ধৃত তৃণমূল কর্মী রবিউল শেখ (বাঁ দিকে প্রথম জন)। শুক্রবার রামপুরহাট থানায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
এক জন পুরসভার অস্থায়ী কর্মী, এলাকায় তৃণমূলের পরিচিত মুখ। অন্য জন, সিভিক পুলিশ। রামপুরহাটে লক্ষাধিক টাকার জোড়া ছিনতাই-কাণ্ডে এখন এমন দু’জনই পুলিশের নিশানায়। ব্যাঙ্কের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সাত দিনের ভিতর ওই রোমহর্ষক ছিনতাইয়ের ঘটনার কিনারা করা গিয়েছে বলে পুলিশের দাবি।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রবিউল শেখ নামে ওই পুরকর্মী-সহ ঘটনায় আরও চার জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ওই সিভিক পুলিশ কর্মী অবশ্য ধরা পড়েননি। মাড়গ্রাম থানার ভল্লা ক্যানাল এলাকা থেকে ওই পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, বাকি ধৃতেরা হল সাবির শেখ, শ্রীপন শেখ, সাদের শেখ এবং মইনুল শেখ। প্রত্যেকেরই বাড়ি নলহাটি শহরে। ব্যাঙ্ক থেকে সমবায় সমিতির টাকা তুলে ফেরার পথে গত ৬ জুন সকালে দশ মিনিটের মধ্যে রামপুরহাট শহরে দু’টি লক্ষাধিক টাকার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল। দু’টি ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীরা মোটরবাইকে চেপে এসে ছিনতাই করে পালিয়েছিল। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যে পাঁচ জন ধরা পড়লেও পুলিশ অবশ্য ছিনতাই হওয়া টাকা এখনও উদ্ধার করতে পারেনি। শুক্রবার দুপুরে এসডিপিও (রামপুরহাট) কোটেশ্বর রাও বলেন, “দু’টি ঘটনায় একটিই চক্র জড়িত। রীতিমতো ছক কষে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ইতিমধ্যেই পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের সন্দেহের তালিকায় নলহাটির এক সিভিক পুলিশকর্মীও রয়েছেন। ঘটনায় তিনি এবং হাসিবুল শেখ নামে আরও এক জনের খোঁজ চলছে।” এ দিন রামপুরহাট আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ধৃতদের ১০ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
রামপুরহাট বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে বাড়ি ফেরার পথে প্রথম ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটেছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ব্যাঙ্কের সিসিটিভি ফুটেজ ভাল করে খতিয়ে দেখে পুলিশ নলহাটি পুরসভার কর্মী রবিউল শেখকে শনাক্ত করেন। ব্যাঙ্কে তার গতিবিধি পুলিশের কাছে অত্যন্ত সন্দেহজনক ঠেকেছিল। এর পরে দিন কয়েক আগেই ওই ঘটনায় পুলিশ নলহাটি থেকে কয়েক জনকে আটক করা হয়েছিল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই জোড়া ছিনতাইয়ের ঘটনায় রবিউল-সহ সাত জনের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে। বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশ তাদের মধ্যে পাঁচ জনকে পাকড়াও করে। পুলিশের দাবি, জেরায় রবিউল নিজের অপরাধ স্বীকার করেছে।
বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে আর্থিক লেনদেন বন্ধ থাকায় গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে অন্য ব্যঙ্ক থেকে টাকা তুলে সমিতিগুলি পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে। পুলিশের দাবি, এলাকার কোন সমবায় সমিতি কবে কোথায় টাকা তুলতে যাচ্ছে, এ বিষয়ে নলহাটি থানা এলাকার ওই সিভিক পুলিশ কর্মী খবর রাখছিলেন। ওই পাঁচ জনের সঙ্গে মিলে তিনি ছিনতাইয়ের ছক কষেন। এ ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের কারও কারও সঙ্গে ছিনতাইকারীদের জড়িত থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ছিনতাইকারীদের জেরা করে জানা যায়, দু’টি সমবায় সমিতির দুই কর্মী যে রামপুরহাটে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে যাচ্ছেন, সে খবর ওই সিভিক পুলিশ কর্মী তাদেরকে জানিয়েছিলেন। সেই মতো নলহাটি থেকে তিনটি মোটরবাইকে ছ’জনই সকাল ১০টা নাগাদ রামপুরহাটে চলে আসে। শহরে ঢুকে তারা দু’জন করে তিন ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এক দল যায় বাসস্ট্যান্ডের দিকে, আর এক দল কামারপট্টির দিকে। বাকি দু’জন তৃতীয় মোটরবাইকে চেপে শহরে পুলিশের গতিবিধির দিকে নজর রাখছিল। ছিনতাইয়ের পরে তিনটি দলই নলহাটি ফিরে যায়। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে পুরনো সিনেমা হলের পিছনে সিভিক পুলিশ কর্মী এবং বাকি ছ’ জন নিজেদের মধ্যে টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে চলে যায়।
পুরসভার কর্মীর এত বড় ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা প্রকাশ্যে আসার পরে দৃশ্যতই অস্বস্তিতে তৃণমূল পরিচালিত নলহাটি পুরসভা। পুরপ্রধান রাজু সিংহ মুখে অবশ্য বলছেন, “রবিউল শেখকে ছ’বছর আগে টোল আদায়ের জন্য অস্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। কাজের সময় বাদ দিয়ে অন্য সময় কে কী করছে, তা আমরা কী করে দেখব?” তবে, ঘটনার কথা জেনে পুরসভার পরবর্তী বোর্ড অফ কাউন্সিলের বৈঠকে রবিউল শেখকে রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তিনি জানিয়েছেন। অন্য দিকে, রবিউল শেখকে দলীয় কর্মী বলে স্বীকার করলেও তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব ওঝার দাবি, “যাঁরা তৃণমূল কর্মী, তাঁদের ব্যক্তিগত জীবন আমাদের অনেকেরই জানা নেই। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, জানা নেই। তবে, রবিউল কোনও অপরাধ করে থাকলে তাঁকে দলে রাখা হবে কিনা, তা আলোচনা করা হবে।” পুলিশ অবশ্য এখনই অভিযুক্ত সিভিক পুলিশ কর্মীর নাম প্রকাশ্যে আনতে চায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy