের তরফে অভিযোগ জানানো হয়েছে রঘুনাথপুর মহকুমাশাসকের কাছে। অন্যদিকে পুরসভার তরফে স্থানীয় বাসিন্দা তরুণ বক্সী-সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে মাঠে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। মহকুমাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মিনা বলেন, “জমির শ্রেণি চরিত্র বদল না করে এবং পুরসভার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি না নিয়েই ওই মাঠে নির্মাণ কাজ করায় কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছে পুরসভা। আপাতত ওই মাঠে সমস্ত প্রকার নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাঠটি এতদিন দেখভাল করে আসছে জিডি ল্যাং হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস সরখেল বলেন, “পাশেই এ-টিম গ্রাউন্ডটি স্কুলের নামে রয়েছে। বি-টিম মাঠটিও আমাদের তত্ত্বাবধানেই রয়েছে। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে এই মাঠে খেলাধূলা করে আসছে স্থানীয় ছেলেমেয়েরা ও কিছু ক্লাবের সদস্য।” তাঁর দাবি, মাঠের কিছু অংশ ভূমি দফতরের নথিতেও খেলার মাঠ হিসেবেই উল্লেখ রয়েছে। তা সত্ত্বেও কিছু বাসিন্দা ওই জমি তাঁদের রায়তি সম্পত্তি দাবি করে সেখানে নির্মাণ কাজ শুরু করে খোঁড়াখুড়ি করে মাঠ নষ্ট করে দিয়েছে।” বস্তুত মাঠের মালিকানা ঠিক কাদের নামে তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মাঠের মোট আয়তন ১৪২ ডেসিমেল। তার মধ্যে ৪০ ডেসিমেল সরকারি জমি। বাকি জমির কিছু অংশ রায়তি সম্পত্তি হলেও তার মধ্যে আবার জমির চরিত্র হিসাবে ‘খেলার মাঠ’ বলে উল্লেখ রয়েছে। .

মাঠে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পরেই পুরকর্তৃপক্ষ স্থানীয় বাসিন্দা তরুন বক্সীকে নোটিস দিয়ে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেয়। পুরসভার অভিযোগ, তারপরেও কাজ বন্ধ না হওয়ায় সম্প্রতি তরুণবাবু-সহ কয়েকজনের নামে থানায় অভিযোগ করা হয়। জিডি ল্যাং হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি লক্ষ্মীনারায়ণ সিংহ দাবি করেছেন, “ভূমি দফতর থেকে পাওয়া নথিতে মাঠের আটটি প্লটের মধ্যে তিনটি প্লট খেলার মাঠ হিসাবে রয়েছে। বাকি চারটি প্লটের তথ্য প্রশাসনিক কারণে দেওয়া হয়নি। মাত্র একটি প্লট রায়তি সম্পত্তি বলে উল্লেখ রয়েছে। এতেই পরিষ্কার মাঠ বেদখল করে নির্মাণ হচ্ছিল।”

অন্য দিকে, তরুণ বক্সীর পাল্টা দাবি, “মাঠটি আমাদের পারিবারিক সম্পত্তি। মোট ৬১ জন ওয়ারিশন রয়েছেন। একসময় আমাদের পরিবারের ছেলেমেয়েদের খেলার জন্য মাঠের কিছু অংশ ছেড়ে দেওয়া হলেও এখন স্কুল ও ক্লাবের ছেলেরা মাঠে সার্কাস, যাত্রা বসিয়ে অসাধু উপায়ে আয় করছে এবং মাঠটি নষ্ট করছে।” তাঁর অভিযোগ, তাঁরা মাঠ রক্ষার চেষ্টায় নামায় মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে। তিনি বলেন, “খেলাধূলোর জায়গায় রেখেই আমরা বাকি জমিতে পরিবারের ছেলেদের রুজি রোজগারের জন্য দোকান তৈরি করতে চাইছি।”

এই পরিস্থিতিতে মহকুমাশাসক নির্মাণ বন্ধ রেখে যাঁরা ওই কাজ করছেন, তাঁদের জমির নথিপত্র দেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা পুরসভায় তৃণমূলের দলনেতা বিষ্ণুচরণ মেহেতার আশ্বাস, “খেলার মাঠ নষ্ট না করে পুরসভার দখলে থাকা জমিতে আমরা শিশু উদ্যান তৈরি করতে চাইছি।” যদিও পড়ুয়াদের দাবি, তারা খেলার মাঠই চায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

playing ground raghunathpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE