Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দু’দশকে তৈরি হয়েছে শুধু মানচিত্রই

মসৃন পিচের চওড়া রাস্তা। ফুটপাথ। দু’পাশে সারি সারি পথবাতি। এ সবই শিল্পাঞ্চল এলাকার পরিচিত চিত্র। বাঁকুড়া জেলার শিল্পাঞ্চল বলতে পরিচিত বড়জোড়ার ক্ষেত্রে ছবিটা ঠিক উল্টো। ছোট বড় বহু কল কারখানা গড়ে উঠলেও শিল্পাঞ্চল সুলভ পরিকাঠামোই গড়ে তোলা হয়নি এখানে। যার খেসারত হিসেবে দূষণের পাশাপাশি নিত্যদিন নানা সমস্যার সঙ্গেও লড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের।

বড়জোড়া থেকে গঙ্গাজলঘাটি যাওয়ার এই রাস্তার হাল কবে বদলাবে? ছবিটি তুলেছেন অভিজিৎ সিংহ।

বড়জোড়া থেকে গঙ্গাজলঘাটি যাওয়ার এই রাস্তার হাল কবে বদলাবে? ছবিটি তুলেছেন অভিজিৎ সিংহ।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৪৬
Share: Save:

মসৃন পিচের চওড়া রাস্তা। ফুটপাথ। দু’পাশে সারি সারি পথবাতি। এ সবই শিল্পাঞ্চল এলাকার পরিচিত চিত্র। বাঁকুড়া জেলার শিল্পাঞ্চল বলতে পরিচিত বড়জোড়ার ক্ষেত্রে ছবিটা ঠিক উল্টো। ছোট বড় বহু কল কারখানা গড়ে উঠলেও শিল্পাঞ্চল সুলভ পরিকাঠামোই গড়ে তোলা হয়নি এখানে। যার খেসারত হিসেবে দূষণের পাশাপাশি নিত্যদিন নানা সমস্যার সঙ্গেও লড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের।

বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে ‘আর্বান ডেভেলপমেন্ট’ দফতর থেকে বড়জোড়া ও গঙ্গাজলঘাটি শিল্পাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য গড়ে তুলেছিল ‘বড়জোড়া গঙ্গাজলঘাটি প্ল্যানিং অথরিটি’ (বিজিপিএ)। প্রশাসন সূত্রে খবর, নব্বুইয়ের দশকের শেষ দিকে বিজিপিএ গড়া হয়েছিল। বড়জোড়া ও গঙ্গাজলঘাটির বেশ কয়েকটি মৌজাকে বিজিপিএ-র আওতায় নিয়ে আসা হয়েছিল। বাসিন্দারা ভেবেছিলেন, গ্রাম পঞ্চায়েতের তকমা ঝেড়ে ফেলে এ বার হয়তো ওই এলাকা পুরসভার আওতায় আসবে। পাশের আসানসোল-দুর্গাপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি-র (এডিডিএ) আওতাধীন এলাকার মতোই বড়জোড়াতেও মিলবে উন্নত পরিষেবা।

কিন্তু দু’দশকেরও বেশি সময় পার হয়ে যাওয়ার পরেও বিজিপিএ-র কাজটা আদপে কী, এর দফতরই বা কোথায় তা অনেকের কাছে অজানা। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, জেলাশাসক এই প্ল্যানিং অথোরিটির চেয়ারম্যান। আলাদা করে এর কোনও দফতর নেই। তাই জেলাশাসকের দফতরটিই কার্যত বিজিপিএ-র দফতর। এই প্ল্যানিং কমিটির মধ্যে জেলা প্রশাসনের একাধিক শীর্ষ আধিকারিক রয়েছেন। প্রতি মাসে একবার করে বৈঠকে বসেন তাঁরা। এর আওতায় থাকা মৌজাগুলির জমির শ্রেণি পরিবর্তন (কনভারশন) করতে গেলে বিজিপিএ-র ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ (এনওসি) নিতে হয়। বিপুল কাঠখড় পুড়িয়েও যা লাভ করা অতি দুসাধ্যকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের।

বড়জোড়ার এক বাসিন্দার কথায়, “দু’ বছর আগে বাড়ি বানানোর জন্য ছ’কাঠা কৃষি জমি কিনেছিলাম। জেলাশাসকের দফতরে গিয়ে এনওসি-র আবেদন করেছি। কিন্তু এখনও তা পাওয়া যায়নি। ফলে জমির চরিত্র বদল করা যায়নি। আটকে গিয়েছে গৃহঋণের আবেদন।” বাড়ি তৈরি করার জন্য তিন কাঠা তোড়া জমি কিনে ছ’মাস ধরে একই সমস্যায় পড়েছেন বড়জোড়ারই আর এক বাসিন্দা। তিনি স্থানীয় ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে এনওসি-র আবেদন করেছেন। কিন্তু এখনও এই শংসাপত্র পাননি। এমনই ভূরি ভূরি অভিযোগ শোনা যায় বড়জোড়া। তাঁদের অভিযোগ, “এনওসি-র জন্য বড়জোড়া-বাঁকুড়া যাতায়াত করতে করতে কত জোড়া জুতো যে ছিঁড়েছে তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। দুর্গাপুরের এক শিল্পপতিও প্রায় আড়াই বছর ধরে জোগাড় করে উঠতে পারেননি বিজিপিএ-র এনওসি। তবে তৃণমূল নেতাদের মধ্যস্থতায় তাঁর কাজ অনেকটাই এগিয়েছে বলে জানালেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, “দুর্গাপুরে ওই এনওসি নিতে হলে এডিডিএ-র এনওসি লাগে। ওখানে খুব দ্রুততার সঙ্গে কাজ হচ্ছে। কিন্তু বিজিপিএ-র হাবভাব দেখে যেন মনে হয় ওরা এনওসি দিতেই অনিচ্ছুক। তবে শাসকদলের নেতাদের সুপারিশে আমার কাজ এখন এগোচ্ছে।”

জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা অবশ্য দাবি করেছেন, বিজিপিএ-র এনওসি প্রদানের গতি বাড়াতে তাঁরা বিশেষ উদ্যোগী হয়েছেন। বৈঠকে একাধিকবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “বিজিপিএ-র এনওসির জন্য আর বাঁকুড়া শহরে ছুটে আসার দরকার নেই। আবেদনপত্র পূরণ করে ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে জমা দিলে তা আমার কাছে পাঠানো হবে। আমি সব খতিয়ে দেখে শংসাপত্র দিয়ে দেব।” এতে কাজে দ্রুততা আসবে বলেই তাঁর অভিমত। তবে সমস্যা আদৌ মিটবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যেই। বড়জোড়ার বাসিন্দাদের ক্ষোভ, বিজিপিএ-র সুফল কিছুই দেখা যাচ্ছে না শিল্পাঞ্চলে। স্থানীয় বাসিন্দা পার্থ মণ্ডল বলেন, “এলাকার পরিকাঠামোর কোনও উন্নয়নই হল না। যানজট লেগেই রয়েছে। সরু রাস্তাঘাট। পথবাতিও নেই। দূষণ ছাড়া শিল্পাঞ্চল হিসেবে আর কিছুই পায়নি বড়জোড়া।” জেলাশাসক জানিয়েছেন, জমির শ্রেণি নির্ণয়ের ‘মানচিত্র’ করা ছাড়া এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজ এখনই করার মতো অনুমতি নেই বিজিপিএ-র হাতে।

তবে পরিস্থিতি যে পাল্টাবে তার আশ্বাস অবশ্য দিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাসখানেক আগেই জেলা সফরে এসে বড়জোড়া-দুর্লভপুর প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তা তিনি ঢেলে সাজানোর কথা জানিয়ে গিয়েছেন। যদিও সেই কাজ এখনও শুরু হয়নি। জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তথা বড়জোড়ার বাসিন্দা সুখেন বিদ বলেন, “বড়জোড়াকে পুরশহর হিসেবে ঘোষণা করার দাবি দীর্ঘদিন ধরে আমরা জানিয়ে আসছি। বিভিন্ন প্রশাসনিক বৈঠকে আমরা সেই দাবি তুলে ধরছি। দলীয় ভাবে আমরা পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে এ বিষয়ে স্মারকলিপি দেব বলেও ঠিক করেছি।” তাঁর আশ্বাস, পুরসভা হলে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ অর্থের পরিমান বাড়বে। আর তাতে ঢালাও উন্নয়ন হবে বলেই আশাবাদী তিনি। কিন্তু সে দিন কবে আসবে? উত্তর নেই শাসকদলের নেতাদের কাছেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rajdeep bandyopadhyay bankura amar sohor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE