Advertisement
০২ মে ২০২৪
সাঁইথিয়া পুরসভায় তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব

দলের প্রার্থীপদ ঘোষণা না হতেই দেওয়ালে প্রচার, বিতর্কে শান্তনু

সাঁইথিয়া পুর নির্বাচনে প্রার্থী তালিকাই ঘোষণা করেনি তৃণমূল। তার আগেই দেওয়াল লিখন শুরু করে দিয়েছেন শাসক দলের বিদায়ী উপ পুরপ্রধান শান্তনু রায় ওরফে সঞ্জু। তিনি অবশ্য দেওয়াল লেখার বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেছেন। তাঁর দাবি, “হয়তো কোনও অনুগামী বা সমর্থক লিখে থাকতে পারেন। আমার জানা নেই।” তবে সাত তাড়াতাড়ি ওই দেওয়াল লেখা ঘিরে শহরে তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে।

শহরে দেখা যাচ্ছে এমনই দেওয়াল লিখন। ছবি: অনির্বাণ সেন।

শহরে দেখা যাচ্ছে এমনই দেওয়াল লিখন। ছবি: অনির্বাণ সেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৫ ০০:২২
Share: Save:

সাঁইথিয়া পুর নির্বাচনে প্রার্থী তালিকাই ঘোষণা করেনি তৃণমূল। তার আগেই দেওয়াল লিখন শুরু করে দিয়েছেন শাসক দলের বিদায়ী উপ পুরপ্রধান শান্তনু রায় ওরফে সঞ্জু। তিনি অবশ্য দেওয়াল লেখার বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেছেন। তাঁর দাবি, “হয়তো কোনও অনুগামী বা সমর্থক লিখে থাকতে পারেন। আমার জানা নেই।” তবে সাত তাড়াতাড়ি ওই দেওয়াল লেখা ঘিরে শহরে তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে।

দলের শহর সভাপতি পিনাকী দত্ত বলেন, “প্রার্থীদের নাম এখনও ঘোষণা হয়নি। কেউ দেওয়াল লিখন শুরু করেছেন বলে আমার জানা নেই।” যদি কেউ লিখে থাকেন তাহলে কী করবেন? পিনাকীবাবু বলেন, “ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে জানাব।” তিনি জানান, শীঘ্রই পুরনির্বাচনের ১৬ জন প্রার্থীর নাম জেলা নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

সাঁইথিয়া শহরে তৃণমূলের কার্যত তিনটি গোষ্ঠী রয়েছে। পুর নির্বাচনে প্রত্যেকেই নিজেদের পছন্দের লোকেদের প্রার্থী করতে চাইছেন। এই নিয়ে দলের মধ্যে অনেক দিন ধরেই চাপা উত্তেজনা চলছে। ১৬ আসনের এই পুরসভায় যাঁর নেতৃত্বে বেশি কাউন্সিলর থাকবে তিনিই পুরপ্রধান বা উপ পুরপ্রধানের দাবিদার হবেন। দল সূত্রে খবর, শহর সভাপতি পিনাকী দত্ত ও বিদায়ী পুরপ্রধান বিপ্লব দত্তের একটি গোষ্ঠী রয়েছে। অন্য দিকে, দলের শহর চেয়ারম্যান মানস সিংহ এবং গত পুরনির্বাচনে দলীয় প্রতীকে জেতা একমাত্র কাউন্সিলর সাত নম্বর ওয়ার্ডের শান্তনু রায়ের একটি করে গোষ্ঠী রয়েছে।

কংগ্রেসি কাউন্সিলরদের ভাঙিয়ে সাঁইথিয়া পুরসভার ক্ষমতা দখল করেছিল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। দল সূত্রে খবর, যিনি এই কাজ করেছিলেন, সেই শান্তনু রায় বর্তমানে দলে কিছুটা হলেও কোণঠাসা। শুধু তিনিই নয়। দল ক্ষমতায় আসার আগে থেকে এই শহরে যিনি দলের মূল সংগঠক ছিলেন তিনি হলেন তৃণমূলের প্রাক্তন শহর সভাপতি মানস সিংহ। পুরসভার পালা বদলের সাথে সাথে তিনি ও তাঁর অনুগামীরাও অনেকদিন আগেই দলে কোণঠাসা হয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, কার্যত তাঁকে কিছু না জানিয়েই শহর সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বিদ্রোহের আঁচ অনুভব করে তাঁকে দলের শহর চেয়ারম্যান করা হয়।

দলীয় সূত্রের খবর, শান্তনুবাবু ও মানসবাবুদের বিরোধ কিন্তু নতুন নয়। জেলা রাজনীতিতে শান্তনুবাবু সাংসদ শতাব্দী রায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। আবার মানসবাবু জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী বলেই পরিচিত ছিলেন। সে কারণে এলাকায় দলে তাঁর প্রাধান্য বেশি ছিল। শান্তনুবাবু অবশ্য বসেছিলেন না। তাই দলে নিজের প্রাধান্য বাড়াতে সিপিএম ও ফরওয়ার্ড ব্লকের দুই কাউন্সিলরকে নিয়ে কংগ্রেসি কাউন্সিলরদের ঘর ভাঙা শুরু করেন শান্তনুবাবু। ঘর ভাঙার খেলায় সফল হলেও বোর্ড পেয়ে তিনি পুরপ্রধান হতে পারেননি। তিনি উপ পুরপ্রধান হন। প্রধান করা হয় বিপ্লববাবুকেই। সেই সঙ্গে দলে শান্তনুবাবু ও মানসবাবুদের তুলনায় বিপ্লববাবুর গুরুত্ব বাড়তে শুরু করে।

দলগত এই পরিস্থিতিতে তিনটি গোষ্ঠীই চাইছে তাঁদের অনুগামীদের বেশী করে প্রার্থী করতে। যদিও এ ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না। প্রার্থী নিয়ে দলে মতবিরোধের প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে শান্তনুবাবু বলেন, “তেমন মতবিরোধ নাই। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।’’ শান্তনুবাবু প্রকাশ্যে যাই বলুন না কেন, তাঁর অনুগামী শহর সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি আজমীর হোসেন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “আমরা ৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়াও ৩, ৪, ৬, ৮, ১১ এই ওয়ার্ডগুলির দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের দাবি মানা তো দূরের কথা, আমাদের দলের কোনও বৈঠকে পর্যন্ত ডাকা বা প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। দলে এখন আমরা ব্রাত্য হয়ে গিয়েছি।”

মানসবাবু বলেন, “দলে গণতন্ত্র আছে। তাই মতানৈক্য থাকতেই পারে। প্রার্থী নিয়ে এখনই কিছু বলছি না।” তবে তাঁর এক অনুগামী বলেন, “সাঁইথিয়া পুরসভা দখলের পর থেকেই জেলা নেতৃত্বের কেউ কেউ আমাদের গুরুত্ব দিচ্ছিল না। লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে সাঁইথিয়া পুরএলাকায় দলের হাল কোথায় নেমেছে তা টের পেয়েছেন জেলা নেতারা। তাই এখন কাছে টানার তাগিদ অনুভব করছে। আমরা সাত থেকে আটটি আসন চেয়েছি। সম্মানজনক আসন না পেলে আমরা কোন প্রার্থী নাও দিতে পারি।” গোষ্ঠী ও আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে শহর সভাপতি পিনাকী বলেন, “দলে কোনও গোষ্ঠী নেই। সবাই শুধু তৃণমূল কর্মী।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

group conflict santhia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE