Advertisement
E-Paper

ঘণ্টা বাজাল পড়ুয়ারা, টাকা ফেলেই চম্পট

ব্যাঙ্কের দশ ইঞ্চির দেওয়ালে সিঁদ কেটেছিল পেশাদার হাত। ভিতরে ঢুকে লোহার ভল্টের চার ইঞ্চি পুরু পাতও কেটে ফেলতে সমর্থ হয়েছিল তারা। কিন্তু, বাধ সাধল নেড়ি কুকুরের দল। তাদের একটানা ‘ঘেউ ঘেউ’-এ ‘অন্য কিছু’-র ইঙ্গিত পেয়েছিলেন ব্যাঙ্ক লাগোয়া স্কুলের নৈশরক্ষী গম্ভীর সিংহ। তাঁর চিৎকারে উঠে পড়েন গ্রামবাসী এবং স্কুল হস্টেলের ছেলেপুলে। বিপদ বুঝে গুলিও চালায় ডাকাতদল। কিন্তু, সম্মিলিত প্রতিরোধে শেষ পর্যন্ত ভল্টের টাকা না নিয়েই তারা পালায়।

সমীর দত্ত

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৫:০০
এখান দিয়েই ব্যাঙ্কে ঢুকছিল ডাকাতদল। পুঞ্চার ন’পাড়ায় প্রদীপ মাহাতোর ছবি।

এখান দিয়েই ব্যাঙ্কে ঢুকছিল ডাকাতদল। পুঞ্চার ন’পাড়ায় প্রদীপ মাহাতোর ছবি।

ব্যাঙ্কের দশ ইঞ্চির দেওয়ালে সিঁদ কেটেছিল পেশাদার হাত। ভিতরে ঢুকে লোহার ভল্টের চার ইঞ্চি পুরু পাতও কেটে ফেলতে সমর্থ হয়েছিল তারা। কিন্তু, বাধ সাধল নেড়ি কুকুরের দল। তাদের একটানা ‘ঘেউ ঘেউ’-এ ‘অন্য কিছু’-র ইঙ্গিত পেয়েছিলেন ব্যাঙ্ক লাগোয়া স্কুলের নৈশরক্ষী গম্ভীর সিংহ। তাঁর চিৎকারে উঠে পড়েন গ্রামবাসী এবং স্কুল হস্টেলের ছেলেপুলে। বিপদ বুঝে গুলিও চালায় ডাকাতদল। কিন্তু, সম্মিলিত প্রতিরোধে শেষ পর্যন্ত ভল্টের টাকা না নিয়েই তারা পালায়।

বুধবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়ার পুঞ্চা থানার ন’পাড়া গ্রামে। ন’পাড়া হাইস্কুলের দেওয়াল ঘেঁষে রয়েছে বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের শাখা। সেখানে না আছে রক্ষী, না আছে সিসিটিভি। ওই ব্যাঙ্কেই টাকা লুঠের উদ্দেশ্যে বুধবার রাতে হানা দেয় জনা সাতেক সশস্ত্র দুষ্কৃতী। শেষ অবধি অবশ্য খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে তাদের। কেউ ধরা না পড়লেও টাকা যে লুঠ হয়নি, তার জন্য গ্রামবাসী ও হস্টেলের আবাসিক ছেলেদেরই সমস্ত কৃতিত্ব দিচ্ছেন ওই ব্যাঙ্কের রিজিওনাল ম্যানেজার তন্ময় মিত্র। তাঁর কথায়, “কয়েকশো পড়ুয়া আর গ্রামবাসী ডাকাতদের প্রতিরোধে এগিয়ে না এলে অনেক বড় কাণ্ড ঘটতে পারত।”

বুধবার রাতেই সেখানে তদন্তে যায় পুঞ্চা থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশ সুপার এসপি রূপেশ কুমার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য এবং ডিএসপি কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশ স্কুল গেটের কাছে ফাঁকা কার্তুজের খোল উদ্ধার করেছে। পাঁচিলের পাশ মিলেছে ১০-১২টি কার্তুজ। পুলিশ সুপার বলেন, “দেখে মনে হচ্ছে, পেশাদার দুষ্কৃতীদের কাজ।”

ঠিক কী হয়েছিল? নৈশরক্ষী গম্ভীর সিংহ জানান, কুকুরের ডাকে বাইরে বেরোতেই দুষ্কৃতীরা তাঁকে জাপ্টে ধরে। গায়ের চাদর কেটে তা দিয়েই তাঁকে বেঁধে হিন্দিতে শাসানি দেয়, না চেঁচাতে। তাদের মুখ কাপড়ে ঢাকা ছিল। কোনও ক্রমে বাঁধন খুলে স্কুলের পাঁচিল ডিঙিয়ে গম্ভীর গ্রামে ঢুকে চিৎকার শুরু করেন। ন’পাড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সাম্যবিপ্লব মাহাতো বলেন, “তখন রাত ১টা। এক জন ফোনে বললেন, ডাকাত পড়েছে। স্কুল চত্বরেই মেয়েদের একটি হস্টেল আছে। তাদের কিছু হল কি না, আশঙ্কায় দু’চার জন পড়শি ও নৈশরক্ষীকে নিয়ে আমরা স্কুলের দিকে যাই। প্রধান গেটের কাছে পৌঁছতেই হঠাৎ উল্টো দিক থেকে টর্চ জ্বলে উঠল। তার পরেই গুলি ছিটকে এল।” তাঁরা চুপিসাড়ে বয়েজ হস্টেলে গিয়ে ছাত্রদের জাগান। তারা হস্টেলের ঘণ্টা পেটাতে থাকে। গ্রামের বাকি লোকও জেগে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ চলে আসে। ডাকাতদল চম্পট দেয়। সাম্যবিপ্লববাবুর কথায়, “স্কুলে ঢুকে একটা ঘর থেকে গোঙানির শব্দ পেয়ে দেখি, আর এক নৈশরক্ষী মেঝেতে লুটিয়ে। ঘর রক্তে ভেসে যাচ্ছে।”

বৃহস্পতিবার পুলিশের উপস্থিতিতে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ সব টাকা নিরাপদে সরিয়ে ফেলেন। এ দিন ব্যাঙ্কে ঢুকে চোখে পড়ে, স্ট্রং রুমের ভল্ট উল্টে রয়েছে। শাখার ম্যানেজার নীলাচল দত্ত বলেন, “আর্থিক চাপের কারণে সব শাখায় সিসিটিভি এবং রক্ষী রাখা সম্ভব হয়নি। তবে, ভল্টে অ্যালার্ম সিস্টেম রয়েছে। ব্যাঙ্কের ছাদে আছে সাইরেন।” দুষ্কৃতীরা অবশ্য বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় সেগুলোর কোনওটাই কাজে আসেনি।

জখম নৈশরক্ষী বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

samir dutta puncha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy