দু’দিন আগে ছিল কিলো প্রতি আঠারো টাকা। দু’দিনের ব্যবধানে এক লাফে সেই দাম কিলো প্রতি দু’টাকা বেড়ে গেল। রামপুরহাট শহরের বাজার ঘুরে আলুর দামের এই চিত্র পাওয়া গিয়েছে। সরকারি নজরদারি-সহ এর জন্য কৃত্রিম ভাবে তৈরি যোগানের অভাবকে শহরের আড়তদারেরা দায়ী করছেন। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে সরকার নির্ধারিত আলুর কিলো প্রতি ১৪ টাকা দরের উপরেও।
রামপুরহাট শহরে মঙ্গলবার সকালে এলাকার বড় হাট, ভাঁড়শালাপাড়া, ডাকবাংলাপাড়া এই তিনটে বাজারে কিলো প্রতি ২০ টাকা দরে আলু বিক্রি করতে দেখা যায়। এই বাজারগুলি থেকে আবার এক বস্তা কিংবা দু’বস্তা আলু নিয়ে শহরের ভিতরে ছোট খাটো দোকানে বিক্রেতারা ২৫ টাকা কিলো দরে আলু বিক্রি করছেন। রামপুরহাট শহরের আলুর পাইকারি বিক্রেতা বিজয় জয়শোয়াল জানান, রামপুরহাট শহরে প্রতিদিন পাঁচ গাড়ি আলু বর্ধমান, বাঁকুড়ার কোতুলপুর থেকে নিয়ে আসা হয়। এক একটি গাড়িতে কমপক্ষে ২৫০ বস্তা আলু থাকে। সেই আলুগুলি শহরের বিভিন্ন আড়তদারদের পাইকারি হারে বিক্রি করা হয়। পাইকারি আলু বিক্রেতা দীলিপ জয়শোয়াল জানান, ৩ তারিখ পর্যন্ত বহন খরচ নিয়ে আলুর দাম ছিল ৫০ কেজিতে ৭০০ টাকা থেকে ৭১০ টাকা। মঙ্গলবার সেই দর গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৭২০ টাকা থেকে ৭৩০ টাকায়। অর্থাৎ, কুইন্টাল পিছু ১০০ টাকা বেশি দরে আলু বাজারে আনতে হয়েছে।
পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কোল্ড স্টোর থেকে মাল বের না হওয়ার জন্য আলুর দাম হঠাৎ করে বাড়িয়ে দিয়েছে বর্ধমান এবং বাঁকুড়ার ব্যবসায়ীরা। কেন বর্ধমান বা বাঁকুড়া থেকে বেশি দামে আলু আনতে হয়? সেই প্রশ্নে রামপুরহাটের আলুর আড়তদারদের বক্তব্য, সাঁইথিয়া থেকে তাঁদের আলু দেওয়া হয় না। তাঁদের অভিযোগ, উলটে সাঁইথিয়ার বেশির ভাগ আলু ঝাড়খন্ডে চলে যায়। রামপুরহাটের আলুর পাইকারি বিক্রেতারা জানান, সাঁইথিয়ার আলুর কোল্ড স্টোরের মালিক বা মজুতদারেরা আলু দিতে চাইলে তাঁদের কাছ থেকে আলু কিনতে অসুবিধা নেই।
এ দিকে রামপুরহাট বাজারে নিশ্চিন্তপুর এলাকার আলুর খুচরো ব্যবসায়ী বলেন, “রামপুরহাট বাজারে আলু আজকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, কালকে যে ২২ টাকায় হবে না কে বলতে পারে। কারণ, আলুর দরে সরকার নির্ধারিত দাম বেঁধে দিলেও পাইকারদের কাছ থেকে যে দরে কিনতে হচ্ছে, তাতে কিছুটা লাভ রেখেই খুচরো ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি করবে।” এই পরিস্থিতিতে বাড়ির হেঁসেলে আলুর পরিমাণ কিছুটা হলেও কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন অনেকেই। সেক্ষেত্রেও আবার পরিবারের গৃহিনীদের মুখ ভারী হয়। কারণ সাধারণ বাঙালির রোজকার হেঁসেলে আলুর যে অপরিহার্য ভূমিকা! কথাগুলি বলছিলেন রামপুরহাট ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পরিমল মাহান্ত। তবে সাধারণ ক্রেতা থেকে বিক্রেতা সকলের প্রশ্ন, সরকার নির্ধারিত ১৪ টাকা কিলো প্রতি আলু বিক্রির ঘোষণাই কি সার হল? বাজারে সরকারি তরফ থেকে নজরদারিই বা কোথায় হচ্ছে?
কৃষি বিপণন দফতরের অধীন রামপুরহাট বাজার নিয়ন্ত্রিত সমিতির সম্পাদক নৃপেনকুমার দত্ত বলেন, “আমাদের কাজ হচ্ছে সরকারকে প্রতিদিনের বাজার দর বলা। বাজার দর তো আমরা নিয়ন্ত্রণ করি না। সরকার থেকে কোনও নির্দেশ আসলে কমিটি গঠন করে নজরদারি করা হয়। রামপুরহাট মহকুমা শাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, “বাজার নিয়ন্ত্রিত সমিতির সম্পাদককে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে আমাকে রিপোর্ট জমা দিতে বলব। তার পরে ব্যবস্থা নেব।” কৃষি বিপণন দফতরের জেলা আধিকারিক মহম্মদ আকবর আলি বলেন, “এ বছরের সরকার নির্ধারিত আলুর দাম কিলো প্রতি ১৪ টাকা। সেখানে খোলাবাজারে কোথাও কোথাও ২-৩ টাকা বেশি দর নেওয়া হচ্ছে বলে শুনছি। কিন্তু যদি ২০ টাকা দর হয়, তা হলে নিশ্চিত বুঝতে হবে, ওই বাজারে কালোবাজারি হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আমরা কড়া ব্যবস্থা নেব।”
দর বাড়লে নিশ্চিত বুঝতে হবে, বাজারে কালোবাজারি হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আমরা কড়া ব্যবস্থা নেব।
মহম্মদ আকবর আলিজেলা আধিকারিক, কৃষি বিপণন দফতর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy