Advertisement
E-Paper

নেই বাসস্ট্যান্ড, যানজটে আটকে সোনামুখী

শহরের বয়স ১২৮ বছর। কিন্তু এত প্রাচীন শহর সোনামুখীতে আজও একটি বাসস্ট্যান্ড তৈরি হল না। হয়নি বাইপাসও। ফলে রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ বাস দাঁড় করিয়ে রেখেই চলে যাত্রী ওঠা-নামা। এর জেরে যানজটের ফাঁসে আটকে গিয়েছে সোনামুখী শহর।

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৪ ০১:১৬
এগনোর পথ নেই। সোনামুখী চৌমাথায় রোজকার দৃশ্য। ছবিটি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।

এগনোর পথ নেই। সোনামুখী চৌমাথায় রোজকার দৃশ্য। ছবিটি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।

শহরের বয়স ১২৮ বছর। কিন্তু এত প্রাচীন শহর সোনামুখীতে আজও একটি বাসস্ট্যান্ড তৈরি হল না। হয়নি বাইপাসও। ফলে রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ বাস দাঁড় করিয়ে রেখেই চলে যাত্রী ওঠা-নামা। এর জেরে যানজটের ফাঁসে আটকে গিয়েছে সোনামুখী শহর। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, না পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার, না তৃণমূল সরকার এই শহরের মূল সমস্যা সমাধানে কারও উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। তবে কিসের পরিবর্তন!

বাঁকুড়া-বর্ধমান ও বিষ্ণুপুর-দুর্গাপুরের মতো দু’টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এসে মিলেছে সোনামুখী শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌমাথা মোড়ে। কিন্তু এখানে সকালের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গাড়ি ও পথচারীতে যা জট পাকিয়ে ওঠে তা থেকে বের হওয়াই দুষ্কর। জট পাকানোর কারণ কী? প্রথমত, এই শহরে বাসস্ট্যান্ড না থাকায় সমস্ত বাস চৌমাথার আশপাশে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকছে। দ্বিতীয়ত, একে রাস্তা সংকীর্ণ। তার উপরে বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরে যেমন বাইপাস রয়েছে। তাতে শহরের ভিতরের গাড়ির চাপ কিছুটা কম। কিন্তু সোনামুখীর বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও এখানে বাইপাস তৈরি হয়নি। তৃতীয়ত, চৌমাথায় রাস্তার উপরে সব্জির পসরা নিয়ে ব্যবসায়ীরা রোজ বসছেন। এই তিনটি সমস্যার সমাধান না হওয়ায় যানজটের ফাঁদ পড়ে গিয়েছে সোনামুখী। বাসিন্দারা জানান, নিত্যযাত্রী থেকে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া সকলে এখানে এসে কার্যত স্মরণ নেন ভগবানের ঠাকুর, চৌমাথা পার করে দাও। না হলে অফিসের খাতায় লালকালির দাগ পড়ে যাবে। স্কুলে ঢুকতে দেবে না।

পুরসভা থেকে চৌমাথা মোড় ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে। পুরকর্তাদের নাকের ডগায় রোজই ঘটছে এই ঘটনা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরকর্তারা সকলেই দেখছেন। কিন্তু দেখছেন না। পঞ্চম শ্রেণির ছেলে যাতে নির্বিঘ্নে স্কুলে পৌঁছতে পারে তাই শহরের মনোহরতলার বাসিন্দা কালীপ্রসন্ন চট্টোপাধ্যায় রোজ ছেলেকে চৌমাথা পার করে দিয়ে যান। তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে মুখে এক রাশ ক্ষোভ নিয়ে রাস্তার দিকে আঙুল তুলে বলেন, “দেখছেন তো পাশেই পুরসভা, কারও নজরদারি রয়েছে? যানজটের এই নিত্য সমস্যা নিয়ে কেউ ভাবে না! ছেলেকে একা পাঠাতে তাই ভয় হয়।” পেশার টানে প্রতিদিনই বাসে চৌমাথা পার হতে হয় নিত্যযাত্রী কৃষ্ণা চক্রবর্তীকে। তিনি চাকরি করেন ডিভিসির সেচ বিভাগে। কৃষ্ণাদেবী বলেন, “মারাত্মক জট। এখানে বাস থামলেই ঠাকুর নাম জপতে হয়। যানজটের ঠ্যালায় মাঝে মধ্যে অফিস পৌঁছতেও দেরি হয়ে যায়।” নিত্যযাত্রী সুদীপ পাল, কার্তিক দত্তের মতো বহু মানুষের ক্ষোভ একই রকম। সকাল ১০টা নাগাদ চৌমাথা মোড়ে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার চারপাশে গাড়ির জট। তা ছাড়াতে হিমসিম খাচ্ছেন একজন ট্রাফিক পুলিশ। সোনামুখী থানার এক পুলিশ কর্মীর কথায়, “এই শহর অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠেছে। বাইপাস তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এই সমস্যা কাটবে না।”

সমস্যার কথা মেনে নিচ্ছেন সোনামুখী পুরসভার বাম বোর্ডের চেয়ারম্যান কুশল বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এই ঘটনার জন্য রাস্তার পাশে খুচরো সব্জি বিক্রেতাদের বসে পড়াকেই দায়ী করছেন তিনি। তাঁর কথা অনুযায়ী নিয়ম বিরুদ্ধ ভাবে পুরসভার নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই চলছে এই বাজার কিন্তু এসব রুখতে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে পুরসভা? তিনি জানাচ্ছেন, “পুরসভার তরফে রাস্তা দখলমুক্ত করতে পুলিশকে জানানো হয়েছিল। বেশ কয়েকবার পুরসভা ও সোনামুখী থানা বেআইনি বাজার তুলতে যৌথ অভিযানও চালিয়েছে। বহু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও বাজার ওঠানো যায়নি।” যদিও যানজট পাকিয়ে রমরমিয়ে চলতে থাকা এই বেআইনি বাজার না ওঠার পিছনে ভোট ব্যাঙ্কই কাজ করছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের একাংশের। এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, “নামেই অভিযান হয়। আদপে ভোটের জন্যই ব্যবসায়ীদের চটাতে চাইছে না কেউ।”

শহরের বাসস্ট্যান্ড গড়ার জন্য পুরসভা কী ব্যবস্থা নিচ্ছে? বাসস্ট্যান্ডের জায়গার সমস্যার কথা জানিয়ে কুশলবাবু বলেন, “নাইফেলা এলাকায় পাঁচ বিঘা জমির ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু ওই সামান্য জায়গায় বড় কিছু করা যাবে না। তবু ছোট করেও কিছু করা যায় কি না দেখছি।” বাইপাস নিয়ে এই ‘দেখছি’-র কথাই শুনিয়েছেন সোনামুখীর বিডিও বিশ্বজিত্‌ ভট্টাচার্য। যদিও একটি নতুন আশ্বাসের কথা শুনিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “শহরের পাশ দিয়ে একটি রাস্তার কথা ভাবা হয়েছে। তবে তার অনেকটা জায়গা বন দফতরের এলাকার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। ওদের সম পরিমাণ জায়গা না দিতে পারায় ওই জায়গা পেতেও দেরি হয়ে যাচ্ছে। উদ্ভূত এই সমস্যা মেটাতে কী করা যায় দেখছি।”

আরও একধাপ এগিয়ে সোনামুখীর তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহার দাবি, “বাইপাস ও বাসস্ট্যান্ড গড়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। শীঘ্রই কাজ শুরু করা হবে।” কিন্তু জমি-সমস্যা তো পুরোপুরো কাটনি। তা হলে কাজ হবে কী ভাবে? জবাব মেলেনি বিধায়কের কাছে। আবার ওই টাকা বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই বরাদ্দ হয়েছিল বলে পাল্টা দাবি করছেন সিপিএমের সোনামুখী জোনাল কমিটির সম্পাদক শেখর ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “আমরা সরকারে থাকাকালীন এই খাতে কিছু টাকা এসেছিল। কিন্তু জায়গা নির্দিষ্ট না হওয়ায় কাজ শুরু হয়নি। সেই টাকাই এখনও পড়ে আছে। ওই টাকাই দীপালিদেবী কুমিরের ছানার মতো দেখাচ্ছেন।”

তবে টাকা কে দিচ্ছে সেই বিতর্কে আগ্রহ নেই পুরবাসীর। তাঁরা ‘দেখছি’, ‘দেখব’তে বিশ্বাসী নন। তাঁদের একটাই দাবি, দ্রুত বাইপাস ও বাসস্ট্যান্ড গড়ে চৌমাথাকে যানজট মুক্ত করা হোক।

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া’।
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া বিভাগ, জেলা দফতর
আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১

sonamukhi swapan bandopadhay amar sohor traffic congesion
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy