Advertisement
০৫ মে ২০২৪

নাম নেই সুজয়, কেপি-র, জল্পনা তুঙ্গে

দলের দুই শীর্ষ নেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও কে পি সিংহদেও-এর ভবিষ্যৎ কী, আপাতত এই প্রশ্নেই তোলপাড় চলছে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের অন্দরে। কলকাতায় তৃণমূলের যে বৈঠকে রাজ্য যুব সভাপতি পদ থেকে শুভেন্দু অধিকারীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানেই দলের পুরুলিয়া জেলা কমিটি নিয়েও ঘোষণা হয়েছে। আর সেই ঘোষণাকে ঘিরেই শুরু হয়েছে দলের ভিতরে গুঞ্জন ও জল্পনা। জেলা তৃণমূলের ওই দুই শীর্ষ নেতাকে আপাতত ‘অ্যাডহক কমিটি’ থেকে ছেঁটে ফেলাই এই গুঞ্জনের মূল কারণ।

সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও (ডান দিকে) কে পি সিংহদেও।

সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও (ডান দিকে) কে পি সিংহদেও।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৪ ০১:২৮
Share: Save:

দলের দুই শীর্ষ নেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও কে পি সিংহদেও-এর ভবিষ্যৎ কী, আপাতত এই প্রশ্নেই তোলপাড় চলছে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের অন্দরে। কলকাতায় তৃণমূলের যে বৈঠকে রাজ্য যুব সভাপতি পদ থেকে শুভেন্দু অধিকারীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানেই দলের পুরুলিয়া জেলা কমিটি নিয়েও ঘোষণা হয়েছে। আর সেই ঘোষণাকে ঘিরেই শুরু হয়েছে দলের ভিতরে গুঞ্জন ও জল্পনা। জেলা তৃণমূলের ওই দুই শীর্ষ নেতাকে আপাতত ‘অ্যাডহক কমিটি’ থেকে ছেঁটে ফেলাই এই গুঞ্জনের মূল কারণ।

তৃণমূল সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে কলকাতার বৈঠকে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্য সব জেলার মতোই পুরুলিয়ার বর্তমান জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে শুধু জেলা সভাপতি হিসেবে শান্তিরাম মাহাতোর নাম ঘোষণা করেন। পাশাপাশি জেলার যুব সংগঠনের দায়িত্ব দিয়েছেন এত দিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পাশাপাশি যুব তৃণমূলের দায়িত্বভার সামলানো গৌতম রায়কে। টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি করা হয়েছে সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি নিরঞ্জন মাহাতোকে। ওই বৈঠক থেকে জেলার আর কোনও পদের জন্য কোন নাম ঘোষণা করা হয়নি। দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে এখানেই।

অন্য অনেক জেলার ক্ষেত্রে কোথাও যেখানে কার্যকরী সভাপতির নাম নতুন ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, কোথাও বা পর্যবেক্ষক হিসেবে নতুন নাম বলা হয়েছে, সেখানে পুরুলিয়ায় দলের প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই সঙ্গে থাকা কে পি সিংহদেও এবং সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে নতুন ‘অ্যাডহক’ কমিটিতে না রাখা কি ওই দু’জনের প্রতি কোনও ‘বিশেষ’ বার্তা কি না, তা নিয়েই জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে। দলের এই অংশের কর্মীরা এই বিষয়টি মানতে পারছেন না। তাঁদের বক্তব্য, অন্যেরা নিশ্চয়ই স্বাগত, কিন্তু যাঁরা দীর্ঘদিন দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, জেলায় তাঁদের এই উপেক্ষা কি প্রাপ্য ছিল?

‘অ্যাডহক’ কমিটি ঘোষণার আগে কে পি সিংহদেও ছিলেন তৃণমূলের জেলা কমিটির চেয়ারম্যান তথা রাজ্য কমিটির সহ-সভাপতি এবং সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন দলের জেলা কমিটির কাযর্করী সভাপতি। ক্ষুব্ধ কর্মীরা বলছেন, শান্তিরাম মাহাতো দলের জেলা সভাপতি হওয়ার আগে পর্যন্ত কে পি সিংহদেও-ই প্রায় এক দশক ওই দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাঁদের প্রশ্ন, জেলায় লোকসভা ভোটে ভাল ফল করার পরেও অ্যাডহক কমিটি থেকে এক ধাক্কায় তাঁদের ছেঁটে ফেলা হল কোন যুক্তিতে।

অথচ ভাল ফলে পুরস্কার, ফল মন্দ হলে তিরস্কার। লোকসভা ভোটে আসানসোলে হারের পরে মলয় ঘটকের মন্ত্রিত্ব যাওয়া থেকেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সেই বার্তা পরিষ্কার। অথচ পুরুলিয়া দলীয় প্রার্থী দেড় লক্ষেরও বেশি ব্যবধানে জেতার পরেও সুজয়বাবু এবং কে পি সিংহদেওকে অ্যাডহক কমিটিতে না রাখার কোনও যুক্তিই খুঁজে পাচ্ছেন না দলীয় কর্মীদের একটা বড় অংশ। তাঁদের প্রশ্ন, এই জয়ে তো ওই দুই নেতারও অবদান আছে। প্রকাশ্যে কেউই অবশ্য এ নিয়ে মুখ খুলছেন না। সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু বলছেন, “ভাল ফল হলে পুরস্কার আর খারাপ ফল হলে তিরস্কার নীতির প্রশ্নই যদি ধরে নেওয়া হয়, তাহলে আমার বিধানসভা এলাকা মানবাজারে আমাদের প্রার্থী শতাংশের বিচারে জেলার সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন। এই বিধানসভায় আমাদের প্রার্থীর ৪৯ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়েছেন, যা এই জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি এবং রাজ্যের নিরিখে চতুর্থ।” সুজয়বাবু অবশ্য স্বীকার করেছেন যে, কলকাতায় অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা হওয়ার পরে ওই কমিটির বিষয়ে নানা স্তরের কর্মীরা জানতে চাইছেন। তাঁরা নানা প্রশ্ন করছেন। সব প্রশ্নের উত্তর তাঁদের কাছেও নেই। তবে, দলের জেলা নেতা নবেন্দু মাহালির বক্তব্য, “মানবাজারে বেশি ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতোর নিজস্ব পরিচয় কাজ করেছে। তাঁর বাবা, প্রয়াত সীতারাম মাহাতো ছিলেন ওই এলাকারই বাসিন্দা। তবে, দলনেত্রী অ্যাডহক কমিটিতে কাযর্করী সভাপতি বা চেয়ারম্যানের নাম ঘোষণা করেননি, এটা ঠিক।” অর্থাৎ, জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর উপরই আস্থা রাখা হয়েছে। দল সূত্রের খবর, সভাপতি নতুন ব্লক ও জেলা কমিটি করে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে শীঘ্রই জমা দেবেন। তার পর রাজ্য নেতৃত্ব তাতে অনুমোদন দেবেন।”

জেলা সভাপতির অনুগামী এক নেতার কথায়, “কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দেখা হবে বিগত নিবার্চনগুলিতে কার কি ভূমিকা ছিল। তার ভিত্তিতেই কমিটি করা হবে। এক্ষেত্রে নাম বিচার্য হবে না। দলের বর্ষীয়ান নেতা কে পি সিংহদেও বা কার্যকরী সভাপতি সুজয়বাবুর নাম পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়নি। তার মানে তাঁদের কাছে বা এ রকম নেতাদের কাছে দলের তরফে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে।”

এ প্রসঙ্গে কে পি সিংহদেও বলেন, “আমি জানি না, এখন কমিটিতে কোন পদে আছি। জেলা সভাপতির সঙ্গে কোনও কথাও হয়নি। সভাপতি শীঘ্রই নতুন কমিটি রাজ্য নেতৃত্বকে জমা দেবেন অনুমোদনের জন্য। দেখি কী হয়।” সুজয়বাবুর বক্তব্য, “আমিও জানি না এখন কী পদে রয়েছি। তবে, সিপিএমের অপশাসন থেকে বাংলাকে মুক্ত করতে মমতাদির সঙ্গে থেকেছি পরিবর্তনের অনেক আগে থেকে। এটা সকলেই জানেন।”

জেলা সভাপতি শান্তিরামবাবুও মানছেন, শীর্ষ নেতৃত্বের ঘোষণা মোতাবেক এই মুহূর্তে দলের জেলা চেয়ারম্যান বা কাযর্করী সভাপতি পদে কেউ নেই। তবে সব জল্পনা উড়িয়ে তাঁর দাবি, “যা হবে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষেই হবে। এখন এটুকুই বলতে পারি।”

তৃণমূল কর্মীদের সব চোখ এখন সেই জেলা কমিটির গঠনের দিকেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE