Advertisement
E-Paper

জওয়ান এলেই বিক্রি বেশি, ভোটের দিকে তাকিয়ে থাকেন রাজেন, সন্তোষ

কেউ চা, তেলে ভাজার দোকান চালান। কেউ বা বিক্রি করেন ডাব বা ঠান্ডা পানীয়। অধিকাংশই সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। এ যাবৎ কারও পরিবারের কেউ প্রার্থী হননি। প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। তাই রাজনৈতিক তাপউত্তাপ নিয়ে অধিকাংশের মাথা ব্যথাও নেই। তবুও নির্বাচনের জন্য বিশেষত লোকসভা নির্বাচনের অপেক্ষায় পাঁচ বছর তাকিয়ে থাকেন স্বল্প পুঁজির ওই সব দিনআনা দিনখাওয়া ব্যবসায়ীরা।

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৪০
রুটি কিনে হনুমানকে খাওয়াচ্ছেন জওয়ানেরা। —ফাইল চিত্র।

রুটি কিনে হনুমানকে খাওয়াচ্ছেন জওয়ানেরা। —ফাইল চিত্র।

কেউ চা, তেলে ভাজার দোকান চালান। কেউ বা বিক্রি করেন ডাব বা ঠান্ডা পানীয়। অধিকাংশই সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। এ যাবৎ কারও পরিবারের কেউ প্রার্থী হননি। প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। তাই রাজনৈতিক তাপউত্তাপ নিয়ে অধিকাংশের মাথা ব্যথাও নেই। তবুও নির্বাচনের জন্য বিশেষত লোকসভা নির্বাচনের অপেক্ষায় পাঁচ বছর তাকিয়ে থাকেন স্বল্প পুঁজির ওই সব দিনআনা দিনখাওয়া ব্যবসায়ীরা। কারণ, লোকসভা নির্বাচনগুলি মূলত পরিচালিত হয় বাইরে থেকে আস কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্যে। আর ওই সব বাহিনীর সৌজন্যে বেশ কিছু দিন ধরে বাড়তি দু’পয়সা পাওয়ার সুযোগ পান তাঁরা।

জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বারে জেলার ২২১৭ জায়গায় বুথের সংখ্যা ২৯৬২টির মধ্যে বিগত নির্বাচনগুলিতে যেখানে মোট ভোটারের নিরিখে দশ শতাংশ ভোট কম পড়েছে এবং যেখানে কোনও একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল একক ভাবে ৭৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে সেগুলি স্পর্শকাতর বুথ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে প্রশাসনের প্রাথমিক হিসেবে ধরা হয়েছে। এছাড়াও ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী এলাকার বুথগুলি একই পর্যায়ে পড়বে বলে জানা গিয়েছে। এ বারের সেক্টর অফিসের সংখ্যা ২৫২টি ইতিমধ্যে নলহাটি, খয়ারাশোল, মহম্মদবাজারে ৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী নিযুক্ত রয়েছে। আরও একশো কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর। অন্য বারের মতোই এ বারও নির্বাচনের আট থেকে দশ দিন আগে ওই সব কেন্দ্রীয় বাহিনী সেক্টর অফিসগুলিতে পৌঁছে যাবে। আর তাদের আসার প্রতীক্ষায় দিন গুনছেন সন্তোষ মণ্ডল, রমজান আলি, রাজেন দাসরা।

ময়ূরেশ্বর থানার লোকপাড়া হাইস্কুলে বরাবর বিভিন্ন নির্বাচনে সেক্টর অফিস হয়। ওই অফিস থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে চা এবং খাবারের দোকান রয়েছে সন্তোষ মণ্ডলের। বছর কুড়ি ধরে দোকান চালাচ্ছেন সন্তোষবাবু। অন্য নির্বাচনের পাশাপাশি চারটি লোকসভা নির্বাচনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। বললেন, “লোকসভা নির্বাচন উপলক্ষে দিন দশেক আগেই সেক্টর অফিসে পৌঁছয় কেন্দ্রীয় বাহিনীর দল। তারা টোস্ট, বিস্কুট, চায়ের পাশাপাশি লিটার লিটার দুধ চায়। তবে সবেতেই চিনির পরিমাণ একটু বেশি এবং খাঁটি হওয়া চাই। চাহিদা মতো খাবার পেলে টাকা পয়সা নিয়ে কোনও চিন্তা করতে হয় না। কয়েকটা দিন আমাদের ভালই উপরি রোজগার হয়।” একই অভিজ্ঞতা নানুরের রাজেন দাসেরও। নানুর ব্লক অফিস সংলগ্ন এলাকায় বছর দশেক ধরে খাবারের দোকান চালাছেন তিনি। তাঁর কথায়, “কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা তাদের পছন্দ সই খাবার পেলে পয়সা দিতে কার্পণ্য করে না।” লাভপুরের বাসস্ট্যান্ডে ঠান্ডা পানীয় এবং ডাব বিক্রি করেন বছর চল্লিশের সঞ্জিত মণ্ডল। তিনিও জানালেন, অধিকাংশ লোকসভা নির্বাচন সাধারণত গ্রীষ্মকালে হয়। ভোটের দিন তো বটেই, ভোটের অনেক আগে থেকেই এলাকায় টহল দিতে দিতে গলা ভিজিয়ে নেওয়ার জন্য জওয়ানদের কাছে ঠান্ডা পানীয় এবং ডাবের চাহিদা তুঙ্গে ওঠে। তবে চাহিদা অনুযায়ী ঠান্ডা পানীয় মিললেও ডাব জোগাড় করার জন্য গ্রামগঞ্জের বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে ঘুরে হয়রান হতে হয়।

কেন্দ্রীয় বাহিনীর মানবিকতার ছবি ধরা রয়েছে আমোদপুরের মিষ্টি বিক্রেতা নির্মল রুজের স্মৃতিতে। তিনি বলেন, “নিজেদের খাওয়া তো বটেই, দুঃস্থ পথচারী, ভিক্ষুখ এমনকী কুকুর, হনুমানদের জন্য আমাদের কাছ থেকে খাবার কিনে খাওয়ায় জওয়ানেরা।” তারই মধ্যে কিছুটা নস্টালজিক সুর শোনা গেল তারাপীঠ লাগোয়া একটি টেলিফোন বুথের মালিক কমল হালদারের কথাতে। তিনি বলেন, “বছর পনেরো আগেও মোবাইল ফোনের এত চল ছিল না। সে সময় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা বুথে এসে তাদের পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলত। শুনতে ভালই লাগত। আর এখন ৫০০, ১০০ টাকার নোট ফেলে দিয়ে রিচার্জ কুপন নিয়ে চুপচাপ চলে যায়। আলাপ-পরিচয়ের সুযোগটুকু ঘটে না।”

argha ghosh mayureswar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy