Advertisement
০৩ মে ২০২৪

নেই বাসস্ট্যান্ড, যানের জটে খাতড়া

যানজটের ফাঁসেই থমকে গিয়েছে খাতড়া শহর। আড়ে বহরে শহর যত বাড়ছে, দোকান ও গাড়ির চাপে রাস্তা তত সঙ্কীর্ণ হচ্ছে। খাতড়া শহরের প্রবেশ পথ পাম্পমোড়। এখান দিয়ে চলে গিয়েছে বাঁকুড়া-রানিবাঁধ রাস্তা। পাম্পমোড় থেকে দাসের মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু’দিকে সারি সারি দোকান। অনেক জায়গায় রাস্তা জবরদখল করে দোকান গড়ে উঠেছে।

ছবিটা বদলায় না। গাড়িতে গাড়িতে গুঁতোগুঁতি। করালী মোড়ে।

ছবিটা বদলায় না। গাড়িতে গাড়িতে গুঁতোগুঁতি। করালী মোড়ে।

দেবব্রত দাস
খাতড়া শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৪ ০২:১১
Share: Save:

যানজটের ফাঁসেই থমকে গিয়েছে খাতড়া শহর। আড়ে বহরে শহর যত বাড়ছে, দোকান ও গাড়ির চাপে রাস্তা তত সঙ্কীর্ণ হচ্ছে।

খাতড়া শহরের প্রবেশ পথ পাম্পমোড়। এখান দিয়ে চলে গিয়েছে বাঁকুড়া-রানিবাঁধ রাস্তা। পাম্পমোড় থেকে দাসের মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু’দিকে সারি সারি দোকান। অনেক জায়গায় রাস্তা জবরদখল করে দোকান গড়ে উঠেছে। দোকানের সামনে সাইকেল, মোটরবাইক, ঠেলাগাড়ি, ভ্যান রিকশা দাঁড়িয়ে থাকায় চওড়া রাস্তাও ক্রমশ সরু হয়ে গিয়েছে। বড় গাড়ি, ছোট গাড়ির মাঝে আটকে পড়ছেন পথচারী। যার ফলশ্রুতি যানজট। রাস্তা পার হতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম অবস্থা সকলের।

দক্ষিণ বাঁকুড়ার এই মহকুমা সদর শহরের বেশ কিছু এলাকায় সকাল ৭টা থেকেই যানজট পাকিয়ে ওঠে। করালী মোড় ও দাসের মোড়ের সংযোগস্থলে সকালে ভিড় করেন শ্রমিকরা। ঘণ্টাখানেক ধরে সাইকেল নিয়ে রাস্তাজুড়ে তাঁরা ঘোরাঘুরি করেন। কিছুক্ষণ বাদেই ওই এলাকায় একে একে বাজারের থলে হাতে মানুষের চলাচল শুরু হয়ে যায়। তারপর নিত্যযাত্রী, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের ভিড়। বেলা যত বাড়ে পথচারীদের চলাচলা বেড়ে যায়। অফিস টাইমে রাস্তায় মানুষের ভিড় ও গাড়ির চাপ বেশ বেড়ে যায়। সাইকেল, ঠেলাগাড়ি, ভ্যান, রিকশা, মোটরবাইক, ছোট ও বড় গাড়ি, বাসের আনাগোনায় রাস্তা পার হওয়া তখন দায় হয়ে ওঠে। বিশেষত করালী মোড়, দাসের মোড়, পুরাতন বাজারে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ওই সময় রাস্তা পার হতে গিয়ে চরম সমস্যার সম্মুখীন হন পথ চলতি সাধারণ মানুষ। বিশেষত বয়স্কদের কষ্ট বেড়ে যায়।

প্রশাসন সূত্রের খবর, খাতড়া থেকে কলকাতা, দিঘা, আসানসোল, পুরুলিয়া, টাটা, বান্দোয়ান, মানবাজার, বাঁকুড়া, দুর্গাপুর, বর্ধমান, সারেঙ্গা, রানিবাঁধ, রাইপুর, ঝাড়গ্রাম, বেলপাহাড়ি, সিমলাপাল, মেদিনীপুর, তালড্যাংরা, বিষ্ণুপুর, জয়রামবাটি-সহ প্রায় ৪০টি রুটের ৩০০-র বেশি বেসরকারি বাস এখান থেকে যাতায়াত করে। এর সঙ্গে রয়েছে কিছু সরকারি বাস। করালী মোড় এবং দাসের মোড়ে সমস্তর বাস দাঁড় করানো হয়। দাসের মোড় থেকে রবীন্দ্র সরণি যাওয়ার রাস্তার দু’ধারেই আবার রয়েছে ছোট গাড়ির স্ট্যান্ড। জিপ, ট্যাক্সি, ম্যাটাডোর, টাটা ম্যাজিক-সহ কয়েকশো গাড়ি শহরের বিভিন্ন জায়গায় ভাড়ার অপেক্ষায় থাকে। দাসের মোড়ে প্রায় ২০০টি ছোট গাড়ি থাকে। একই ভাবে শহরের পাম্প মোড় ও ব্লক অফিস মোড়ে রয়েছে ৮০টি ছোট গাড়ি।

খাতড়া শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা হল করালী মোড় ও দাসের মোড়। এই দু’টি মোড়ে খাতড়ার উপর দিয়ে যাতায়াতকারী সরকারি, বেসরকারি বাস দাঁড়ায়। করালী মোড়ের একদিকে বাসগুলি দাঁড়িয়ে থাকলেও দাসের মোড়ে রাস্তার উপরেই থাকে বাসগুলি। তারই মধ্যে দাসের মোড়ে ছোট গাড়ির স্ট্যান্ড রয়েছে। রাস্তার উপরে এই ভাবে বাস, তার পাশাপাশি ছোট গাড়ি রাস্তার দু’পাশে থাকার ফলে প্রায় সময়ই যানজট লেগেই রয়েছে। এত বাস, ছোট গাড়ি যাতায়াত করলেও নেই বাসস্ট্যান্ড। নেই যাত্রী প্রতীক্ষালয়। দূর দূরান্ত থেকে আসা মানুষজনকে বাস ধরার জন্য করালী মোড় ও দাসের মোড়ে হাপিত্যেশ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। রানিবাঁধের বাসিন্দা বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের ছাত্রী অঞ্জলি মণ্ডলের কথায়, “বাড়ি থেকে কলেজ যাওয়ার সময় প্রায় দিনই খাতড়ায় নেমে বাস পাল্টাতে হয়। করালী মোড়ে বাসের অপেক্ষায় বেশ কিছুক্ষণ রাস্তার ধারে বিপজ্জনকভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। একটুও বসার জায়গা নেই।”

একদিকে বাস, অন্য দিকে রাস্তায় এলোমেলো ভাবে বাসের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের ভিড় যানজট আর কাটে না। কিছুটা দূরেই রয়েছে খাতড়া হাইস্কুল, খাতড়া গার্লস হাইস্কুল, কংসাবতী শিশু উচ্চবিদ্যালয়, খাতড়া আদালত, এ ছাড়াও রয়েছে দু’টি বেসরকারি স্কুল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রায় দিনই এই রাস্তায় বাস, ছোট গাড়ি, সাইকেল, মোটরবাইক, ঠেলাগাড়ির সঙ্গে পথচারীর ভিড় লেগে থাকে। দাসের মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ কিছুক্ষণ থাকায় সাময়িক যানজট কমলেও পুরোপুরি কাটে না বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের। স্থানীয় স্কুল শিক্ষক সম্পদ খাঁড়াত বলেন, “মাঝে মাঝে করালী মোড়ে এত যানজট হয় যে রাস্তা পার হতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। সব সময় ট্রাফিক পুলিশও থাকে না।”

পাম্পমোড়ে ট্রাফিক পুলিশের দেখা নেই।

কেন এই যানজট?

এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, রাস্তা সঙ্কীর্ণ হওয়াই অন্যতম প্রধান কারণ। তাঁদের বক্তব্য, নামেই বাসস্ট্যান্ড, বাস রাখার জন্য নির্দিষ্ট কোনও জায়গা নেই। ছোট গাড়িরও স্ট্যান্ড নেই। বাধ্য হয়ে চালকরা রাস্তার যত্রতত্র গাড়ি রাখছেন। কিছু দোকানদারও রাস্তার উপরে মালপত্র সাজিয়ে বহাল তবিয়তে ব্যবসা করছেন। এ ভাবেই হারাচ্ছে রাস্তা। অনেক সময় দোকানের সামনে গাড়ি রাখা নিয়ে বচসা বাধে দোকানিদের সঙ্গে। তৃণমূলের মাঝারি ও ছোট গাড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের খাতড়া শাখার সভাপতি নিতাই দত্ত বলেন, “ছোট গাড়ির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অথচ শহরে স্থায়ী স্ট্যান্ড নেই। তাই বাধ্য হয়ে চালকরা রাস্তার পাশেই গাড়ি রাখতে বাধ্য হচ্ছেন।” তিনি জানান, দাসের মোড় থেকে একটু দূরে সিমলাপাল রাস্তার পাশে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে দিয়ে সেখানে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করার প্রস্তাব পঞ্চায়েত প্রধানকে দেওয়া হয়েছে। তাতে কিছুটা সমস্যা মিটতে পারে। যানজট এড়াতে ছোটগাড়ি স্ট্যান্ডের সঙ্গে অবিলম্বে একটি স্থায়ী বাসস্ট্যান্ডের দাবি উঠেছে।

খাতড়া শহরের বাসিন্দা তথা করালী মোড়ের ব্যবসায়ী আশিস দত্ত বলেন, “একটা সুন্দর বাসস্ট্যান্ড হলে যানজট থেকে নিস্তার পাওয়া যেত। যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যও বাড়ত। কিন্তু প্রশাসনের কোনও উদ্যোগই চোখে পড়েনি।”

খাতড়া ১ পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের অজয় বাউরিও স্বীকার করেছেন, “বড় ও ছোট গাড়ির দু’টি স্ট্যান্ড তৈরি হলেই যানজটের সমস্যা অনেকটা কমে যাবে। ওই দু’টি স্ট্যান্ড তৈরির দাবি আমরাও জানিয়েছি। কিন্তু করালী মোড়ে ও দাসের মোড়ে জমির সমস্যা রয়েছে। বিকল্প জায়গা রয়েছে কিছুটা দূরে এসডিও অফিসের কাছে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়।”

খাতড়ার মহকুমাশাসক শুভেন্দু বসু বলেন, “বছর দশেক আগে এসডিও অফিস থেকে কিছুটা দূরে বাসস্ট্যান্ড তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ওই জায়গায় স্ট্যান্ড তৈরি করা যায়নি। তবে একটি বাস টার্মিনাস তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।” তিনি জানান, রাস্তার উপরে বেআইনি দখলদারির জন্যই যানজট পাকাচ্ছে। বেআইনি দখল উচ্ছেদ অভিযানে নামার পরিকল্পনা রয়েছে। সম্প্রতি এ ব্যাপারে একটি কমিটিও গড়া হয়েছে।” প্রশাসন কবে সক্রিয় ভাবে জট কাটিয়ে খাতড়ার গতি বাড়ায়, তাকিয়ে রয়েছেন খাতড়াবাসী।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

khatra debabrata das traffic congesation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE