Advertisement
১৮ মে ২০২৪

খন্দপথে বাস উল্টে মৃত ১, আহত ৪০

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার উপরে এক পাশে কাত হয়ে পড়ে রয়েছে বাসটি। আশেপাশে বহু মানুষের ভিড়। আহতদের উদ্ধার করে গাড়িতে করে হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। রাস্তায় গাড়ি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ।

পাত্রসায়রের হাটকৃষ্ণনগর গ্রামে বাঁকুড়া-বর্ধমান রাস্তার হাল।—নিজস্ব চিত্র।

পাত্রসায়রের হাটকৃষ্ণনগর গ্রামে বাঁকুড়া-বর্ধমান রাস্তার হাল।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৪ ০০:১৭
Share: Save:

খানাখন্দে ভরা রাস্তা। কোথাও পিচ, পাথর উঠে গিয়ে গর্তে জল জমে রয়েছে। তার উপরে রয়েছে অসংখ্য স্পিড ব্রেকার। সেই খন্দ পথে দ্রুতবেগে যাওয়ার সময় গর্ত আর স্পিড ব্রেকারের সামনে পড়ে ব্রেক কষতেই সামনের যন্ত্রাংশ ভেঙে উল্টে গেল যাত্রিবাহী একটি বাস। মৃত্যু হল এক যাত্রীর। আহত হলেন চালক-সহ অন্তত ৪০ জন। রবিবার সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটে পাত্রসায়র থানার ইদিলচক মোড়ে, বাঁকুড়া-বর্ধমান রাস্তায়।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত লক্ষ্মণ হালদার (৪৫) পেশায় মাছ ব্যবসায়ী। বর্ধমানের কাটোয়া থানা এলাকায় তাঁর বাড়ি। স্থানীয় বাসিন্দা এবং পাত্রসায়র থানার পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এই দুর্ঘটনার জেরে ওই রাস্তায় প্রায় দু’ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। সকাল ১০টার পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে বর্ধমান থেকে বেসরকারি বাসটি বাঁকুড়ায় যাচ্ছিল। প্রায় ৫০ জন যাত্রী ছিলেন। পাত্রসায়রের ইদিলচক মোড়ে বাসের সামনের যন্ত্রাংশ ভেঙে যায়। চালক নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারায় রাস্তার একদিকে বাসটি কাত হয়ে যায়। খবর পেয়ে স্থানীয় ইদিলচক, ফকিরডাঙা, কাঁটাদিঘি, বরকতচক, রসুলপুর-সহ আশেপাশের গ্রামের মানুষজন ছুটে এসে উদ্ধার কাজে নামেন। খবর পেয়ে পাত্রসায়র থানার ওসি অমিত সিংহ মহাপাত্র বাহিনী নিয়ে দ্রুত উদ্ধার কাজে হাত লাগান। পরে এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) পরাগ ঘোষ ঘটনাস্থলে যান। আহতদের মধ্যে ৩৮ জনকে পাত্রসায়র ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে গুরুতর আহত ৩৭ জনকে বাঁকুড়া ও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্ধমানে নিয়ে যাওয়ার পথেই লক্ষ্মণবাবুর মৃত্যু হয়।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার উপরে এক পাশে কাত হয়ে পড়ে রয়েছে বাসটি। আশেপাশে বহু মানুষের ভিড়। আহতদের উদ্ধার করে গাড়িতে করে হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। রাস্তায় গাড়ি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ। ওই বাসের আহত যাত্রী বর্ধমানের ধনঞ্জয় কর্মকার, সোনামুখীর জুনসরা গ্রামের কারু বীর বলেন, “বাসে বসেছিলাম। হঠাত্‌ জোরে ঝাঁকুনি লাগল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখলাম বাসটা ডানদিকে ঘুরে কাত হয়ে গেল। একে অন্যের গায়ে ছিটকে পড়ল।” দুর্ঘটনার পরে বাসিন্দারা রাস্তার হাল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

শুধু ইদিলচক মোড়ই নয়, বাঁকুড়া-বর্ধমান রাস্তায় পাত্রসায়র ব্লকের বেশ কয়েকটি জায়গায় রাস্তা এমন বেহাল হয়ে রয়েছে। সবথেকে খারাপ অবস্থা পাত্রসায়র থেকে রসুলপুর পর্যন্ত। দীর্ঘদিন ধরে ওই রাস্তাগুলির বেহাল দশার জন্য ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা। অবিলম্বে ওই রাস্তা সংস্কারের দাবিতে সরব হয়েছেন তাঁরা। পাত্রসায়র থেকে বর্ধমান যাওয়ার রাস্তার মধ্যে কাঁকরডাঙা মোড়, হাটকৃষ্ণনগর, কাঁটাবন, ফকিরডাঙা, ইদিলচক, রসুলপুর এলাকায় রাস্তার অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। এরমধ্যে হাটকৃষ্ণনগরের ফণি সিংহের মোড়ে রাস্তার পিচ, বোল্ডার উঠে গিয়ে ছোট ছোট ডোবার চেহারা নিয়েছে। রাস্তা খারাপের জন্যই এ দিন ওই বাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে বলে বাসিন্দাদের দাবি।

স্থানীয় সূত্রের খবর, পাত্রসায়র ব্লকের বেলুট রসুলপুর, বিউর বেতুড় ও পাত্রসায়র পঞ্চায়েতের আশেপাশের প্রায় ৪০টি গ্রামের কয়েক হাজার বেশি মানুষ প্রতিদিন নানা প্রয়োজনে এই রাস্তার উপর দিয়ে যাতায়াত করেন। এই রাস্তায় দৈনিক গড়ে বাস, ট্রাক, বড় ও ছোট গাড়ি মিলিয়ে হাজার খানেক গাড়ি যাতায়াত করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় রাস্তা ভাঙতে ভাঙতে বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। তবু রাস্তা সংস্কারে কোনও হুঁশ নেই প্রশাসনের। এলাকার বাসিন্দা তথা বেলুট রসুলপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূল নেতা বকুল মিদ্যা, পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য জুলফিকার আলি ভুট্টো বলেন, “বৃষ্টিতে রাস্তার অনেক জায়গায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। যান চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। প্রশাসনের কাছে আমরা রাস্তা সংস্কারের জন্য দাবি জানিয়েছি।” পাত্রসায়র ব্লক তৃণমূল নেতা নব পাল জানান, ওই রাস্তা সংস্কারের জন্য জেলা সভাধিপতিকে বলা হয়েছে।

পাত্রসায়রের বাসিন্দা স্বর্ণ ব্যবসায়ী উজ্জ্বল দত্ত বলেন, “দোকান খোলার জন্য প্রতিদিন চারবার করে পাত্রসায়র থেকে রসুলপুর যাতায়াত করতে হয়। রাস্তার অবস্থা দিন দিন খারাপ হওয়ায় আমরা সমস্যায় পড়েছি।” গাড়ি চালকদের ক্ষোভ, রাস্তার বেহাল দশার জন্য প্রায়দিনই গাড়ির যন্ত্রাংশ ভাঙছে। তাড়াহুড়ো করে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটছে।” ওই রাস্তার হাল যে বেশ খারাপ সে কথা মেনে নিয়ে পাত্রসায়রের বিডিও অপূর্বকুমার বিশ্বাস বলেন, “বর্ষার আগে ওই রাস্তায় আংশিক সংস্কার করা হয়েছিল। তা টেকেনি। তাই ওই রাস্তা সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যে পূর্ত দফতরের বাঁকুড়া ডিভিশনের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।” পূর্ত দফতরের বাঁকুড়া ডিভিশনের এক আধিকারিক জানান, ওই রাস্তা পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বর্ষার পরেই রাস্তা মেরামতির কাজ শুরু হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE