আমানতকারীরা নিজেদের গচ্ছিত টাকা তুলতে পারছেন না। টাকার দাবিতে বিভিন্ন সময় সমবায় সমিতিগুলিতে এসে ম্যানেজার এবং কর্মীদের উপরে চাপ বাড়াচ্ছেন আমানতকারীরা। কখনও সখনও তাঁরা আমানতকারীদের হুমকির মুখেও পড়ছেন। এই অভিযোগ তুলে নিরাপত্তার দাবিতে পুলিশের দ্বারস্থ হলেন নলহাটি ১ ব্লকের ১৩টি সমবায় সমিতির ম্যানেজার এবং কর্মীরা। শনিবার তাঁরা এই মর্মে পুলিশের কাছে লিখিত আবেদন জমা করেছেন। এসডিপিও (রামপুরহাট) জোবি থমাস কে বলেন, “আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে দেখতে বলব। খোঁজ নিয়ে বিষয়টিও দেখছি।”
প্রসঙ্গত, বিপুল অনাদায়ী খেলাপি ঋণের কারণে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশে গত ১৫ মে বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। তার পর থেকেই জেলায় ব্যাঙ্কের ১৭টি শাখাই বন্ধ হয়ে যায়। নিজেদের জমানো টাকা তুলতে না পারায় জেলাজুড়ে ওই ব্যাঙ্কের প্রায় আড়াই লক্ষেরও বেশি আমানতকারীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। তাঁদের গচ্ছিত মোট ৩৫০ কোটি টাকার ভবিষ্যত কী, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সমস্যার আঁচ এসে পড়েছে ওই ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত জেলার কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতিগুলিও। প্রশাসন সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও জেলার ৩৩১টি কৃষি উন্নয়ন সমিতির মধ্যে অন্তত ৯৫টি সমবায়ে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সেই সব সমিতির অধিকাংশেরই ৭০ শতাংশের বেশি অমানত কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখায় গচ্ছিত রয়েছে। ফলে লেনদেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমানতকারীদের টাকাপয়সা ফেরানোর ক্ষেত্রে একই রকম সমস্যায় পড়েছে ওই সমবায় সমিতিগুলিও। খরিফ মরসুমে কৃষিঋণ না পেয়ে সমস্যায় পড়েন জেলার অসংখ্য প্রান্তিক চাষি।
নলহাটি ১ ব্লকের সমবায় সমিতিগুলির কর্মীরা জানান, ব্লকের ২৩টি সমবায় সমিতির প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যাঙ্কে জমা পড়ে রয়েছে। সমবায় সমিতির মাধ্যমে ব্যাঙ্কে আমানতকারীরা তাঁদের জমানো টাকা তুলতে চাইছেন। কিন্তু, সঙ্কটজনক এই পরিস্থিতিতে চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারায় আমানতকারীরা নানা ভাবে কর্মীদের হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। এ নিয়ে প্রায় দিনই সমবায় সমিতিগুলিতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। যার জেরে সমবায় সমিতির কর্মী আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে নলহাটি ১ ব্লকের সমবায় পরিদর্শক অনুপ বসাক বলেন, “ব্লকের ভগবতীপুর সমবায় সমিতি ছাড়া বেশ কিছু সমবায় সমিতি থেকে কর্মীরা আমানতকারীদের হুমকির মুখে পড়েছেন। এমনকী, আমানতকারীরা প্রাপ্য টাকা ফেরতের দাবিতে বেশ কিছু সমবায় সমিতিগুলিতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন। কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি পুলিশ ও কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের পরিচালন কমিটির সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেন, “ব্যাঙ্ক অনেকদিন হল বন্ধ আছে। আমরা ব্যাঙ্ক খোলার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। গ্রাহকদের সহযোগিতা এতদিন পেয়ে এসেছি। তবুও নিরাপত্তাহীনতার যে অভিযোগ উঠছে, বিষয়টি পুলিশ-প্রশাসনকে দেখতে বলব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy