Advertisement
০৮ মে ২০২৪

দেহ উদ্ধারে ব্যর্থ প্রশাসন, নলহাটিতে ঘেরাও পুলিশ

চার দিন আগে এলাকার পাথর শিল্পাঞ্চলের একটি পরিত্যক্ত খাদানে পাথর ভর্তি লরি উল্টে গিয়েছিল। কিন্তু দু’দিন আগে লরি ক্রেন দিয়ে ওঠানো সম্ভব হলেও এখনও অবধি চালকের দেহ উদ্ধার করা যায়নি। ওই চালকের দেহ উদ্ধারের জন্য বৃহস্পতিবার আসানসোল থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা দফতর থেকে কর্মীরা এসেও ব্যর্থ হয়। এর পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরা মৃতদেহ উদ্ধারের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাতভর ছ’জন অফিসার-সহ প্রায় ৪০ জন পুলিশ কর্মীকে আটকে রাখেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নলহাটি শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:২৫
Share: Save:

চার দিন আগে এলাকার পাথর শিল্পাঞ্চলের একটি পরিত্যক্ত খাদানে পাথর ভর্তি লরি উল্টে গিয়েছিল। কিন্তু দু’দিন আগে লরি ক্রেন দিয়ে ওঠানো সম্ভব হলেও এখনও অবধি চালকের দেহ উদ্ধার করা যায়নি। ওই চালকের দেহ উদ্ধারের জন্য বৃহস্পতিবার আসানসোল থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা দফতর থেকে কর্মীরা এসেও ব্যর্থ হয়। এর পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরা মৃতদেহ উদ্ধারের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাতভর ছ’জন অফিসার-সহ প্রায় ৪০ জন পুলিশ কর্মীকে আটকে রাখেন। নলহাটি থানার বাহাদুরপুর পাথর শিল্পাঞ্চলের ঘটনা।

শুক্রবার দুপুর পৌনে ১২টা নাগাদ পরিত্যক্ত খাদান এলাকার জলে ভেসে ওঠে মৃতদেহটি। এর পরেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা দেহটি উদ্ধার করেন এবং প্রায় ১২ ঘণ্টা আটকে থাকার পর পুলিশ ঘেরাও মুক্ত হয়। মৃতের নাম মনিরুল শেখ (২৭)। বাড়ি নলহাটি থানার হরিওকা গ্রামের পাথর চেলিপাড়া। এ দিকে, তিন দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর মৃতদেহ উদ্ধারে পুলিশ-প্রশাসনের ব্যর্থতাকে দায়ী করে শুক্রবার সকাল থেকে বাহাদুরপুর পাথর শিল্পাঞ্চলের যাবতীয় কাজকর্ম বন্ধ করে দেন এলাকাবাসীর একাংশ। সকালে স্থানীয় হরিওকা, খাপুর, আমলাই, বহড়া, বাহাদুপুর এলাকার শতাধিক বাসিন্দা প্রশাসনিক গাফিলতির প্রতিবাদে ব্লক অফিসে লাঠি-বাঁশ, কাঠ নিয়ে জড়ো হয়। পরে মৃতদেহ ভেসে উঠার খবর পেয়ে তাঁরা আন্দোলন থেকে বিরত হন।

এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নলহাটি থেকে বাহাদুরপুর গ্রামে ঢোকার মুখে রাস্তায় বড় বড় পাথর ফেলে অবরোধ করেছেন বাসিন্দারা। বাহাদুরপুর গ্রামে ঢুকতেই পুলিশের একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। বৃহস্পতিবার রাতে ওই জায়গায় পুলিশের তিনটি গাড়ি আটকে রাখা হয়েছিল। হরিওকা গ্রামের বাসিন্দা রিণ্টু শেখ বলেন, “চারদিন ধরে একজন গাড়ির চালককে পুলিশ ও প্রশাসন তুলতে পারেনি। প্রশাসনের ব্যর্থতার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডুবুরি না নিয়ে আসার জন্য এই ভাবে চার দিন থেকে একজনের দেহ উদ্ধার করা গেল না। তাই এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভে পুলিশকে রাতভর আটকে রাখেন।” হরিওকা, খাপুর, আমলাই-সহ এলাকার অনেক লরি চালক যাঁরা নলহাটি থানার বাহাদুরপুর পাথর শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তাঁদের দাবি, এলাকায় রাস্তার ধারে পাথর খাদানগুলি অরক্ষিত। সেগুলি ঘেরা না থাকার জন্য অনেক সময় লরি চালকেরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদানের গভীর জলে লরি নিয়ে পড়ে যান। সেক্ষেত্রে পাথর ঘেরার ব্যবস্থা করলে ভাল হয়। আবার লরি চালকদের একাংশের অভিযোগ, চালকদের কোনও পাথর শিল্পাঞ্চলে ইউনিয়ন নেই। যার জন্য পাথর ব্যবসায়ী মালিক সমিতি চালকদের লাইসেন্স করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও করে না। লরিচালকেরা এর জন্য অনেক সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

নলহাটি পাথর ব্যবসায়ী মালিক সমিতির দু’টি ইউনিয়ন। তাদের মধ্যে একটি ইউনিয়নের সম্পাদক পিন্টু সিংহের দাবি, সোমবার বিকেলে দুর্ঘটনা ঘটার পর পাথর ব্যবসায়ী মালিক সমিতি মৃতদেহ উদ্ধারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে দুর্ঘটনার পরের দিন লরি তোলা হলেও যুবকের দেহ উদ্ধার হয়নি। তিনি বলেন, “৪০ বছর আগে নলহাটি পাথর শিল্পাঞ্চল আগে কাশিমবাজার রাজারা দেখভাল করতেন। সেই আমলের অনেক পাথর খাদান এখন পরিত্যক্ত হয়ে আছে। সেগুলির মধ্যে কোনও কোনও পাথর খাদান অরক্ষিত আছে। সেগুলি ছাড়া নতুন পাথর খাদানগুলি সব মাটি দিয়ে ঘেরা আছে। লরিচালকদের সরকারি সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা প্রশাসনের মাধ্যমে করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।” এসডিপিও (রামপুরহাট) জোবি থমাস কে বলেন, “দুর্ঘটনার ঘটে যাওয়ার পর থেকেই পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nalhati
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE