ঝুলে থাকা বিদ্যুতের তার সরানোর টাকা দেবে কে? এই নিয়ে বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির সঙ্গে পূর্ত দফতরের (সড়ক) টানাপোড়েনে জনবহুল এলাকার রাস্তার উপর দিয়ে যাওয়া তার ঝুলে ছিল দীর্ঘদিন ধরে। ফলে তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার মতো দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছিল। কিন্তু কেউ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছিল না। অগত্যা এলাকার বাসিন্দারাই তার ব্যবস্থা করে নিয়েছেন এবং কাজটা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও নিজেদের স্বার্থে তাঁরা রাস্তার অধিকাংশ জায়গায় গর্ত করে বাঁশ পুঁতে তার উঁচু করে দিয়েছেন। সেটা করতে গিয়েই রাস্তার কিছুটা অংশ দখল হয়ে গিয়েছে। এর ফলে বিপদ থেকেই গিয়েছে। সমস্যাটি নলহাটি থানা এলাকার।
বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এলাকার উপর দিয়ে যাওয়া পাথর, বালি বোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় প্রায়ই ছিঁড়ে পড়ছে বিদ্যুতের তার। বিদ্যুৎ দফতরকে বার বার বলা হলেও তারা বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামায়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাকীর। তাই গ্রামবাসীদের একাংশ নিজেরাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বাঁশ পুঁতে ঝুলে থাকা বিদ্যুতের তার তুলে দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, উদয়নগর গ্রামের মধ্যে হাইস্কুল এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে বিপজ্জনক ভাবে বিদ্যুতের তার ঝুলে ছিল। ওই অবস্থায় দু’টি স্কুলের ছেলেমেয়েরা প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত করছে। যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এই আশঙ্কা থেকে একটি খুঁটি বসানোর জন্য বিদ্যুৎ দফতরে বারে বারে জানানো হয়েছে। তার পরেও সেখান থেকে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না দেখে, এই ভাবে বাঁশ পুঁতে বিকল্প ব্যবস্থা করে নিতে হয়েছে। এলাকার বাসিন্দা রকি শেখ, ছোটন শেখরা বলেন, “বৈধরা থেকে নলহাটি যাওয়ার পাকা রাস্তার উপর দিয়ে পাথর, বালি বোঝাই ট্রাক যাতায়াত করে। দীর্ঘ দিন থেকে বিদ্যুতবাহী তার ঝুলে থাকার জন্য, যানবাহনের ধাক্কায় তার ছিঁড়ে যেত। এর ফলে এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত এলাকায়। সে জন্য নিজেরাই বিকল্প ব্যবস্থা করে নিয়েছি। তারপর থেকে অবশ্য আর তার ছিঁড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি।”
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির নলহাটি গ্রাহক পরিসেবা কেন্দ্রের সহকারী বাস্তুকার সুপ্রিয় দে বলেন, “বৈধরা থেকে নলহাটি যাওয়ার রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। রাস্তা উঁচু হওয়ার কারণে উদয়নগর নয় হরিদাসপুর, চাচকা, সোনারকুণ্ড এলাকায় ওই রকম করে রাস্তার উপর বাঁশ পুঁতে বিদ্যুৎবাহী তার উঁচু করে নিয়েছেন এলাকার মানুষ।” তাঁর সাফাই, “যখন রাস্তা সংস্কার করা হয়, তখন পূর্ত দফতর (সড়ক) এগুলো দেখভাল করে আমাদেরকে জানানোর কথা। তারা আমাদেরকে জানানোর পরে আমরা কোটেশন করে বরাদ্দ খরচ তাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হত। তার পরে পূর্ত দফতর (সড়ক) আমাদের টাকা দেওয়ার পর আমরা কাজ করতে পারব।” সুপ্রিয়বাবুর দাবি, “একই ভাবে তেজহাটি থেকে কুরুমগ্রাম রাস্তা সংস্কার করায় রাস্তা উঁচু হয়ে গিয়েছে। ফলে রাস্তার উপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের তার নীচু হয়ে গিয়েছে। দু’টি ক্ষেত্রে পূর্ত (সড়ক) দফতরের সহকারী বাস্তুকার ও পূর্ত দফতরকে কোটেশন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের তরফ থেকে কোনও রকম পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।”
পূর্ত দফতরের (সড়ক) রামপুরহাটের সহকারী বাস্তুকার সুজয় রায় প্রতিহার দাবি করেন, “বৈধরা থেকে নলহাটি রাস্তা সংস্কারের জন্য বিদ্যুৎবাহী তার নীচু হয়ে যাওয়ার পর, সেই তার উঁচু করার জন্য খরচ আমাদের বহন করতে হবে এরকম কোনও নিয়ম নেই। আর নিয়ম থাকলেও রাস্তা সংস্কারের জন্য যে খরচ ধরা হয়েছিল, তার মধ্যে ওই ধরনের কোনও খরচের কথা উল্লেখ ছিল না। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির নলহাটি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র থেকে যে কোটেশন পাঠানো হয়েছিল, আমি সেই কোটেশনের কপি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।” অন্য দিকে, তেজহাটি থেকে কুরুমগ্রাম রাস্তার মধ্যে ঝুলে যাওয়া তার ঠিক করার ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোনও চিঠি তাঁর দফতরে এসে পৌঁছয়নি বলে জানিয়েছেন পূর্ত দফতরের রামপুরহাট বিভাগের সহকারী বাস্তুকার প্রিয়ঙ্কর মাজি। তিনি বলেন, “তাঁরা পাঠালে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অবশ্যই নেব।”