Advertisement
E-Paper

ধর্ষণের মামলা হয়নি, বাড়ছে ক্ষোভ

বধূর মৃত্যুর পরে কেটে গিয়েছে ৪৮ ঘণ্টারও বেশি। কিন্তু, পাত্রসায়র থানার পুলিশ না নিয়েছে ধর্ষণের এফআইআর, না নিয়েছে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ। স্রেফ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করায় নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। শুধু তাই নয়, বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের ওই বধূকে ধর্ষণের নালিশ চাপা দেওয়া এবং তাঁকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা সুব্রত ওরফে গোপে দত্তকে ধরা তো দূরের কথা, তাঁকে জেরা পর্যন্ত করেনি পুলিশ।

দেবব্রত দাস

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫৭

বধূর মৃত্যুর পরে কেটে গিয়েছে ৪৮ ঘণ্টারও বেশি। কিন্তু, পাত্রসায়র থানার পুলিশ না নিয়েছে ধর্ষণের এফআইআর, না নিয়েছে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ। স্রেফ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করায় নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

শুধু তাই নয়, বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের ওই বধূকে ধর্ষণের নালিশ চাপা দেওয়া এবং তাঁকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা সুব্রত ওরফে গোপে দত্তকে ধরা তো দূরের কথা, তাঁকে জেরা পর্যন্ত করেনি পুলিশ। ধর্ষণে অভিযুক্ত যুবক শীর্ষেন্দু দত্ত-ও এখনও অধরা।

অথচ মৃতার স্বামীর লিখিত ভাবে সমস্ত ঘটনা পুলিশকে জানিয়েছেন। কিন্তু, থানা সেই অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে এফআইআর তো করেইনি, এমনকী তা ‘রিসিভ’ পর্যন্ত করেনি। পুলিশের ভূমিকায় তাই ক্ষোভ ছড়িয়েছে আত্মঘাতী বধূর পরিবার এবং এলাকায়। গোটা ঘটনায় শাসকদলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র প্রাক্তন বাঁকুড়া জেলা সহ-সভাপতি গোপে দত্তর নাম জড়ানোর জন্যই পুলিশ মামলা শুরু করতে গড়িমসি করছে বলে মৃতার পরিবার এবং এলাকবাসীর অভিযোগ।

পুলিশ অবশ্য নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ মানতে নারাজ। শনিবার ফোন না ধরলেও রবিবার বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশকুমার দাবি করেছেন, “আসল ঘটনা কী, তা খতিয়ে দেখে মামলা শুরু হচ্ছে। সব দিক তদন্ত করে দেখতে একটু সময় লাগছে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ-ও দাবি করেছেন, “পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবেই তদন্ত করে। আমাদের দলের তরফে কখনওই পুলিশের কাজে হস্তক্ষেপ করা হয় না। এ ক্ষেত্রেও পুলিশ নিজের মতো কাজ করছে।”

মৃতার স্বামীর অভিযোগ, গত সোমবার বাড়ির সবাই মনসাপুজোয় ব্যস্ত ছিলেন। সেই সুযোগে পড়শি যুবক শীর্ষেন্দু ওরফে বাপি বাড়িতে ঢুকে তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণ করে। তিনি ওই যুবককে ধরে একটি ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেন। পরে গোপে বাড়িতে এসে বিষয়টি নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নিতে চাপ দেন এবং থানা-পুলিশ না করার জন্য হুমকি দিয়ে শীর্ষেন্দুকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। এর পর থেকে শীর্ষেন্দু তাঁর স্ত্রীর উদ্দেশে কটূক্তি করছিল এবং ফের ধর্ষণের হুমকি দিতে থাকে বলে মৃতার স্বামীর অভিযোগ। গত শুক্রবার দুপুরে বাড়ির দোতলায় ২৮ বছরের ওই বধূর ঝুলন্ত দেহ মেলে। তাঁর স্বামী রবিবার বলেন, “স্ত্রী আমাকে পুলিশে অভিযোগ জানাতে বলেছিল। কিন্তু, গোপের কোপে পড়ে যাওয়ার ভয়ে আমি তখন থানায় যাইনি। গোপে প্রচুর টাকার বিনিময়ে শীর্ষেন্দুকে না ধরানোর জন্য আমাদের চাপ দিয়েছিল। এর পর শীর্ষেন্দুও গোপের কাছ থেকে সাহস পেয়ে নাগাড়ে নোংরা কথা বলায় আমার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে।”

এত বড় ঘটনার পরেও কেন গোপে বা শীর্ষেন্দুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না, সে প্রশ্ন তুলেছেন পাত্রসায়রের বাসিন্দাদের বড় অংশ। মৃত বধূর শ্বশুর বলেন, “শীর্ষেন্দু আর গোপের জন্য আমার বউমা লজ্জায় অপমানে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। অথচ আমরা অভিযোগ করার পরেও পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে আছে। আর তাদের নাকের ডগায় গোপে দত্ত ঘুরে বেড়াচ্ছে।” পুলিশ ব্যবস্থা না নিতে চাইলেও তিনি হাল ছাড়ছেন না। বলছেন, “অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা অবশ্যই করব। প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হব।” মৃতার দেওরের ক্ষোভ, “নারী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযোগ নিয়ে অভিযুক্ত গ্রেফতার করাটাই পুলিশের প্রাথমিক কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে পুলিশ এখনও পর্যন্ত সদর্থক কিছুই করেনি।”

গ্রিল তৈরির ব্যবসায়ী শীর্ষেন্দু শুক্রবার থেকেই এলাকা ছাড়া। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, তাঁর এক আত্মীয় এ দিন দাবি করেন, ওই বধূর সঙ্গে হয়তো শীর্ষেন্দুর কোনও প্রয়োজন ছিল। তাই মনসাপুজোর দিন তিনি ওই বধূর কাছে গিয়েছিলেন। ওই বধূর অপমৃত্যুর পরে বিষয়টি এখন অন্য দিকে ঘুরে গিয়েছে। শীর্ষেন্দু এলাকায় না থাকলেও গোপে কিন্তু রবিবার দিনভর নিজের বাড়িতে এবং থানার পাশের পার্টি অফিসে হাজির ছিলেন। আনন্দবাজারকে তিনি বলেছেন, “আমি কোথাও পালিয়ে যাইনি। বাড়িতে রয়েছি, পার্টি অফিসেও গিয়েছি, থানার সামনেও যাব।” তাঁর দাবি, আগে পুলিশ তদন্ত করে দেখুক তিনি আদৌ ওই বধূকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছেন কি না। তাঁর বক্তব্য, “ওঁদের পরিবারের সম্মান রক্ষার জন্যই বাড়িতে গিয়েছিলাম। মিটমাটও হয়ে গিয়েছিল। এখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে ওঁদের কোনও লাভ হবে না।”

গোপে যাই-ই দাবি করুন না কেন, গোটা ঘটনায় পুলিশ ও শাসকদলের ভূমিকা নিয়ে পাত্রসায়রে আলোচনা তুঙ্গে। বাসস্ট্যান্ড, বাইপাসের মোড়, রাসতলা, দত্তপাড়া, লোহারপাড়া, দাসপাড়া, বাজার থেকে চন্দনতলা, কালঞ্জয়তলা, হলুদবুনি মোড়েপাত্রসায়রের প্রতিটি এলাকার চায়ের দোকানে, গুমটিতে, আড্ডায়, বাজারে এই ঘটনা নিয়ে জোর চর্চা চলছে। দোষীদের শাস্তির দাবিও উঠেছে। এলাকার এক প্রবীণ নাগরিকের আক্ষেপ, “পাত্রসায়রে রাজনৈতিক আকচাআকচি এখন আমাদের গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের নিজেদের মধ্যে মারপিট লেগেই রয়েছে। ছোটখাটো পারিবারিক গণ্ডগোলে শাসকদলের নেতাদের হস্তক্ষেপও দেখেছি। কিন্তু, এত বড় একটা ঘটনার পরে পুলিশ এবং শাসকদলের ভূমিকা দেখে সত্যিই লজ্জাবোধ হচ্ছে আমাদের। এ আমরা কোথায় বাস করছি?”

স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশও ঘটনাটিকে ভাল চোখে দেখছেন না। দলের এক নেতার কথায়, “এমনিকেই পাত্রসায়রে আমাদের দল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার। তার উপর এই ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনায় দলের ভাবমূর্তির আরও ক্ষতি হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মনেও ক্ষোভ বাড়ছে।” স্থানীয় রাজনীতিতে গোপে দত্ত পাত্রসায়র ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের বিরোধী শিবিরের লোক হিসাবেই পরিচিত। এই ঘটনায় দলে যে অস্বস্তি রয়েছে, তা স্পষ্ট স্নেহেশবাবুর মন্তব্যেই। তিনি বলেছেন, “পারিবারিক বিষয়ে আমরা নাক গলানোর বিরোধী। তার পরেও কেউ সালিশিতে গিয়ে থাকলে, সেটা একান্তই তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। এতে দলের কোন ভূমিকা নেই।”

patrasayar rape tmc leader gope dutta sirshendu dutta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy