Advertisement
E-Paper

তুড়ি মেরে গরম ওড়াচ্ছেন দুই প্রার্থীই

ভোটের ময়দানে তারা যুযুধান হলে কী হবে, একটা ব্যাপারে দু’দলই একমত। ভোটের বাজারে বাঁকুড়া জেলা সিপিএম এবং তৃণমূল, দু’দলের কাছেই ভিলেন হল গরম। ক্যালেন্ডারে এখনও মার্চ চলছে। এরই মধ্যে তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে জেলা। ‘লু’-এর দাপটে বেলা হতেই রাস্তাঘাট সুনসান। প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। এই অবস্থায় দু’দলই উদ্বিগ্ন নিজেদের প্রার্থীদের নিয়ে।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেবব্রত দাস

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৪ ০১:০৯

ভোটের ময়দানে তারা যুযুধান হলে কী হবে, একটা ব্যাপারে দু’দলই একমত। ভোটের বাজারে বাঁকুড়া জেলা সিপিএম এবং তৃণমূল, দু’দলের কাছেই ভিলেন হল গরম।

ক্যালেন্ডারে এখনও মার্চ চলছে। এরই মধ্যে তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে জেলা। ‘লু’-এর দাপটে বেলা হতেই রাস্তাঘাট সুনসান। প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। এই অবস্থায় দু’দলই উদ্বিগ্ন নিজেদের প্রার্থীদের নিয়ে। সিপিএমের চিন্তা, তাদের বর্ষীয়ান প্রার্থী বাসুদেব আচারিয়াকে নিয়ে। গরমের মধ্যে তাঁর বেরনো ঠেকাতে এমনকী প্রচারসূচিও বদলাতে চলেছেন জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। তৃণমূলের ভাবনা আরও জটিল। কারণ, তাদের প্রার্থী যে জেলায় ‘বহিরাগত’ মুনমুন সেন! একে তারকা, তায় বাঁকুড়া গরমের অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে।

“কত ভোট পার করলাম গরমের মধ্যে। মাটি যতই তেতে থাকুক, মানুষের কাছে তো আমাকে পৌঁছতেই হবে।”—বাসুদেব আচারিয়া।

“ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদে শ্যুটিং করেছি। আমি গরমকে তোয়াক্কা করি না! ওটা আমার পথে বাগড়া দিতে পারবে না।” —মুনমুন সেন।

দলের নেতা-কর্মীদের উদ্বেগ যতই থাক, প্রার্থীরা কিন্তু গরমকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার মুডেই! সে জন্যই বারবার দলের কর্মীদের বারণ উপেক্ষা করেই চৈত্রের তপ্ত দুপুরে পায়ে হেঁটে মাঠঘাট, এ পাড়া ও পাড়া এক করেছেন বাসুদেববাবু। বয়স ৭২ পেরিয়ে যাচ্ছে। তাতে কী? মিছিলে সামিল তরুণদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গটগট করে সমানে হাঁটছেন এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ। রবিবারও ৪১.৫ ডিগ্রির তীব্র গরমকে উপেক্ষা করেই ভরদুপুরে বাসুবাবু প্রচার সেরেছেন বাঁকুড়া শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। সিপিএমের বাঁকুড়া শহর জোনাল কমিটির সদস্য অশোক রায় বললেন, “কত নিষেধ করলাম দুপুরে বেরোতে। উনি শুনলেন না কোনও কথাই।”

সেই স্পিরিটেই সোমবারও বাসুদেববাবু চষে বেড়ালেন জঙ্গলমহলের রাইপুর ব্লকের লাগদা, গোজদা, ফুলকুসমা এলাকা। কোথা থেকে পান এত এনার্জি? গরমে অসুবিধা হয় না? বাঁকুড়ার সিপিএম প্রার্থী বলে দিলেন,“শোন ভাই, গরমকে আমি মোটেও ডরাই না। আমি তো এই মাটিরই ছেলে। গ্রামের মানুষ। ছোট থেকে এই জলবায়ুকে দেখছি। কত ভোট পার করলাম গরমের মধ্যে। মাটি যতই তেতে থাকুক, মানুষের কাছে আমাকে পৌঁছতেই হবে!”

বাসুদেববাবু যাই-ই বলুন না কেন, স্রেফ তাঁর স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই এ বার কড়া হচ্ছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র। “গরমের জন্য দুপুরে প্রচার করা চলবে না—এ কথা আমি বাসুদাকে বারবার বুঝিয়েও পারিনি। এ বার ওঁর শরীরের জন্যই জোর করে ওঁকে আটকাতে প্রচারের সময়সূচি দলীয় ভাবে পরিবর্তন করছি।”

অন্য দিকে, এখনও পথে না নামলেও কিছুদিন আগে বাঁকুড়া স্টেডিয়ামে কর্মিসভা করতে এসে গরমকে ফুঁ মেরে উড়িয়ে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেনও। বলেছেন, “দক্ষিণ ভারতের তীব্র গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদে দাঁড়িয়ে শু্যটিং করেছি। আমি গরমকে তোয়াক্কা করি না! ওটা আমার পথে কোনও বাগড়া দিতে পারবে না।”

যদিও বাসুদেববাবুর মতোই নিজেদের প্রার্থীকেও গরম থেকে যথাসম্ভব আড়ালে রাখতে কোমর বেঁধে নেমেছেন জেলা তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতা অরূপ চক্রবর্তী ও অরূপ খা।ঁ তারকা প্রার্থীকে যতটা সম্ভব দাবদাহ থেকে দূরে রাখার চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। আজ, মঙ্গলবারই বাঁকুড়ায় আসছেন মুনমুন। করবেন একাধিক কর্মিসভা। নামবেন পথেও। ফলে, কাঠফাটা রোদ্দুর ও তীব্র দাবদাহকে মাথায় রেখেই মুনমুনের সফরসূচি সাজাতে হচ্ছে তৃণমূলকে। যার ফলে এ যাত্রা আর বাঁকুড়া শহরে তাঁদের দলীয় প্রার্থীর রোড-শো হচ্ছে না বলেই জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতারা।

দলীয় ভাবে জানানো হয়েছে, আজ মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল, বিকেল ও রাতে তিনটি করে সভা করবেন মুনমুন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ বলেন, “চাঁদিফাটা গরমের জন্যই আমরা দুপুরে কোনও সভা করব না। এতে প্রার্থী ও কর্মী সকলেরই লাভ হবে।” তিনি জানান, মুনমুন প্রথম সভা করবেন মেজিয়ায়। তার পর বিকেলে শালতোড়া ও বাঁকুড়া ১ ব্লকের পোয়াবাগানে সভা করার কথা। বুধ ও বৃহস্পতিবার দলীয় প্রার্থীকে নিয়ে জঙ্গলমহলে একাধিক সভা করার পরিকল্পনা রয়েছে জেলা তৃণমূলের। ওই দু’দিনে রাইপুর, রানিবাঁধ, খাতড়া, সারেঙ্গা, সিমলাপাল ও তালড্যাংরায় সভা করতে পারেন মুনমুন। শুক্রবার সকালে আবার মুনমুন চলে যাবেন পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর। বিকেলে ছাতনা ও ইঁদপুরে।

জেলা সভাধিপতি তথা তৃণমূলের কো-চেয়ারম্যান অরূপ চক্রবর্তী জানালেন, শনিবার সকালে প্রার্থীকে নিয়ে হিড়বাঁধ ব্লকেও একটি সভা করার চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানালেন । তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে নেওয়া হবে। এ দিকে কেন্দুয়াডিহির বাড়িতে মুনমুনের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা আগেই পাকা করে ফেলেছে তৃণমূল। অরূপ খাঁ বলেন, “যেখানেই সভা হোক, রাতে প্রার্থীকে আমরা বাঁকুড়াতেই নিয়ে আসব বলে স্থির করেছি। তবে, তিনি বাঁকুড়া ফিরতে চাইলে বাইরেও তাঁর থাকার ব্যবস্থা করব।”

মুনমুনের সভা ঘিরে জেলার তৃণমূল নেতাদের উত্তেজনা অবশ্য তুঙ্গে। মেজিয়ার বাইপাসের মাঠে সভা তৈরির কাজের তদারকি করতে করতে ওই ব্লকের তৃণমূল সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “মঞ্চের এক পাশে মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের বড় একটা ছবি রাখছি। যতই হোক, তাঁর মেয়ে আমাদের এলাকায় আসছেন বলে কথা!” শালতোড়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি কালীপদ রায় বললেন, “এখানকার খাগরা গ্রামের বিখ্যাত কাঁসা ও পিতলের শিল্প। মহানায়িকার মেয়েকে আমরা কাঁসা ও পিতলের ফুলের সাজি আর ফুলদানি উপহার দেব।” বাঁকুড়া ১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি ধবল মণ্ডলের কথায়, “স্কুলে পড়ার সময় থেকেই আমি উত্তম-সুচিত্রার ভক্ত। মুনমুন দলীয় প্রার্থী হয়েছেন, এটা আমাদের গর্বের বিষয়। আমরা সভাস্থল বিশেষ ভাবে সাজাচ্ছি।”

জঙ্গলমহলের তৃণমূল নেতা তথা বাঁকুড়া জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শ্যামল সরকার আবার বলছেন, “বাঁকুড়ায় আগের বার এসে আমাদের প্রার্থী আদিবাসীদের প্রতি তাঁর ভালবাসার কথা বলে গেছেন। এখানকার আদিবাসীরাও তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে মুখিয়ে আছেন।”

rajdeep bandyopadhyay debabrata das bankura khatra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy