Advertisement
E-Paper

চার বছরেও চালু হয়নি রেলের মাল্টি কমপ্লেক্স

ঘটনা করে পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়িত হওয়ার চার বছর পরেও তা কোনও কাজে লাগানো যায়নি। বীরভূমে দু’টি স্টেশনে রেলের দু’টি মাল্টি ফাংশনাল কমপ্লেক্সকে ঘিরে এমনই চিত্র উঠে এসেছে। যার পিছনে বাস্তব পরিস্থিতির বিচার না করেই পরিকল্পনা করার অভিযোগ তুলছেন রেলের বর্তমান কর্তারা।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৪ ০০:২২
বন্ধ হয়ে পড়ে আছে তারাপীঠ (বাঁ দিকে) ও রামপুরহাট (ডান দিকে) স্টেশনের মাল্টি ফাংশনাল কমপ্লেক্স। ভেঙেচুরে পড়ছে ভবনের বিভিন্ন অংশ। ছবি: অনির্বাণ সেন।

বন্ধ হয়ে পড়ে আছে তারাপীঠ (বাঁ দিকে) ও রামপুরহাট (ডান দিকে) স্টেশনের মাল্টি ফাংশনাল কমপ্লেক্স। ভেঙেচুরে পড়ছে ভবনের বিভিন্ন অংশ। ছবি: অনির্বাণ সেন।

ঘটনা করে পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়িত হওয়ার চার বছর পরেও তা কোনও কাজে লাগানো যায়নি। বীরভূমে দু’টি স্টেশনে রেলের দু’টি মাল্টি ফাংশনাল কমপ্লেক্সকে ঘিরে এমনই চিত্র উঠে এসেছে। যার পিছনে বাস্তব পরিস্থিতির বিচার না করেই পরিকল্পনা করার অভিযোগ তুলছেন রেলের বর্তমান কর্তারা।

রেল সূত্রে খবর, ২০০৯-১০ আর্থিক বছরে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ানোর জন্য রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলের বিভিন্ন ডিভিশনের ৫০টি স্টেশনকে চিহ্নিত করে রেলের পড়ে থাকা জমিতে ওই মাল্টি ফাংশনাল কমপ্লেক্সগুলি গড়ে তোলার ঘোষণা করেছিলেন। জায়গার পরিমাপ অনুযায়ী রেস্তোঁরা, বইয়ের স্টল, ওষুধের দোকান-সহ নানা আধুনিক পরিষেবার স্টল থাকবে সেখানে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তালিকায় থাকা বীরভূমের রামপুরহাট ও তারাপীঠ স্টেশন চত্বর এলাকায় এক বছরের মধ্যেই কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হয়। কিন্তু উদ্বোধন হয়ে যাওয়ার পরেও এখনও পর্যন্ত তা চালুই হয়নি! এই ক’বছরে ব্যবহার না হওয়ায় ঘরগুলির কিছু কিছু অংশ ভেঙে পড়ছে। নজরদারির অভাবে জানলার কাচ খুলে নিয়ে যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। নোংরা আবর্জনায় ভরেছে ভবনের আশপাশ।

সদ্য প্রাক্তন সাংসদ শতাব্দী রায় এক সময় রেলের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি-ই ওই দু’টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন। প্রকল্পের এই ‘ব্যর্থতা’য় শতাব্দী অবশ্য এর দায় বর্তমান রেল বোর্ডের ঘাড়েই চাপিয়েছেন। তাঁর দাবি, “আমরা কেন্দ্র সরকার থেকে বেরিয়ে আসার পরে যাঁরা রেল দফতর সামলাচ্ছেন, তাঁরা ওই পরিকল্পনা নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ দেখাননি। সদর্থক পদক্ষেপের অভাবেই রেল যে টাকা খরচ করেছে, তা কাজে লাগছে না।” তাঁর আশ্বাস, আগামী দিনে সুযোগ পেলে এ ব্যাপারে রেলকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলবেন। তৃণমূলের সদ্য প্রাক্তন ওই সাংসদের যুক্তিকে উড়িয়ে দিয়ে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, “আসলে তৃণমূলের রেলমন্ত্রীরা কোনও রকম চিন্তা-ভাবনা না করেই যে যা খুশি করেছেন। ফলে তাঁদের আমলে ঝুড়ি ঝুড়ি প্রকল্প উদ্বোধন হয়ে থাকলেও, অনেকগুলিরই বাস্তব ভিত্তি নেই। আর তাই তা বাস্তবায়িত করতে সমস্যা হচ্ছে।” তাঁর দাবি, বর্তমান রেল দফতর যে সব পরিকল্পনা নিয়েছে, তাতে ভবিষ্যৎ চিন্তা-ভাবনা করেই করা হচ্ছে।

কী কী থাকার কথা কমপ্লেক্সে?

জায়গার পরিমাপ অনুযায়ী সেখানে শপিং মল, রেস্তোঁরা, হোটেল, বইয়ের স্টল, ওষুধের দোকান, সাইবার ক্যাফে, টেলিফোন বুথ, এটিএম কাউন্টার, গাড়ি পার্কিং-এর ব্যবস্থা। ওই আর্থিক বছরে ২৪টি স্টেশনে কাজ শুরু হয়। তার মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১২টি স্টেশনের মধ্যে রামপুরহাট এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে তারাপীঠ স্টেশনে মাল্টি ফাংশন্যাল কমপ্লেক্স গড়ে ওঠে। তবে, প্রকল্পের জন্য ঠিক কত টাকা খরচ হয়েছে, তা কেউ-ই জানাতে পারেননি।

রামপুরহাট স্টেশনের সামনে ১,৯৬৫ বর্গফুট জায়গার মধ্যে পার্কিং, খাবারের স্টল, সাইবার ক্যাফে, ওষুধ দোকান, এটিএম কাউন্টার, বুকস্টোর ও টেলিফোন বুথের জন্য ঘর তৈরি করা হয়। এক তলার এই ঘরগুলি কাচ দিয়ে ঘেরা এবং তার সামনে শাটার বসানো আছে। শৌচাগার, পানীয় জল এবং বিদ্যুতের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যবহারের অভাবে ঘরের পূর্ব দিকের দেওয়ালের একাংশ ভেঙে পড়ছে। টাইলস ভেঙে গিয়েছে। ওই জায়গা এখন ভবঘুরেদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। নোংরা আবর্জনায় ভরে গিয়েছে। একই ভাবে তারাপীঠ স্টেশনের সামনে ৯১৫ বর্গফুট জায়গা মাল্টি ফাংশনাল কমপ্লেক্স গড়ার জন্য নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৬৮৫ বর্গফুট জায়গায় চারটি ঘর তৈরি করা হয়েছে। ওই ঘরগুলিও ব্যবহারের অভাবে ভেঙেচুরে পড়ছে। রামপুরহাটের বাসিন্দা সুশান্ত দাসের অভিযোগ, “ঘরের কাচ তো চুরি যয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যা নামেতেই অসামাজিক কাজকর্ম শুরু হয়ে যায়।”

যাত্রী এ পলরাজ বলেন, “অনেক সময় টিকিট কাটার জন্য সাইবার ক্যাফের সাহায্য নিতে হয়। স্টেশনের কাছাকাছি যদি এই সব পরিষেবা চালু হয়, তা হলে সময় বাঁচে।” আর এক যাত্রী অসীম চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “রামপুরহাট একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। অনেক যাত্রী এই স্টেশনে প্রতিদিন যাতায়াত করে। তাই গুরুত্ব বুঝে রেল যে মাল্টি ফাংশনাল কমপ্লেক্স গড়ে তুলেছে, তা শীঘ্রই চালু করলে ভাল হবে।” রামপুরহাট ডেলি প্যাসেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক নিয়ামত আলি বলেন, “শুনেছিলাম ওই ঘরগুলি বিলির জন্য দরপত্র ডাকা হয়েছিল। কিন্তু মূল্য বেশি হওয়ায় তা কেউ নিতে চাইছেন না। তবে যাই হোক, ঘরগুলি যত দ্রুত সম্ভব বিলির বন্দোবস্ত না করা হলে সেগুলি আর কাজে লাগবে না। সব কিছু ফের নতুন করে করতে হবে।”

পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের ম্যানেজার অনির্বাণ দত্ত-র প্রতিক্রিয়া, “ওই ভবনগুলি যে সময়ে উদ্বোধন হয়েছিল, তখন আমি ডিআরএম ছিলাম না। কাজেই কী কারণে ভবনগুলি নির্মাণ করা হয়েছিল, ফাইল দেখে বলতে হবে। তা ছাড়া, সেগুলির বর্তমান পরিস্থিতি কী, খোঁজ নিয়ে দেখব।”

এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, তা হলে তৈরি হওয়া ওই ভবনগুলির ভবিষ্যৎ কী? তার অবশ্য সদুত্তর মেলেনি কোনও তরফ থেকেই।

apurba chattopadhay rampurhat multi complex railway
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy