Advertisement
০২ মে ২০২৪

তলানিতে জলস্তর, বাঁকে করে জল পৌঁছে দেন নীলকণ্ঠরা

নীলকন্ঠ রাজবংশী। মুরারই থানার কলুতোড়া গ্রামে বাড়ি। গ্রাম থেকে রাজগ্রাম হাইস্কুল ৬ কিলোমিটার পথ। রাত তিনটের সময় উঠে আসতে হয় তাঁকে। কলুতোড়া গ্রামের বাসিন্দা মানিক মালও একই পথ দিয়ে আসেন। দু’জনেই রাজগ্রাম বাজার এলাকায় দোকানে দোকানে এবং রাজগ্রাম বাজার এলাকায় বসিন্দাদের বাড়িতে বাড়িতে পানীয় জল বিক্রি করেন। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ রাজগ্রাম বাজার এলাকায় দু’জনকেই দেখা গেল একটু জিরিয়ে নিতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রাজগ্রাম শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৪ ০১:৪৪
Share: Save:

নীলকন্ঠ রাজবংশী। মুরারই থানার কলুতোড়া গ্রামে বাড়ি। গ্রাম থেকে রাজগ্রাম হাইস্কুল ৬ কিলোমিটার পথ। রাত তিনটের সময় উঠে আসতে হয় তাঁকে। কলুতোড়া গ্রামের বাসিন্দা মানিক মালও একই পথ দিয়ে আসেন। দু’জনেই রাজগ্রাম বাজার এলাকায় দোকানে দোকানে এবং রাজগ্রাম বাজার এলাকায় বসিন্দাদের বাড়িতে বাড়িতে পানীয় জল বিক্রি করেন। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ রাজগ্রাম বাজার এলাকায় দু’জনকেই দেখা গেল একটু জিরিয়ে নিতে। বছর তিরিশের যুবক নীলকন্ঠ জানালেন, রাজগ্রাম হাইস্কুলের পাশে যে সরকারি কুয়ো আছে সেখানে ১০০ ফুট নীচে জল পাওয়া যেত। কিন্তু গরম কালে জলস্তর নীচে নেমে যাওয়ার জন্য সেই জল এখন সব সময় পাওয়া যাচ্ছে না। সেই জন্য রাত থেকে উঠে রাজগ্রাম পৌঁছে কুয়ো থেকে জল তুলে দু’টিন জল (১২ লিটার করে ২৪ লিটার) সাত টাকা থেকে পনের টাকা দরে তাঁরা বিক্রি করেন। রাজগ্রাম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোবিন্দলাল বিশ্বাস বলেন, “দিনের পর দিন যা অবস্থা হচ্ছে তাতে এলাকায় খাবারের দোকানদে হাত ধোওয়ার জন্য পুকুরের জল কিনতে হয়। পানীয় জলও কিনতে হচ্ছে।”

কিন্তু মুরারই থানার রাজগ্রাম এলাকায় পানীয় জল নিয়ে এ রকম অবস্থা হওয়া উচিত ছিল না। কারণ ওই এলাকায় প্রায় চল্লিশ বছর আগে পরিশ্রুত পানীয় জল প্রকল্প চালু হয়। ওই প্রকল্পে পাইপ লাইনের মাধ্যমে রাজগ্রাম পঞ্চায়েতের রাজগ্রাম, রাজগ্রাম পূর্ব বাজার, পশ্চিম বাজার, হাসপাতাল পাড়া, আম্বুয়া এবং গোঁড়শা পঞ্চায়েতের কিছু এলাকায় পরিশ্রুত পানীয় জল পাওয়ার কথা। সেই মতো রাজগ্রাম রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় ১৯৭৪ সালে ২২ হাজার লিটার জলধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন রিজার্ভার তৈরি হয়। এলাকার বাসিন্দা তথা রাজগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান দিলীপ সরকার বলেন, “জন্মলগ্ন থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পাম্প হাউস থাকা সত্ত্বেও রিজার্ভারে জল সম্পূর্ণ হয় না। এর ফলে প্রকল্প অনুযায়ী সুষ্ঠু ভাবে এলাকার বাসিন্দারা পরিশ্রুত পানীয় জল পাচ্ছেন না।”

এলাকার বাসিন্দা তথা রাজগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান আনোয়ার হোসেন জানান, পাইপ লাইন রক্ষণাবেক্ষণের কাজ ঠিকমতো দেখভালের অভাবে সমস্যা দেখা গিয়েছে। এলাকায় যাঁরা অবস্থাসম্পন্ন তাঁরা বাড়িতে প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ করে পাম্প বসিয়ে পানীয় জলের সমস্যা মিটিয়ে নিচ্ছেন। গরিব মানুষরা চূড়ান্ত অসুবিধার মধ্যে বাস করছেন। তাদেরকে জলের জন্য চাতক পাখির মতো ট্যাপ কলগুলির দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। এলাকার সাধারণ বাসিন্দা মমতাজ হোসেনের কথায়, “এলাকায় বাড়িতে বাড়িতে কুয়ো শুকিয়ে গিয়েছে। ১০-১২টি সরকারি কল আছে। কিন্তু জলস্তর নীচে নেমে যাওয়ায় জন্য নলকূপগুলি থেকে জল পাওয়া যায় না। যেগুলি চালু আছে সেগুলি থেকে লাল জল উঠছে।” সম্প্রতি দুপুরে রাজগ্রাম এলাকায় পানীয় জল সমস্যা নিয়ে রাজগ্রামের বাসিন্দা তথা বীরভূম জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ প্রদীপ ভকত (বাবলু)কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “আমি এখন কলকাতায় আছি। কী সমস্যা আমি এখানে থেকে কী করে বলব।”

জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজগ্রাম জল প্রকল্পের জলের উৎসস্থল জগন্নাথপুর লাগোয়া বাঁশলৈ নদী। সেখানে পাম্প হাউস বসানো আছে এবং পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল রাজগ্রাম অবস্থিত রিজার্ভারে পোঁছনোর কথা। এলাকাবাসীর অভিযোগ পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল রিজার্ভারে পৌঁছনোর আগে পাইপ লাইন ফুটো করে বাঁশলৈ, আবদুল্লাপুর এলাকার বাসিন্দারা কেউ কেউ তাদের বাড়িতে জলের সংযোগ করে নিয়েছেন। কেউ বা মাঠে সেচের জলে পাইপ লাইন ফুটো করে জল ব্যবহার করছেন। কেউ বা মাঠে ইটভাটায় পাইপ লাইন ফুটো করে জল নিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে রিজার্ভারে জল কোনও দিন সম্পূর্ণ ভাবে ভর্তি হয়নি।

অন্য দিকে এলাকার বাসিন্দারা তাদের এলাকায় সুষ্ঠু ভাবে পানীয় জল পাওয়ার জন্য প্রায় প্রতি বছর রাস্তা অবরোধ থেকে সংশ্লিষ্ট বিডিওকে স্মারকলিপির মাধ্যমে তাঁদের দাবির কথা জানিয়ে আসছেন। চলতি বছরেও লোকসভা নির্বাচনের আগে আন্দোলন করেছেন এলাকাবাসী। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এলাকার বাসিন্দারা ঠিক মতো ভাবে পরিস্রুত পানীয় জল পাচ্ছেন না। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসন তাঁদেরকে বলছে, এলাকায় বোরো ধানের চাষের জন্য মাস তিনেক লো-ভোল্টেজ থাকার জন্য পাম্প দিনের বেলায় এত দিন চালু করা যায়নি। রাতের দিকে পাম্প হাউস চালু করার জন্য লোক পাওয়া যায় না। এখন তো ভোল্টেজ সমস্যা থাকায় রিজার্ভারে জল পৌঁছয় না। এলাকাবাসীর দাবি, তাঁদেরকে ট্যাঙ্ক করে জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হোক। অভিযোগ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জেলা মুখ্য নির্বাহী বাস্তুকার অর্ধেন্দু দত্ত বলেন, “রাজগ্রাম জল প্রকল্প নিয়ে কেউ সুনির্দিষ্ট ভাবে লিখিত অভিযোগ করেনি। তবুও খোঁজ নিয়ে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE